বিদায় চৈত্র; শুভ হোক বৈশাখী – শাহানা সিরাজী
এবার এসো হে বৈশাখ গানটি বাধ্যতামূলক গাইতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এতোদিন তো মাস্টারিইই করেছি।এবার নিজেদের পারফর্ম করার পালা। তাই গতকাল রাত থেকেই শুরু করেছি গানটির নাড়িভূড়ি ছেঁড়া। এ গান নিয়ে কেন কারো কারো মাথা ব্যথার করর!
অবাক হয়ে দেখলাম, ভাষার রহস্য ভেদ করে এ গানটি মানবহৃদয়ের বিশাল আকুতিতে ভরে আছে।
লাইন দুটো দেখুন
মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা
অগ্নিস্নানে শূচি হোক ধরা
এ দুটো লাইন কী বলে গেলো!
মুসলানেরা নিয়ত মুনাজাত করে,
আমাকে জরা হতে, দু:খ যন্ত্রণা হতে, আলমে বরজকের আযাব থেকে, দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করো, আমাকে পরিশুদ্ধ করো,।
পার্থক্য ভাষায় – কোনটা বাংলা কোনটা আরবী!
আজ চৈত্র সংক্রান্তি, ছোটবেলায় আম্মাকে।দেখেছি – সব ধুয়ে ঘরবাড়ি লেপে সব পরিষ্কার করতেন। পহেলা। বৈশাখে ভালো-মন্দ রান্না করতেন, আব্বা যেতেন মফিজকাকার দোকানে হালখাতা করার জন্য। নলদিয়া মেলা বসবে। আম্মার পছন্দ ছিলো বিশাল আকারের লালমূলো। সেই মূলো এখন বাজারে দেখি না।
মেলা শেষ করে যারা ঘরে ফিরতো তাদের আওয়াজ অনেক রাত অবধি শোনা যেতো। কাঠের,মাটির বাঁশের বিভিন্ন তৈজস বিক্রি হতো। যাত্রা-পালা হতো।সার্কাস হতো। এখনো সেখানে মেলা মিলে কিনা জানি না।
শিমুলের ফুল থেকে ততোদিনে শিমুল বেরিয়ে আসতো। বৈশাখের প্রথম দিন থেকে শিমুল ফেটে তুলা উড়তো।
এসব তো দেখেই বড় হয়েছি। সামর্থানুযায়ী কারো কারো বাড়িতে সে দিন বড়ো আয়োজনও হতো। যুবক-যুবতীরা ঢাক-ঢোল নিয়ে দলবেঁধে বাড়ির বাইরে আসতো, গাইতো।
কালে কালে নিজেদের ঐশ্বর্যকে কবর দেয়ার কতো কী আওয়াজ চারদিকে দেখা যায়!
আরবের উলুধ্বনি আমাদের দেশে এসেছে আরবজাতির মাধ্যমেই।
আমরা কী পেরেছি আমাদের সংস্কৃতি তাদের ভেতর প্রোথিত করতে? পারিনি। কারণ তাদের মিশন এবং ভিসন ছিলো। আমাদের কিছুই নেই। আছে কেবল কামলা খেটে দুটো পয়সা উপার্জন করা!বেঁচে থাকা।
আমরা বাঙালি, ওরা ইংরেজ,তারা মিশরীয়….
এ সব কী ভাবে বোঝা যাবে? সংস্কৃতি দেখেই বলতে পারি কে কোন জাতি?
আরবের বিভিন্ন গোত্রের মাঝে কুরাইশেরা ছিলো উন্নত। কী ভাবে মানুষ চিনতো, কারা কুরাইশ? তাদের পোশাক, আদব কায়দা, শিষ্টাচার, তাদের জীবন যাপন প্রণালীর কারণের তাদেরকে সেরা বলা হতো।
ধর্মীয় চিন্তা আর জাতিগত সংস্কৃতি এক নয়।
ঈদ মুসলমানদের, পূজা হিন্দুদের,ইস্টার সান ডে, বড়দিন খ্রিস্টান্দের, মাঘই পূর্ণিমা বৌদ্ধদের।
কিন্তু বৈশাক সকলের। সকল বাঙালির। এপার ওপার মিলিয়ে যতো বাঙালি আছে সবার। কারণ অর্থ বছরের যাবতীয় হিসাব নিকাস এ বৈশাখ দিয়েই হয়। যা শুরু করেছেন সম্রাট আকবর। আকবর অবশ্যই মুসলমান ছিলেন।
এবার রোজায় এদিনটি পড়ায়,রৌদ্রের যে দাবদাহ তাতে কষ্ট হবে। এটা সঠিক। আপনি রোজা রেখেছেন সে ভাবেই নিজেকে সামলে চলুন, আনন্দ উল্লাস সাধারণত শিশু যুবক যুবতীরা করে। ওরা প্রাণময়, ওরা অনেক কিছু পারে যা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আপনার অসুবিধা আপনি বের হবেন না
কিন্তু নানান মন্দ কথা কেন ছড়ান?
ইসলামের রাসুল বলেছেন, আমার উম্মতেরা ৭৩ ফেরখায় বিভক্ত হবে। (অগ্নিস্নানে শূচি হবে কেবল একদল,) বেহেশতে যাবে কেবল একদল। সে দল কোনটি তা আল্লাহর ইপর ছেড়ে দিন। আপনিও হতে পারেন
হতে পারি আমিও।
বৈশাখী আয়োজন নিয়ে ফতোয়া না দিয়ে বরং নিজের আত্মার পরিশুদ্ধির কথা ভাবুন। লোভ হিংসা অহংকার,ঘৃণা নেতিবাচক বিশেষণ বাদ দিয়ে নবীর উম্মাত নবীর মতোই বিধর্মীর সেবায়, রোগী- দুস্থের সেবায়, কাঙালের চুলোর সেবা করুন। কে গান গাইল না গাইল এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে একবার ভাবুন গানে গানে কবি শিল্পী কী বলে গেলো! আল্লাহ সব ভাষাই বোঝে। কারণ সবই তো তারই সৃষ্টি।
বিদায় চৈত্র
শুভাগমন হোক বৈশাখের।
আমাদের অর্থনীতি চাঙা হোক
অভাবি মানুষ না থাকুক।
শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর সাধারণ
পিটিআই মুন্সীগঞ্জ
কবি প্রাবন্ধিক ও কথাসাহিত্যিক।
আরও পড়ুন।
আরও পড়ুন।
আরও পড়ুন।