কাক ও কোকিল – সাগর চৌধুরী

PicsArt_09-29-12.22.40.jpg

কাক ও কোকিল – সাগর চৌধুরী

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ যাত্রা। অফিসের কাউকে তার সাথে পাঠানো দরকার। কাউকে মানে একজন রিপোর্টার। কিন্তু এই একজনকে ম্যানেজ করতে গিয়েই ঘাম ছুটে গেল।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন—’মিডিয়া তাকে সঠিক গুরুত্ব দিচ্ছে না’। সেই কথার সূত্র ধরেই আমার চিফ বললেন— ভালো কাউকে পাঠাতে। কিন্তু অফিসে যারা আছেন; তাদের মধ্যে থেকেই তো ভালো বের করতে হবে! কিন্তু ভালোটা কে ?

এই প্রশ্নের উত্তর আমার মতো সবার কাছেই অজানা একটা বিষয়। তারপরও সবকিছু যখন একটা হাতের কাছে নিয়ে এসেছি। তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠলো। একটু আগে এক জুনিয়রের ফোন বেজে উঠলেই; তাকে কড়া কথায় ধমক দিয়েছি। প্রয়োজন সময়ে ফোন ধরা নিষেধ। এবার আমার তো ফোনটা ধরতে হয়। মিরাজ ভাইয়ের ফোন রিসিভ করেই সালাম দিলাম।

‘কোথায় তুমি?’
‘অফিসে।’

‘কাজ শেষ হলে আমাকে ফোন কর। দাদা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

‘ঠিক আছে ভাই।’

দাদা মানে ‘দর্পণ দা’। সিনিয়র মানুষ। আমাদের বেশ আদর করেন। বন্ধুর মতোই সম্পর্ক। আমরাও তাকে বেশ শ্রদ্ধার চোখে দেখি কিন্তু আড্ডা শুরু হলে সবাই কঠিন আড্ডাবাজ হয়ে যাই। আজ দাদা এসেছে। দাদাকে খুব একটা পাওয়া যায় না। ব্যস্ত মানুষ। তারপরও আমাদের জন্য আজ এসেছেন।

পরের দিন সকালে ফ্লাইট। রাত নটার মধ্যে সব ঠিকঠাক করে দিলাম। সিনিয়রকে জানালাম কাকে পাঠাচ্ছি। এরই মধ্যে মিরাজ ভাই একটা ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়েছে। দাদা বেশিক্ষণ থাকতে পারবেন না, তোর লেট হলে বল। দাদা চলে যাক, পরে একদিন দেখা হবে।

তাকে জানালাম আমি আসছি।

অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে ছুটলাম দাদার সাথে দেখা করার জন্য। এরই মধ্যে ফোনে কথা বলেছি অফিসের কলিগদের সাথে। বাসায় কথা বলেছি। মিরাজ ভাইয়ের ফোনে বলেছি আমি আসছি ।

আমাকে দেখেই দাদা বললেন– কিরে বেঁচে আছিস তাহলে?

বললাম—’আপনার দোয়ায়ইতো বেঁচে আছি।’

‘আর আমাকে বোকা ভাবিস না। যেখানে নিজের জন্য দোয়া করতে পারি না। সেখানে তোর জন্য দোয়া, সেটা অনেক বড় বিষয় হয়ে গেল না। থাক ওসব কথা। বল কেমন আছিস?

‘ভালো’।

‘বাচ্চা কেমন আছে?’

‘ভালো আছে। তার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন সারাদিন বাসায় দুষ্টমি

দাদা বাচ্চার কথা বলতেই মিরাজ ভাই একটু আলতো হাসি দিলেন। সেদিকে লক্ষ করার আগেই দাদার প্রশ্নের উত্তর দিলাম প্রশ্ন করলাম—’আপনার বাচ্চার খবর কি? ‘বাচ্চার খোঁজখবর নেবার জন্য সকল বাবাকেই নজর রাখতে হয়। ও মিরাজ; ঘর সংসারের খবর শোনামাত্রই তুমি এমন রহস্যময় হাসি দিলে যে? নিজে এখনো এই দলে আসতে পারো নি বলে?

