ভাবনা – শাহানা সিরাজী
নারীকে যদি স্যার বলে
পুরুষকে যদি ম্যাডাম বলে-
নারী-পুরুষ উভয়কেই যদি স্যার বলে
তাহলে কী বৈষম্য নিরসন হয়?
নারী মানেই কোমল- স্নিগ্ধ, ধৈর্য , শান্ত জোছনা, বসুমতী
এসব খেতাব কোন পুরুষ দেয়নি। এসব নারী নিজেই দিয়েছে।
পুরুষ মানে আগুন, সূর্য,সমুদ্র, ঝড় এসব খেতাব কোন পুরুষ দেয়নি, দিয়েছে নারী।
নারীর দেয়া বিষেশণ পুরুষ পুরোমাত্রায় অবচেতন মনে গ্রহণ করে তারা হয়ে উঠেছে অসুর। নারীকে করেছে পদানত।
তাহলে সম-অধিকারের প্রশ্ন কেন?
যতোই অসুর হোক পুরুষ
যতই চাপিত হোক নারী
আদতে নারী পুরুষ একে অপরের সাহায্য ছাড়া চলা সম্ভব নয়। কোন না কোন পুরুষ লাগবে
কোন না কোন নারী লাগবেই….
এই যে চলার পথ এ পথকে স্মুথ করার জন্যই নারী-পুরুষ উভয়কেই হতে হবে শিক্ষিত,কর্মজীবী- এখানেই সম অধিকার।
পুরুষের চোখ যদি মঙল গ্রহ দেখে
নারীর চোখ যদি সেখানে না যায়
নারী যদি দেখে তা বাড়ির পাশের কুয়ো পুরুষ মুচকি একটু হেসে, জড়িয়ে ধরে দারুণ একটা চুমু দিয়ে, কিছুক্ষণ মাংসপিণ্ডের স্বাদ নিয়ে হয়তো বলে উঠবেন আমার লক্ষ্মী সোনা বউ,যাও চা নিয়ে আসো। এতে তার চায়ের পিপাসা মিটতে পারে কিন্তু তার আবিষ্কারের আনন্দ কেবল তাকেই একা একা হাঁসফাঁস করে নিতে হবে, সারা রায়, সারাদিন অবরুদ্ধ থেকে খুঁজতে হবে এমন কাউকে যার সাথে তার মঙলের রূপ শেয়ার করতে পারে।
তার ঘরের নারীকে নিতান্তই সরলা, অবুঝ বোকা বিশেষণ দিয়ে এক পাশে রেখে সে এগিয়ে চলল অনন্ত পথে…
এই হঠকারিতা, এই যে নিদারুণ উপহাস, এই যে তাচ্ছিল্যের বিশেষণ, এই যে করুণার ভালোবাসা নারীকে আসলে এখান থেকেই বেরিয়ে আসতে হবে। মগজকে ক্রমাগত ঘর্ষণে ঘর্ষণে উন্নীত করে বাড়ির পাশের ডোবা নয় দেখতে হবে মঙলই। মঙল নিয়ে পুরুষের সাথে তুমুল বিশ্লেষণ করতে হবে, নইলে পুরুষ বলবে, ফোনটা রাখো,কন্টেন্টটি আপলোড করি” নারী বলবে, “কন্টেইনার কিনতে গেলা কেন,ঐটা কিনতে তো কই নাইগা”। চিন্তা এবং ভাষাগত এই তারতম্য যেখানে প্রবল সেখানে প্রেম-ভালোবাসা বিরল। সেখানে কেবল যাপনের ধারাবাহিকতাই থাকে আর কিছু নয়।
বৈষম্য লৌকিকতা নয় বরং মজ্জাগত! এখন নারীরা চাকুরি করছে এগিয়ে আসছে কিন্তু নারীকে সেই সরলা,অবলার ভেতর সীমাবদ্ধ রেখেই চলছে। একজ পুরুষ চাকুরিজীবী যে ভাবে মত প্রকাশ করা, অফিস মেন্টেইন করা, গাড়ির সুবিধা ভোগ করতে পারে একজন নারী তা পারে না।
নারীকে এক পা বাড়াতে সাত পাঁচ ভাবতে হয়
নারীর সাথে পেশী শক্তির ক্ষমতা দেখানো হয়।
সংসারেও নারীকেই সব সামলে চলতে হয়
পুরুষ কেবল উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে। এতে করে পরিবারের সদস্যদের মনোজগতে এটাই পোক্ত হয় পুরুষ মানেই হল,হম্বিতম্বি, গলা উঁচু,নারী মানেই জো হুকুম,জাঁহাপনা!
এই মনোবৈকল্য থেকে বের হতে না পারলে ‘স্যার’ সম্বোধন করেও কোন লাভ নেই।ববং তা হাস্যকর মনে হয়!
নারীর নিজস্ব আলো আছে সে আলোয় যদি পথ চলো
কখনো আঁধারে পথ হারাবে না। নারীর নিজস্ব আলোকে যদি পাথর চাপা দাও তাহলে প্রকারান্তে তুমি বা তোমরাই পথ হারাবে!
জয়তু নারীর নিজস্ব আলো।
শাহানা সিরাজী
কবি, প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।
আরও লেখা পড়ুন।
আরও লেখা পড়ুন।
আরও লেখা পড়ুন।
আরও লেখা পড়ুন।