ও আমার দেশ: তারা কোথায়?
জন্মভূমিকে কে না ভালোবাসে
কে চায় জন্মভূমির মাটি, মায়া,মমতা ফেলে প্রবাসে যেতে?
কে চায়?
যদি এ দেশের সিস্টেমের ভেতর সততা থাকতো
যদি আইনের প্রয়োগ থাকতো
যদি অবৈধ উপায়ে ইনকাম করে বিত্তশালী হওয়ার প্রতিযোগিতা না থাকতো
যদি শঠ এবং ধূর্ত না হতো
যদি গুম,খুন,হত্যা না থাকতো যদি দায়িত্বহীনতার জন্য জবাবদিহিতা থাকতো
যদি সৎ ভাবে দুমুঠো অন্নের সংস্থান করা যেতো
তাহলে এ দেশের ব্রিলিয়ান্ট ছেলে-মেয়ে পাড়ি জমাতো অন্যের দেশে!
কেউ কেউ বলবেন, আমরা তো আছি তারা কেন থাকবে না! সবাই তো মিথ্যা কথা বলতে পারে না
এ দেশের যারা মাঝি, যারা কর্ণধার, যারা চেইন অব কমান্ডের ভেতর আছে তারা সবাই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে,তারা মিথ্যা বলে না,জোচ্চুরী করে না, অসৎ উপায়ে উপার্জন করে না?
ঘুষের জ্বালায় এদেশে ইলেক্ট্রিক তার পড়ে থাকে রাস্তায়, ড্রেনের অভাবে রাস্তায় জলাবদ্ধতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের সবাই মৃত্যু বরণ করে যার দায়িত্ব কেউ নেয় না। ক্ষতিপূরণ দেয় না। কেউ মসনদ ছাড়ে না!
ঘুষের কারণেই অপরিচ্ছন্ন দেশ,রাস্তার ছালবাকল তোলা, ঘুষের কারণেই ব্লিডিং ধবসে,পাহাড় ধবসে,নদী শুকায়, রিজার্ভ লুট হয়, ব্যাংক ডাকাতি হয়, ব্যবসায়ে অসততা প্রবেশ করে!
এ দেশের কিছু সংস্থার লোক, সংস্থার দোহাই দিয়ে অন্যের বাড়ি ঘর দখল করে নির্বিকার থাকে,যেন অন্যায় করার জন্যই তার চাকুরি।
অন্যায়কারী গাড়ি-ঘোড়া হাঁকিয়ে চলে, তারাই সমাজের গণ্যমান্য।
ও আমার দেশ, তোমার মাটির রূপও আর আগের মতো নেই। নিরক্ষর যখন ছিলো ৯০% তখন বটতলে মেলা হতো,যাত্রা হতো,সার্কাস হতো, ভাত না থাকলেও আনন্দ ছিল। মান্যগণ্য করার মানসিকতা ছিলো, মানুষের ভেতর সরলতা ছিলো। এখন শঠের উপর শঠ,মানুষের মন ইট-পাথরের মতো, অন্যায় করতে বুক কাঁপে না,দপ্তর থেকে কোন কিছু পাওনা হলে ঘুষ দিতে হয়,এমনকী আমার সঞ্চিত অর্থ,সঞ্চিত সময়,সঞ্চিত ভাবনার জন্যও আমাকেই ঘুষ দিতে হয়।
এমন দেশে কী করে আমার,আমাদের সন্তানদের স্বাগত জানাবো? তাই বুকে পাথর বেঁধে উচ্চ শিক্ষার নাম করে পাঠিয়ে দিই দূর প্রবাসে। আর যাই হোক,মিথ্যা বলা লাগবে না,ঘুষ খাওয়া, দেওয়া লাগবে না!
এ বাঙালি এমন ভাবে পচলো কখন,কী ভাবে?
এ বাঙালি মিথ্যার সাথে বাস করে কী ভাবে?
কে এদের এতো অধঃপতন থেকে উদ্ধার করবে?
প্রতি বছর পত্রিকার যারা শিরোনাম হয়,
ভ্যানচালকের ছেলে/ মেয়ে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,প্রশাসক
চা বিক্রেতার ছেলে / মেয়ে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,প্রশাসক
দিন মজুরের ছেলে /মেয়ে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,প্রশাসক
মা কাঁথা সেলাই করে,বাড়ি বাড়ি কাজ করে ছেলে/ মেয়ে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,প্রশাসক সে সবমেহনতী মানুষের সন্তানেরা দেশ গড়ছেন কী ভাবে? সেবা দিচ্ছেন কী ভাবে?
পরবর্তীতে তাঁরা অনেকেই হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যায়,কী ভাবে পায়?
একটা জরীপ প্রয়োজন দেশের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসক,পুলিশ যারা আছে তাদের রুট কী, কার কার পরিবার লোভহীন, কে কোন ধরণের পরিবার থেকে এসেছে।অন্তত প্রশাসক যারা তারাও যদি অর্থগৃধ্নু না হতো আজকের ছাল তোলা রাস্তা, ছালতোলা জাতি দেখা লাগতো না!
ভিক্ষুকের চেয়েও মারাত্মক আত্মমর্যাদাহীন, পুলিশ,ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, এবং বনেদী সার্ভিসের লোকেরা,হাত পেতে ঘুষ নেয়, লজ্জাহীন ভাবে দুর্নীতি করে, বনেদীরা যদি আত্মসম্মান নিয়ে সার্ভিস দিতো তাহলে ৮৭৫/ ডি এ লাউন্সের জন্য ২০ টাকা ঘুষ দেয়া লাগতো না। ঘুষখোর কর্মচারী হাসে,হাত পাতে,তারপর টাকা নেয়। ইলিশ মাছ কিনে।
এতে লজ্জা বলে কিছু তাদের থাকে না।
যদি তারা লজ্জায় লজ্জিত হতো তাহলে
সন্তানদের দূর দেশে পাঠিয়ে রাতদিন কান্না করতাম না। ভাবি, গরীবের পুত/ ঝি প্রশাসনে এসেছে নিশ্চয়ই পট পাল্টাবে।কিন্তু দেখি তার উলটো। সবাই টাকা কামানোর মেশিন জয়ে যায়!
সব জায়গায় টাকা না দিলে ফাইল চলে না।চাকুরিজীবী চাকুরিজীবীর কাছ থেকে ঘুষ খায়! ওয়াক থুঃ
এমন অসৎ, অনৈতিক অস্বচ্ছ জাতি বিশ্বের আর কোথাও আছে বলে জানা নেই। প্রতিবছর দুর্নীতিতে আমরা ফার্স্ট হই।
সমাজটা এমন হয়েছে যে টাকা যারা খরচ করতে পারে তারাই নন্দিত। কিন্তু কী ভাবে টাকা এলো সে প্রশ্ন নেই। এ গোল্লায় যাওয়া দেশে আমার সন্তানেরা নিরাপত্তাহীন,আমার পৈতৃক ভূমি অন্যের দখলে। যে জাতি বায়ান্ন,একাত্তর এনেছিলো তারা নেই। এখন যারা আছে তাদের নিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনও সম্ভব নয়!
প্রিয় সন্তানেরা দূর দেশে সবাই ভালো থাকো।
শাহানা সিরাজী
কবি,প্রাবব্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।
আরও পড়ুন।
আরও পড়ুন।
আরও পড়ুন।