লুকোচুরি – সাগর চৌধুরী

Picsart_23-01-09_00-10-41-017.jpg

ফুলের তোড়াটা রোহানের দিকে দিয়ে বললো নিন। আপনার জন্য ম্যাডাম পাঠিয়েছে। রোহান বোকার মতো তাকিয়ে রইলো লোকটার দিকে। আরে লোকটা তো দেখতে ভদ্র মনে হয়। বাঁচাল টাচাল বলে মনে হয় না।
এই পৃথিবীর কত কিছুই বিচিত্র! কোথাকার ফুল, কার ফুল, কার জন্য ? ম্যাডামই বা কে ?

রোহান হাতে ফুলের তোরাটা নিয়ে বললো-‘আমি ঠিক চিনতে পারিনী কোন ম্যাডাম?

এবার লোকটা বাঁদিকে দেখিয়ে বললো ম্যাডাম মানে আমার ম্যাডাম। গাড়িতে বসে আছেন। আপনাকে দিতে বললো তাই দিতে এলাম।

রোহানের কৌতূহল আরো বেড়ে গেল। কোন ম্যাডাম রে বাবা ?
গাড়ির দিকে যেতে যেতে বললো ‘ম্যাডাম দিতে বললো আর আপনি ফুল দিতে চলে এলেন ?

‘কি করবো স্যার, চাকরি করি।’

চাকরি করেন মানে ? এই দেশে চাকরি কে না করে ?
প্রধানমন্ত্রী ? রাষ্ট্রপতি ? বলেন কে করে না ?

স্যার তারপরেও। আমি ম্যাডামের ড্রাইভার। ফুলইতো দিতে বলেছে অন্য কিছু তো নয়।

এবার রোহান ড্রাইভারের দিকে তাকালো গাঢ়ো চোখে । লোকটা যেন অপরাধ করেছে এমন একটা ভাব।

রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো ড্রাইবার-‘স্যার রেগে যাচ্ছেন কেন ?
এক গুচ্ছ ফুলইতো’ । দাঁড়িয়ে গেল রোহান ।

‘আমাকে তুমি চেন ?

‘না স্যার’ ।

আমি কি করি জানো ?

‘না স্যার’।

আমার সাথে ফাজলামো করো।

এবার রোহানোর দিকে তাকিয়ে ড্রাইভার বুঝতে পারলো সত্যি সত্যি সে ভুল করেছে। বললো-‘স্যার ম্যাডাম যদি আবার কখনো ফুল দিতে বলে তবে অবশ্যই আমি রাজি হবো না । এটা আমার সত্যি ভুল’ ।

চলো তোমার ম্যাডামের কাছে।
ড্রাইভার হেঁটে যাচ্ছে সামনে আর পেছনে রোহান।

গাড়ির কাছে যেতে যেতে রোহান বললো
‘তোমার ম্যাডাম থাকেন কোথায়’ ?

‘বারিধারা’ ।

কি করেন ?

‘চাকুরি করেন’।

‘কি চাকরি’ ?

‘ব্যাংকের চাকরি’।

‘আচ্ছা দরজা খোল’।

ড্রাইভার ডাকলো-‘ম্যাডাম। ম্যাডাম’।

কারো কোন রা শব্দ নেই। ড্রাইভার গাড়ির দরজা খুলে আরো বোকা বনে গেল।

গাড়ির পেছনের সিটে ম্যাডামকে রেখে গিয়েছিল পাঁচ মিনিট আগে। এখন সে নেই, এটা কেমন কথা। তবে সে কি পালিয়ে গেল ?

রোহান বললো-‘কি হলো, তোমার ম্যাডাম কোথায় ?

‘স্যার এই মাত্র তাকে গাড়ির পেছনের সিটে রেখে আমি ফুল দিতে আপনার কাছে গেলাম। আসতে আসতে কতটুকু সময় আর নিলাম। দেখলেনতো এরই মধ্যে সে আর নেই।

সত্যি বলছি স্যার, এই খানে তাকে রেখে আপনার কাছে গেলাম’।

-কেমন যেন একটা সন্দেহ মনে হলো তার। কে এমনটা করতে পারে, তার কোন পুরনো বান্ধবী ? আর এই সময় আমি এখানে আছি সেই বা জানলো কি করে। নাকি বন্ধুরা কেউ এই ফাজলামো করেছে ?

‘আচ্ছা তোমার নাম কি ?

‘রহমান। মোহাম্মদ রহমান’।

‘আচ্ছা রহমান । তুমি সত্যি করে বলোতো এটা কে করেছে ?