এবার মিরাজ ভাই একটু থমকে গিয়ে বললো–‘না ভাই, আসলে গতকাল পত্রিকায় একটা নিউজ পড়ে খুব মজা পেয়েছি। আপনাদের আলোচনার বিষয় বাচ্চা নিয়ে তো; তাই একটু হাসলাম। সেই নিউজটাও বাচ্চা নিয়ে। আপনাদের কথা শেষ করেন; তারপর সে মজার নিউজটা আপনাদের বলবো।’

দাদার সাথে ব্যক্তিগত কথা বলতে কোন কথাই ছিল না। বহুদিন দেখা হয় না। তাই এদিকে আসলেন বলে দেখা হলো। এই কথা সেই কথা বলার পর দাদা বললো—’মিরাজ ইদানীং কাজেকর্মে খুব এ্যাকটিভ।’

আমি হেসে বললাম—’সবসময় তো আমরা কাছে এ্যাকটিভ মনে হয়।’

‘বললো না; ও কি গল্প শোনাবে।’

আমি চায়ের কথা বলে। মিরাজ ভাইকে ডেকে বললাম—’মিরাজ ভাই, দাদা বাচ্চাদের গল্প শোনার জন্য আপনাকে ডাকছে।’ আর শোনেন, ‘চায়ের কথা বলেছি আপনার জন্য । আমাদের সামনে থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়েছিলেন মিরাজ ভাই । পরিচিত একজনের সাথে

কথা বলায় ব্যাস্ত । আমাকে সে হাত ইশারা দিয়ে বললো-‘আসছি।’

চায়ের কাপ ইতিমধ্যেই আমার হাতে এসে পৌঁছে গেছে। দাদা চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই

বললো—’ইসরে চায়ে তো অনেক চিনি দিয়েছে। ডাক্তার তো বারন করেছে চিনি খেতে।’

বললাম—’নতুন করে চিনি ছাড়া দিতে বলি ??

‘থাক আর দরকার হবে না।”

এরই মধ্যে হাসতে হাসতে আমাদের কাছে এসে দাঁড়ালো মিরাজ ভাই। দাদা আর আমি সামনেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি। মিরাজ ভাইয়ের জন্য চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে

বললাম—’বাচ্চাদের গল্প শুনবেন বলে আর শুনালেন না।

আরে গতকালকে পত্রিকায় পড়েছি। এক ব্রিটিশ দম্পতির বাচ্চা হয় না বলে তারা একজন ডাক্তারের কাছে গেছেন। ডাক্তারের সাথে কথা বলার পর, ডাক্তার তাদের কথা শুনে পরামর্শ দিলেন। পরামর্শ হলো, দুজনকেই কিছু পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা যাবে কার কি সমস্যা আছে। তারা ডাক্তারের এই পরামর্শে রাজি। নির্দিষ্ট দিনে এসে তারা সে টেস্টের মুখোমুখি হলো। বেশ কয়েক দিন পর টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে তারা ডাক্তারের কাছে গিয়ে হাজির হলো।

ডাক্তার দু’জনার রিপোর্ট দেখে পুরুষ লোকটাকে আরো কিছু টেস্ট করতে বললেন। একটা কাগজের উপরে বেশ ভালো করেই কি কি টেস্ট করতে হবে লিখে দিলেন। পরের মধ্যেই রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের সামনে হাজির ! স্বামী স্ত্রী দু’জনই ডাক্তারের

মুখোমুখি। ডাক্তার আগেই বলে নিলেন ‘যে কারো সমস্যার কারণেই আপনাদের বাচ্চা হয় না। এটা হতে পারে স্বামীর অথবা স্ত্রীর। প্রকৃতিগত ভাবে এমনটা হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে মন খারাপ করা চলবে না।

এবার পুরুষের রিপোর্ট হাতে নিয়ে বললেন- এই দেখুন, এই জায়গাটাতে যাচ্ছে আপনার সমস্যাটা। এই কারণেই আপনাদের বাচ্চা হচ্ছে না। অন্য সমস্যা হলে স্পষ্ট বোঝা

ওষুধ খেলে বা অপারেশন করালে এটা ঠিক করা যেত কিন্তু আপনার যে সমস্যা তাতে এটা আর ঠিক হবার নয়। কিন্তু মহিলা ছাড়ার পাত্র নয়। ডাক্তারকে বললো-‘তাই বলে কি বাচ্চা নেওয়া যাবে না?

এবার ডাক্তার একটু নড়েচড়ে বসলেন। তারপর হাতের কলমটা দিয়ে টেবিলের সাদা কাগজটার উপর কি যেন লিখতে গিয়ে একটু থমকে গেলেন। বললেন-‘হ্যা। বাচ্চা নিতে অবশ্যই পারবেন। কিন্তু বাচ্চা নেবার ক্ষেত্রে আপনাদের কিছু বিষয়ে জেনে নেওয়া ভালো। এরপর তার সহকারীকে ডেকে, বাচ্চা লালন-পালন এবং বাচ্চা নেবার শলাপরামর্শমূলক একটা বই হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন—’এটার মধ্যে সব লেখা আছে কোন বিষয় আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হলে আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের সেই বিষয়টা সম্পর্কে বুঝিয়ে বলবো। আর শুনুন, যেহেতু আপনারা বাচ্চা নিচ্ছেন। মনে রাখবেন, আপনাদের দু’জনের মতের ভিত্তিতেই নিতে হবে। বাচ্চা নিতে পারবে; এই খুশিতে যখন সেই দম্প্রতি বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল তখন তারা ভুলেই গিয়েছে যে, পুরুষ লোকটার অক্ষমতার কারণেই তাদের বাচ্চা হচ্ছিল না। বাসায় ফিরে

