বাসসে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে দুদক

Picsart_25-03-27_21-16-13-500.jpg

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":[],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"border":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

বাসসের এমডি মাহবুব মোর্শেদ। ফাইল ছবি।

বিশেষ প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) বিগত সময়ে বিশেষ করে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত প্রায় ২০০ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে।

বিগত ২০ এপ্রিল অনুসন্ধান টিম লিডার এবং দুদক উপপরিচালক রেজাউল করিম এক পত্রের মাধ্যমে বাসসকে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র ও তথ্য জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহের তাগিদ দিয়েছেন। অনুসন্ধান টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন দুদক সহকারী পরিচালক নুরুন্নাহার নিশু এবং উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ জালাল। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘বিষয়টি অতীব জরুরি। অনুসন্ধানের জন্য সময়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’ ইতোমধ্যে অনুসন্ধান টিমের দুই কর্মকর্তা বাসস অফিস পরিদর্শন করেছেন।

বাসস সূত্র জানায়, অনুসন্ধানের জন্য যাচিত রেকর্ডপত্র ও তথ্যের ক্ষেত্রে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়েছে।

বিশেষ করে ১ নম্বর দফায় অনিয়মের উপকারভোগী শুধুমাত্র সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত নথির ছায়ালিপি তলব করা হয়েছে। ছাড় দেয়া হয়েছে সাধারণ কর্মচারী-কর্মকর্তাদের যারা বেআইনিভাবে সর্বোচ্চ বিশেষ বেতন গ্রেড, ১ নম্বর বেতন গ্রেড ও অবৈধ ভাতা হাতিয়ে নিয়েছে। স্বল্প সময়ে নিজেদের বেতন-ভাতা দুই লাখ টাকায় উন্নীত করেছে। এতে সর্বোচ্চ অবৈধ সুবিধাভোগী প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো: জসিম উদ্দিন ও প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী খান অনুসন্ধানের আওতার বাইরে চলে গেছেন। একই সময়ে বর্তমান বাসস ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুব মোর্শেদ এই দুই কর্মকর্তাকেই দায়িত্ব দিয়েছেন রেকর্ডপত্র ও তথ্য সরবরাহের। এতে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

তা ছাড়া শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০১৪ আমলে অভিন্ন ধারার অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়গুলোও আমলে নেয়া হয়নি। উল্লিখিত দু’টি পর্বে বাসসে সরকারি তহবিল তছরুপ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ওই সময়ে সংস্থাটির অবৈধ দায়দেনা মেটাতে শেখ হাসিনা দুই দফায় বাসসকে সাড়ে আট কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছেন। অনুসন্ধান টিম বিশেষ বরাদ্দ সংক্রান্ত নথি তলব করেনি। এ দুই প্রকল্প ব্যয়ে ক্রমিক নম্বরহীন ভুয়া ভাউচারে বিপুল টাকা আত্মসাতের বিষয়টি বাদ পড়েছে।

বাসসে দুদকের অনুসন্ধানকার্যক্রম এমন সময়ে শুরু হয়েছে যখন বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে এমডি মাহবুব মোর্শেদ ফ্যাসিবাদী আমলের অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে মোটেও রাজি নন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গণমাধ্যমে ফ্যাসিবাদী আমলের অনিয়ম-দুর্নীতির বিশদ বিবরণ ছাপা হলেও তিনি এই ব্যাপারে একদম নিস্পৃহ। এমডি জ্ঞাতসারে বিগত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বাসস পরিচালনা বোর্ডের প্রথম সভার আলোচ্য সূচিতে ফ্যাসিবাদী আমলের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেননি। এই নিয়ে কোনো কোনো বোর্ড সদস্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যানের বরাবরে এতদসংক্রান্ত একটি আবেদন দাখিল করা হলেও এমডি বিষয়টি সভায় নোটিশে আনেননি। বোর্ড সদস্যদের ক্ষোভের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো তিনটি বিতর্কিত ও রীতিবিরুদ্ধ সাব-কমিটি গঠন। প্রতিটি সাব-কমিটির সদস্যসচিবের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন এমডি মাহবুব মোর্শেদ। অথচ তিনি মূল কমিটির সদস্যসচিব।