‘স্যার, সত্যি করে বলছি। আমার ম্যাডাম আমাকে ফুলের তোরটা দিয়ে বললো ঐ যে লোকটা আছে, তাকে গিয়ে ফুলের তোরাটা দিয়ে এস। বলো ম্যাডাম আপনার জন্য
পাঠিয়েছেন’ ?

‘এইটুকুই বলেছে’ ?

‘জ্বি, স্যার শুধু এইটুকুই বলেছে’ ।

রোহান কেমন যেন ভাবনায় পড়ে গেল । আরে এটা কেমন কথা ফুলের তোরা দিয়ে গেল কিন্তু সেই মানুষ নেই। গাড়ির মধ্যে থাকা মানুষ এখন নেই।

ড্রাইভারের সাথে রোহানের কথা বলা দুড়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো সে। কেমন মজা দেখার জন্য এই আয়োজন। ফোনে এবার রহমানের সাথে কথা বলতে হয়।

এরই মধ্যে ফোন বেজে উঠলো রহমানের ‘জ্বি ম্যাডাম,আমি তো গাড়ির কাছেই আছি । যে স্যারের কাছে ফুলের তোর নিয়ে পাঠালেন, সে স্যার তো আমার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।

জ্বি আচ্ছা’।

কে ফোন করেছে ?

আমার ম্যাডাম।

আসতে বলনি ?

‘জ্বি স্যার, তিনি আসছে’।

রোহান রাস্তার পাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে একজনকে আসতে দেখে রহমানকে বললো উনি তোমার ম্যাডাম ?

জ্বি স্যার ।

কাছে আসতে আসতেই রহমান বললো-‘স্যার, এই যে ম্যাডাম’ ।

মেয়েটি সহজ সরল ভঙ্গিতে বললো-‘রাগ তো হবেই তোমাকে বলেছিলাম ফুলের তোরাটা
দোকানে ফেরত দিতে তা তুমি স্যারকে দিয়েছো’।

‘স্যরি। কিছু মনে করবেন না আপনাকে বিরক্ত করার জন্য। আমার নাম নিশো। আমি এই
ফুলের তোড়াটা কিনেছি আমার এক কলিগের জন্মদিনের জন্য, তাকে দেব বলে। কিন্তু আমার সময় হবে না।

আমি খুব একটা জরুরি কাজে এখনি বের হবো’।

রোহান ফুলের তোড়াটা নিয়ে ফুটপাতের উপর এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটির কথা শুনলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না।

এবার নিশো বললো-“কিছু একটা বলুন। আপনি মনে হয় খুব রেগে আছেন ?

না। রেগে নেই। তবে বিষয়টি কেমন না’ ?
“হ্যাঁ। আমার কাছেও বিষয়টি একটু কেমন মনে হলো। তারপরেও আমি কি বলতে পাড়ি বলুন’।

ও আচ্ছা আপনার নামটা তো বললেন না ?

আমি রোহান। পুরো নাম রোহান মল্লিক। মল্লিক আমার পদবি। আমি পাবলিক সার্ভিস কমিশনে আছি।

‘আচ্ছা, আপনি স্যরি কথাটা ফিরিয়ে নিন। আর আপনার কলিগের ঠিকানাটা বলুন আমি ফুলের তোড়াটা তার কাছে পৌঁছে দেব’।

‘এটা কি করে হয় ?

‘আপনার যদি সমস্যা না হয়’।

‘না, না আমার সমস্যা হবে কেন ? সে আমার মেয়ে কলিগ। বরং ফুল পেলে বেশ খুশিই হবে। কিন্তু ?

‘কোন কিন্তু নয়। বরং আমি আপনাকে কিছুটা পথ এগিয়ে দেই। উঠুন আমার গাড়িতে।
‘আপনার কলিগ যদি বলে, আপনি না এসে আমি কেন ফুল নিয়ে ?