তারা দু’জনেই বইটা পুরো পড়লো । তারপর এই সিদ্ধান্ত নিল । আগামী সপ্তাহের একটা

দিন তারা ডাক্তারের সাথে দেখা করবে এবং বাচ্চা নেবার জন্য কথা বলবে ।

ডাক্তারের মুখোমুখি বসার পর ডাক্তার জানতে চাইলো -‘আপনারা দু’জন কি সিদ্ধন্ত নিলেন ?’ ‘আমরা বাচ্চা নিতে চাই।’ বললো পুরুষ ভদ্রলোকটি। ‘বাচ্চা নিতে হলে বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। আপনারা কোনটা গ্রহণ করবেন? ডাক্তারের এমন প্রশ্নে ভদ্রমহিলা বললো- বইতে যে এই পদ্ধতিটা আছে; এটা হলে কেমন হয়?’ হাতের বইটা ডাক্তারের দিকে ঠেলে দিলেন।

এবার ভদ্র মহিলার দিকে তাকিয়ে ডাক্তার বললো-‘তাহলে আপনারা এই পদ্ধতি গ্রহণ করলে, আপনাদের পছন্দমত লোকের কাছ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করতে হবে। তারপর আমরা সেই শুক্রাণু যথাস্থানে প্রতিস্থাপন করলেই ফলাফল পেতে আর বেশি দিন লাগবে না। আশা করি বছরান্তেই আপনি মা হতে পারবেন । ডাক্তার যখন বছরান্তে মা হবার কথা বললো ভদ্রমহিলার চোখে মুখে তখন অজানা এক খুশির ঝিলিক বইছে। ভদ্রলোকটি ডাক্তারের কথাগুলো শুনছিল খুব মনোযোগের সাথে। তার মনে হলো এত গুরুত্বপূর্ণ কথা সে আর কখনো শুনতে পায় নি।

এবার পছন্দের লোক খুঁজে বের করার পালা। এদিকে খোঁজে সেদিকে খোঁজে কিন্তু অনেকের কাছেই এই কথা বলে, তাদের রাজি করাতে পারলো না। এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ এভাবে মাস যাবার পর। মহিলা তার স্বামীকে একদিন বললো-‘আমরা এত কষ্ট করেও কাউকে রাজি করাতে পারছি না। আমাদের পাশের বাড়ির ঐ লোকটার সাথে কথা বলে তো দেখতে পারি।

ভদ্রলোকেরও পছন্দ হলো। পাশের বাড়ির সেই লোকটা তারই সাথে পাশাপাশি থাকে। ভদ্র না হলে এতদিন পাশাপাশি থাকাও যেত না। তাছাড়া একজন শক্ত সামর্থ্য পুরুষের যতগুলো উপমা থাকে পাশের বাড়ির লোকটার সেই সব গুণ বা উপমা আছে। তাছাড়া তিন তিনটে সন্তান তার। প্রথম সন্তানের বয়স দশ । পরের টার বয়স সাত আর ছোটটা এবার চারে পড়লো । ঘরে তার সুখি স্ত্রী। বলা চলে পুরুষ ভদ্রলোকটাই তার স্ত্রীকে নিয়ে তার সাথে কথা বললো এবং সেই লোকটাকে রাজি করালো । রাজি হবার শর্ত হলো। সেই লোকটাকে দুই হাজার ডলার দিতে হবে এবং তাদের সন্তান

জন্ম নেবার পর সেই চুক্তি বাতিল হবে। কাগজপত্রে সই করে সেই চুক্তির পুর্ণাঙ্গ একটা রূপ দিল। এরই মধ্যে তারা ডাক্তারের সাথে আলাপ করে নিল। নির্দিষ্ট একটা দিনে; পাশের বাড়ির লোকটা শুক্রাণু ব্যাংকে শুক্রাণু রেখে গেল। ডাক্তরের পরামর্শে সেই শুক্রণু যথাস্থানে প্রতিস্থাপন হলো। এবার অপেক্ষার পালা।

প্রথম ছয় মাস আনন্দে আর ঘোড়ের মধ্যেই কেটে গেল। সন্তান হবে এই আশায় । পরের মাসে গিয়ে ডাক্তারের কাছে বললো-‘এবার আপনি কি পরীক্ষা করে দেখবেন, সব ঠিক আছে কি না?’