সাব-কমিটিতে তার কোনো কাজ নেই। বাসস আইনানুযায়ী এমডি হলো পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা। হাসিনা আমলে ক্ষতিগ্রস্ত একজন সিনিয়র সাংবাদিক পরিচালনা বোর্ডের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন যে, এমডি মাহবুব মোর্শেদের অসত্য ও মনগড়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি সাব-কমিটি গঠিত হয়েছে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মহলের দাবি উপেক্ষা করে বাসসে ফ্যাসিবাদী আমলের অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটকে সুরক্ষা প্রদানের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে মাহবুব মোর্শেদের বিরুদ্ধে।

সংস্থাটির সাবেক এক সিনিয়র সাংবাদিক পর পর দু’টি লিখিত অভিযোগে স্পষ্ট দাবি করেছেন যে, বর্তমান এমডি নিজেও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। প্রথম অভিযোগটি দায়ের হয়েছে বিগত ২০ এপ্রিল ২০২৫ তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের দফতরে। এতে বলা হয়েছে বর্তমানে বাসসে ফ্যাসিবাদী আমলের লুটপাট নবায়ন চলছে পুরোদমে। পরের অভিযোগটি দায়ের হয়েছে বিগত ৭ মে ২০২৫ তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানা বরাবরে। এতে হাসিনা আমলের অপরাধমূলক অবহেলার নীতি পরিহার করে বাসসে সরকারি অর্থ তছরুপ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করা হয়েছে।

অভিযোগে আরো উল্লেখ আছে যে, ফ্যাসিবাদী লুটপাটের বিষয়ে সবার মুখ বন্ধ রাখতে বর্তমান বাসস এমডি অফিসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। হিসাররক্ষণ কর্মকর্তা রমজানকে শাস্তিমূলক বদলি করেছেন অন্যত্র। ‘দুর্নীতির তথ্য পাচার রোধে’ হিসাব বিভাগে দু’টি অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন। ইতঃপূর্বে স্বৈরাচার আমলের ৩৮ কোটি টাকার অডিও ভিজুয়্যাল প্রকল্পে দুর্নীতির প্রতিবাদ করে এমডির রোষানলের শিকার হয়েছেন প্রধান বার্তা সম্পাদক রহিম উদ্দিন। রহিমকে পদচ্যুত করে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে যা সংবাদপত্র জগতের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

এমডি মাহবুব মোর্শেদের তত্ত্বাবধানে অডিও ভিজুয়্যাল প্রকল্পে আগের লুটপাটের ধারা তীব্রতর হয়েছে। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে ২০ কোটি টাকার ক্রয় চুক্তি সম্পাদন হয়েছে গোপনে। এত বড় ঘটনায় বাসস থেকে কোনো সংবাদ পরিবেশন করা হয়নি।

ব্যক্তিগত পর্যায়ের অনিয়মের বিষয়ে বলা হয়েছে যে, ‘বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে মাহবুব মোর্শেদ সাবেক দুর্নীতিবাজ স্বৈরাচারী এমডি আবুল কালাম আজাদের মর্জিমাফিক স্থিরকৃত অস্বাভাবিক সব বেতনভাতা ও বিল হাতিয়ে নিয়েছেন। তার মূল বেতন ১০২,৩৭৫ টাকা। উচ্চতর পদে আসীন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের চেয়েও বেশি। প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা অবৈধ সুবিধা নিচ্ছেন দরিদ্র জনগণের করের টাকায়। মূল বেতনের সাথে ১৫টি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট নিয়েছেন। এ জন্য পরিচালনা বোর্ড কিংবা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও নেয়া হয়নি। সার্বক্ষণিক অফিসের গাড়ি ব্যবহার করেও প্রতি মাসে নিচ্ছেন ৩০ হাজার টাকা গাড়ি ভাতা।’
তা ছাড়া, মাহবুব মোর্শেদ হাসিনা আমলের সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির বৈধতা দিতে সদা তৎপর বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরদিন ৬ আগস্ট ২০২৪ সাবেক এমডি আবুল কালাম আজাদ ৪০টি বেআইনি অফিস আদেশ জারি করেন। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এক কোটি টাকা। মাহবুব মোর্শেদ বেআইনি আদেশগুলো বাস্তবায়ন করেছেন। এগুলো অনুমোদনের জন্য পরিচালনা বোর্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। বাসস আইনে পরিচালনা বোর্ডই বৈধ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। বিগত আট মাসে মাহবুব সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে। বোর্ডের অজান্তে ৩২ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রচলিত বিধি লঙ্ঘন করে। এদিকে সরকার পতনের পর বাসসে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সুরক্ষার নিন্দা জানায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

