প্রশ্নপত্র ফাঁসে তিন গ্রুপ; ৭ সদস্য গ্রেফতার – সিআইডি

প্রশ্নপত্র ফাঁসে তিন গ্রুপ;৭ সদস্য গ্রেফতার

বিশেষ প্রতিনিধিঃ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করতো তিনটি গ্রুপ মিলে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হাতে সেই চক্রের ৭ সদস্য গ্রেফতার হয়েছে।

তাদের মধ্যে দুজন রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা। সিআইডি জানিয়েছে, তিনটি গ্রুপ মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করতো। এদের মধ্যে একটি গ্রুপ ছাত্র সংগ্রহ, একটি প্রশ্নপত্রের সমাধান তৈরি এবং আরেকটি গ্রুপ পরীক্ষার কেন্দ্রে দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত ছিল।

বৃহস্পতিবার সিআইডি সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন সিআইডির সাইবার ক্রাইমের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান।

সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে তেজগাঁওয়ের সরকারি বিজ্ঞান কলেজের কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার্থী নাফিউল ইসলাম তাহসিনকে মোবাইলসহ আটক করা হয়। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বাদি হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন।

তিনি বলেন, আটক তাহসিনের কাছে পাওয়া ডিভাইসের তথ্য পর্যালোচনা করে গত ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর মালিবাগ এলাকা থেকে হাসান মাহমুদ এবং রাশেদুজ্জামান সজীবকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে সজীব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সজীব সিআইডিকে জানিয়েছেন, তিনি সাইফুরসের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। এই চক্রে তার কাজ ছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ইংরেজি অংশের সমাধান করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রাকিবুল হাসান শান্তের মাধ্যমে সজীব এই চক্রে যুক্ত হন। সজীবের দেয়া তথ্যমতে, ২৭ ডিসেম্বর মতিঝিলে দিলকুশা বক চত্বর থেকে রাকিবুল হাসান শান্তকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স পাস করেন। তিনি চলতি বছরে জনতা ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনিও রাশেদুজ্জামানকে দিয়ে প্রশ্নপত্র সমাধানের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, পরে রাকিবুল হাসানের জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে মানিক কুমার প্রমানিকের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর ৩০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে তিনটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে রাজশাহীর মোহনপুর থানা এলাকা থেকে মানিক কুমার প্রামানিক, তার সহযোগী সাদিকুল ইসলাম এবং শ্রী রিপন কুমারকে গ্রেফতার করা হয়। মানিক কুমার প্রামানিক রাজশাহীতে অগ্রণী ব্যাংকে সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

সিআইডি জানায়, গ্রেফতারকৃত মানিক কুমার প্রামানিককে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার অনেক আগ থেকেই ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতেন এবং পরীক্ষা চলাকালে তারা ডিজিটাল ডিভাইসে সহায়তা করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মানিক কুমার প্রামানিককে জিজ্ঞাসাবাদে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। যারা জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরিতে যোগদান করেছেন তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম বলেন, এই চক্রটি হোয়াটঅ্যাপস গ্রুপ খুলত। তাতে যারা অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কিংবা চাকরি নিতে চান তারা যুক্ত হতেন। পরে হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপে পরীক্ষার ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিতেন। পরে তাদের কেউ সমাধান করে সেখানে ছেড়ে দিতেন।

মানিক কুমার প্রামানিক এই কাজ করতে গিয়ে প্রায় তিন কোটি ৩৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছেন বলে জানান সিআইডি কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top