‘বলবেন আমি একটু ব্যস্ত আছি জরুরি কাজে আটকে গেছি’।

‘আপনার সাথে আমার সম্পর্ক জানতে চাইলে’ ?
‘কি বলবেন ? এবার নিশো কি ভেবে যেন বললো-‘আপনার যা ইচ্ছে বলবেন। আমার কোন আপত্তি নেই’।

নিশো গাড়ির সিটের পকেট থেকে কাগজ বের করে ঠিকানা লিখে দিয়ে বললো-‘এর সাথে আমার ফোন নম্বরটাও দেয়া আছে। প্রয়োজনে ফোন করতে পারবেন।’

জিজ্ঞাসু চোখে রোহান আবার তাকালো, এবার নিশো বললো-“ঠিক আছে আপনার যা মনে চায় বলে দিতে পারেন। আর শুনুন গাড়িটাও আপনাকে দিলাম সাথে থাকলো রহমান।

আমি এই পাশেই নেমে যাবো। রহমান আমার অফিসের পাশের রাস্তায় একটু রেখে যাও’ ।

গাড়ি থেকে নেমে গেল নিশো।

রহমান বললো-‘স্যার এবার কোথায় যাবো ? হাতের লেখা
কাগজটার দিকে তাকিয়ে রোহান ভরকে গেল । আরে এটা তো ভাবীর বাসার ঠিকানা।

মেয়েটির কথায় এতই বিভর ছিল ঠিকানাটা আগে দেখে রাখেনি সে।

রহমান আবারো বললো-‘স্যার কোনদিকে যাবো ? স্যার, স্যার কোন দিকে যাবো?

রোহান নিচু গলায় বললো রহমান গাড়ি পাশে রাখো, তোমার ম্যাডামের ফোন নাম্বারটা আছে না ?
‘দাও তো ‘?

‘স্যার ম্যাডামের ফোন নাম্বার দেওয়া নিষেধ আছে’ ?

‘কে নিষেধ করেছে’ ?

‘ম্যাডাম নিজে নিষেধ করেছে’।

‘তাহলে তার অফিসের দিকে চল’।

‘স্যার ম্যাডাম অফিসে তো নেই’।

‘এই যে একটু আগে নেমে গেল’।

‘স্যার, এটা তার বাসা’।

‘বাসা মানে ? সে বললো অফিস’।

‘স্যার আপনি না জানারই কথা। আজ সকালে ম্যাডাম আমাকে বলেছিল, কোন ছেলে নাকি তাকে দেখতে চেয়েছে। কিন্তু ম্যাডাম সেই ছেলের সাথে মজা করার জন্য আমাকে দিয়ে ফুল কিনিয়েছে এবং ম্যাডাম
বলেছে যদি ছেলে তার পছন্দ না হয় তবে সে ফুল তার নিজ হাতে দিবে। আর যদি ছেলে পছন্দ হয় তবে আমাকে দিয়ে ফুল দিবে আর সে মজা করবে। কিন্তু আপনি যে সে তা আমি এবার পরিষ্কারভাবে বুঝলাম’।

রোহান এবার বললো-‘আচ্ছা তোমার ম্যাডামের নাম রিমো না নিশো।

‘স্যার রিমো। ইসরাত জাহান রিমো’।

এবার রোহান বললো-‘ও আচ্ছা তাহলে ইনিই ইসরাত জাহান রিমো’।

এবার ভাবীকে ফোন করতে হয়।

নাম্বার টিপে ফোন করতে রিং হতে না হতেই রিসিভ হলো-হ্যালো বলার আগেই বললো

এটা রং নাম্বার। ফোন কেটে গেল।

সাথে সাথে নাম্বার চেক করে দেখলো না ঠিক আছে । আবারো রিং হতে না হতেই রিসিভ করে বললো-‘এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু কথার রেশ এমন যে বোঝাই যাচ্ছে না, এটা ফোন কম্পানির না অন্য কিছু।

তবে রিসিভ করার সময় দেখেই রোহান বুঝলো ঘটনা কি!
রোহান বুঝলো এটা কার কারসাজি। এবার ম্যাসেজ পাঠালো রিমো ও মাই সুইট হার্ট।

সাথে সাথে ফোন ব্যাক হলো ভাবীর নম্বর থেকে রোহান ধরে বললো ও সুইট হার্ট ।

ভাবী বললো- এসব কি ? আমাকে কি সব বলছো ?

ভরকে গেল রোহান। কি হলো । কাকে কি বললাম।

ভাবী এবার বললো-হয়েছে, কারো চেয়ে কেউ কম যাও না, তুমি আমার বাসায় চলে এস। রিমো আমার এখানেই আছে।

সাগর চৌধুরী
সম্পাদক ও প্রকাশক।

আরও লেখা পড়ুন।

হস্তরেখা – সাগর চৌধুরী

আরও লেখা পড়ুন।

একদিন পাখি হয়ে উড়বো বলেই – সাগর চৌধুরী

আরও লেখা পড়ুন।

কাক ও কোকিল – সাগর চৌধুরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top