সাগর চৌধুরী
সরকারি বন্ধের দিন। ভাবলাম বাসায় বসে বসে আর কি করবো তার চেয়ে কোথাও একটু বেড়িয়ে আসি। নতুন পোষ্টিং বলে এখান কার অনেক কিছুই চিনে উঠতে পারিনি। এর
আগে ঢাকার সাভারে টেনিং করে বিভিন্ন জেলা সদরে কাজ করেছি। পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পেয়ে এবারই প্রথম এখানে, বিচারক জয়েন করি।
বন্ধের দিন বলে লোকজনের আনাগোনা কম, তাছাড়াও এই এরিয়াটা একটু চুপচাপ হওয়াতে হাটার জন্য আমার বেশ পছন্দ। হাটবো বলে বেশ বের হলাম। একবার ভাবলাম
নদীর পাড়ে যাবো, এই অবসরে কার না ভালো লাগে নদীর এই অপরূপ শোভা।
হাঁটছি এমন সময় আমার পিছন থেকে ডেকে বললো করিম ভাই, এই করিম ভাই? একটি মেয়ের কণ্ঠ। মাথার মধ্যে কেমন যেন একটা চিন্তা কাজ করছিল প্রথমে খেয়াল করিনি
পরে পাশ ফিরে তাকালাম। একটু অবাক হলাম কে রে বাবা; এই নাম ধরে ডাকলো আমাকে। আমার নাম আসলে মুশফিকুর করিম। আমাকে আমার কলিকরা মুশফিক বলেই
জানে, কিন্তু যখন গ্রামের স্কুলে পড়তাম তখনকার বন্ধুরা করিম নামে ডাকতো; কিন্তু এই অচেনা শহরে এই নামে কেউ আমাকে ডাকবে আমি ভাবতেও পারিনি।
আমার সারা শরীরে ঘাম ঝড়ছে হাঁটার কারণে, এরই মধ্যে মেয়েটি আমার কাছাকাছি চলে এসেছে।
আমাকে দেখে সে স্বপ্রতিভ ভাবে বললো, করিম ভাই আপনি কেমন আছেন? আমিও বেশ হাসি মুখ করে বললাম ভালো আছি, তুমি কেমন আছো? আমাদের দুজনের কথার ফাঁকে
এক লোক পাশ কেটে চলে গেল মনে হলো আমার বা পাশের দিকে একটু আলতো ছোঁয়া লাগলো তার।
কথা হচ্ছিল আমার মা,বাবা,ভাই বোন আর আমাকে নিয়ে। হঠাৎ প্রশ্ন করলাম তোমার খবর কি তোমার আম্মু আব্বু কেমন আছে?
ভাবলাম এই প্রশ্ন করার পর; তুমি আমার এই নাম জানলে কি কিভাবে জানতে চাইবো, কিন্তু তার আগেই মেয়েটা
বললো আমার কথা পরে জানলেও চলবো তার আগে আপনার হাত ঘড়িটা; মানি ব্যাগটা আর মোবাইলটা আমার হাতে দেন।
আমি বললাম কি ব্যাপার?
দিবেন নাকি লোক ডাকবো বললো মেয়েটি। আপনি আমাকে চিনতে না পারলেও আমি আপনাকে চিনেছি, দেন-দেন ভদ্র লোকের মত দিয়ে দিন। না হলে তো বুজতেই পারছেন
আমি কি করতে পারি।
আমি ‘থ হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। এবার মেয়েটি বললো ও বুঝতে পারছি লোক জন ডাকতে হবে। না হলে দেবেন না। এর পর মেয়েটি আমার হাত ঘড়িটা খুলে
নিল ছোঁ মেরে ঠিক বিড়াল যেমন ইদুর ধরে। মানিব্যাগটা পকেট থেকে বের করে নিল।
বললো মোবাইলটা ? পকেট হাতরে পেল না, আমিও বোকা বনে গেলাম একটু আগেও মোবাইলে কথা বলেছি আমার এক কলিগের সাথে। মেয়েটি নিচু গলায় বললো যা শালা
এরই মধ্যে কাজ সেরে ফেলেছে। বুঝলাম পাশে যে লোকটা আমাকে ধাক্কা দিয়েছে সেই লোকটা মোবাইলটা পকেট থেকে নিয়ে নিয়েছে।
এবার মেয়েটা আমাকে বললো ব্যাটা
পিছনের দিকে তাকাবি না, তাকাইলে কিন্তু …
আমি সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম আর মেয়েটির প্রথম দেখা চোখ দুটো মনে মনে (ছোট্টবেলা যেভাবে গুণের নামতা মুখস্থ করতে হতো) গুণের নামতার মতে জপতে লাগলাম।
আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল, যে কারোরই মন খারাপ হয় এসব বিষয়ে। খুব অল্প দামি একটা ঘড়ি হাতে ছিল আমার। সরকারি চাকরি পেয়ে বড় মামার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন মামা বেশ দাম দিয়ে এই ঘড়িটা কিনে দিয়েছিল আর মোবাইলটা ছোট দুলাভাইয়ের দেয়া এলএলবিতে এ ফার্স্টক্লাস পেলাম বলে। যা ভাগ্য!
কারো কাছে বিষয়টা আর শোয়ার করলাম না, এই জন্য যে; একজন জেলা সহকারি জজের কাছ থেকে একটি মেয়ে এগুলো নিয়ে গেছে বিষয়টা কেমন না?
তাছাড়া আমি তো একজন পুরুষ নাকি ? তার উপরে আবার বাঙালি।
মন খারাপ করেই বাসায় ফিরলাম। রাতের খাবার শেষে আমার বাসার দারোয়ান কে বললাম আমার মোবাইলটা হারানো গেছে অফিসারা কেউ ল্যান্ড ফোনে ফোন করলে বলো আমি সকালে কথা বলবো।
পরের দিন সকালে কোর্টে গেলাম। মন ভালো না বলেই কিনা বিচারিক কাজে নিজেকে মনোযোগী করতে পারলাম না।
একটু পরেই কোর্ট জিআরও বললো স্যার, একটি মেয়ে
গতকাল রাতে ধরা পড়ছে আপনার কোর্টে দিতে চাই।
কি মামলা ?
গ্রুফ ছিনতাই স্যার। বললো কোর্ট জিআরও।
মিনিট তিরিশ পরে এজলাসে উঠলাম; দেখলাম গতকালের সেই মেয়েটি। যে মেয়েটির প্রথম দেখা চোখ দুটো আমি ছেলেবেলার গুনের নামতার মতো মুখস্থ করেছি। আমার
জীবনে এ রকম আর কোন ঘটনা ঘটে নি যে তার বর্ণনা করবো। মেয়েটি আমাকে এজলাসে বসা দেখে চিনতে পেরেছে কিনা আমি জানিনা, তবে; মেয়েটির সেই কথাটি
আমার মনে পরে গেল “আপনি আমাকে চিনতে না পারলেও আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি।
সে আমাকে কি চিনতে পেরেছে জানি না, তবে সে যে আমাকে গতকাল রিক্ত হাতে বাসায় ফেরত পাঠিয়েছে; এই হিসাবে তাকে আমি বেশ চিনতে পেরেছি।
আজ তার কি হওয়া উচিত ?
আরও লেখা পড়ুন।
আরও লেখা পড়ুন।
আরও লেখা পড়ুন।
আরও লেখা পড়ুন।
আরও লেখা পড়ুন।