সাংবাদিক ইউনিয়ন হাসিনা আমলের দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটের তদন্ত ও বিচার দাবি করে। এমডি মাহবুব তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ডিইউজে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিরসনের আহ্বান জানায়। ইউনিয়নের আহবানে সাড়া না দিয়ে মাহবুব মোর্শেদ ক্ষমতার দাপট দেখান। তিনি বাসসে ডিইউজের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। সাংবাদিক ইউনিয়নকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিত্রিত করে পুলিশের হস্তক্ষেপ চান। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ইউনিয়নকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের লেজুর প্রমাণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। এতে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটে। তারই প্রেক্ষিতে ডিইউজে বিগত ২৪ মার্চ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে মাহবুব মার্শেদকে বাসস থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

এ লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপিও পেশ করা হয়েছে।

এ দিকে বাসসের দুর্নীতি তদন্তে অনুসন্ধান টিম গঠন সম্পর্কে এমডি মাহবুব মোর্শেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। এটা বাসসের প্রশাসন বিভাগ বলতে পারবে। ফ্যাসিস্ট আমলের দুর্নীতির নথিপত্র চাপিয়ে রাখাসহ অন্যান্য বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

আরও সংবাদ পড়ুন।

ডিইউজে’র বিক্ষোভ সমাবেশ ফ্যাসিস্টের দোসর বাসস এমডি’র অপসারণ দাবি

আরও সংবাদ পড়ুন।

বাসস এমডি মাহবুব মোর্শেদের অপসারণ দাবিতে ডিইউজে’র বিক্ষোভ সমাবেশ

আরও সংবাদ পড়ুন।

বাসস’র এমডির অপসারণের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টাকে ডিইউজে’র স্মারকলিপি

আরও সংবাদ পড়ুন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ স্থগিত বাসস এমডি মাহবুব মোর্শেদের

আরও সংবাদ পড়ুন।

আরও সংবাদ পড়ুন।

দুদক মোয়াজ্জেম হোসেন, মুহাম্মদ তুহিন ফারাবী ও গাজী সালাউদ্দিন তানভীর’কে ডেকেছে

আরও সংবাদ পড়ুন।

নারায়ণগঞ্জ পিটিআই’র কর্মকর্তা কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাত – দুদকের অভিযান

আরও সংবাদ পড়ুন।

দুদকের নতুন চেয়ারম্যান মোমেন, আকবার আজিজী ও ফরিদ হলেন কমিশনার

আরও সংবাদ পড়ুন।

মিরপুর বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো সার্কেল-১ এ দুদকের অভিযান

আরও সংবাদ পড়ুন।

বিআরটিএ এর পূর্বাচল (ঢাকা মেট্রো-৪)অফিসে – দুদকের অভিযান

আরও সংবাদ পড়ুন।

বিআরটিএ অপরাধ ও দূর্নীতি’র আখড়া; অপরাধ করেও পার পেয়ে যায় কর্তারা

আরও সংবাদ পড়ুন।

বিআরটিএ – ইকুরিয়া সার্কেল;ঢাকা বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবী – দুদকের অভিযান

আরও সংবাদ পড়ুন।

ছদ্মবেশে বিআরটিএ দুদকের অভিযান – ঘুষ গ্রহণের সময় হাতেনাতে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার

আরও সংবাদ পড়ুন।

ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রাইভেট কার বা জীপগাড়ির ব্র্যান্ডের নামসহ তথ্য চেয়ে বিআরটিএকে দুদকের চিঠি

আরও সংবাদ পড়ুন।

বেপরোয়া দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে জেলা প্রশাসকরা, তদন্তে দুদক ও এনএসআই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top