সামনের সপ্তাহে আসার কথা বললে; তারা দু’জন সামনের সপ্তাহেই ডাক্তারের কাছে ফিরে
আসে ।

তাদের পরীক্ষার রিপোর্টের বিষয়ে বললো-‘ওসবের কিছুই দেখছি না, তবে আরো অপেক্ষা করতে পারেন ক’টা দিন।

সপ্তাহের পর মাস যায়। অপেক্ষার পালা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে থাকে । ডাক্তার এর কোন ভালো খবরও দিতে পারে না। মাস আট পরে ডাক্তার ডেকে বললো-‘ দেখুন; আমি এর কূল করতে পারছি না।’

এবার আর কি হবে । পাশের বাড়ির লোকটার বিরুদ্ধে তারা প্রতারণার মামলা ঠুকে দিল আদালতে । তাদের চুক্তি অনুযায়ী কাজ না হওয়ার ফলে তারা ক্ষতিপূরণ চাইলো। এসব ঘটনা শুনে লোকটাও আদালতে গিয়ে হাজির হলো।

তার পক্ষের যুক্তি হলো, তার তিন
তিনটে সন্তান আছে এমন কাজ তার দ্বারা হতেই পারে না। পুরুষ লোকটা আদালতে উল্টা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো-‘সমাজে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।’

এবার শালা যায় কোথায় ?
আদালতে সমন জাড়ি হলে। ডাক্তার আদালতে হাজির হলো । তার পক্ষের যুক্তি সে তুলে ধরলো । এবং আদালতের কাছে বললো-‘এর একটা বিহিত আমরা করতে পারি, সেটা আদালতের অনুমতি পেলে ।

কি সেই অনুমতি ।

‘যে লোকটা শুক্রাণু দিয়েছে তার শুক্রাণু পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করলে জানা যাবে সত্যি কি তার সন্তান জন্ম দান করার মত ক্ষমতা আছে কি নেই ।’

আদালতের অনুমতির ফলে সেই রিপোর্টও চলে এল আদালতে। ডাক্তারদের আলাপ- আলোচনা এবং রিপোর্টে একটা বিষয় সবার সামনে ফুটে উঠলো । এবার তো নয়ই, কোন কালেও সন্তান জন্মদানের মত ক্ষমতা এই পুরুষের ছিল না ।

আদালতে এতগুলো লোকের সামনে লোকটা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। লোকটার এমন আচরণে সবাই বিব্রতবোধ করলো । আসলে সবাই পরে বুঝতে পারলো; সক্ষম একজন পুরুষের সামনে অক্ষম একজন পুরুষ শিমুল তুলোর মতো । তাছাড়া এই মামলায় হেরে
গেলে তাকে পুরো দুই হাজার ডলার ফেরত দিতে হবে। এমনকি আদালতের ইচ্ছায় ক্ষতিপূরণসহ।

অবশেষে সেই লোকটার স্ত্রীকে ডাকা হলো আদালতে । স্ত্রীর কথা শোনার জন্য আদালতে পিনপতন নীরবতা। তার কাছে আদালত জানতে চাইলো-‘এই লোকটা সন্তান জন্মদান করার মতো ক্ষমতা কোনকালেই ছিল না, তাহলে তিন বাচ্চার আসল পিতা কে ?

স্ত্রী খুব সহজভাবে বলে গেল। তার তিন সন্তানের পিতার কথা। প্রথম সন্তানের বাবা হলো তার পুরনো বন্ধু । দ্বিতীয় সন্তানের পিতা হলো পাশের শহরের এক দোকানওয়ালা।
শহরে বাজার করার সময় সে তার বাড়িতে গিয়ে মিলিত হতো । শেষ সন্তানের পিতা তারই বাড়ির কাজের লোক । যে নাকি গত বছর চাকরি ছেড়ে ফিরে গেছে ।
এবার আদালতের ভেতরে এবং বাইরে নীরবতার স্তর ভেদ করে একটা আচমকা শব্দের
প্রবেশ হলো । যা কেউই বুঝতে পারেনি আসলে শব্দটা কোন দিক থেকে এসেছে ।

অনেকেই এদিক সেদিক নজর ফেরালেও কিছুই বুঝে উঠতে পারে নি ।

এবার দাদা বললো-“ গল্পটা খারাপ না, সুন্দর এই গল্পের জন্য কি খেতে চাস বল?

দাদা মিরাজ ভাইকে যখন এই কথা বলছে, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি তখন রাত এগারোটা ত্রিশ।

গাড়ির চাবিটা হাতে নিয়ে দাদাকে বললাম—‘সকালে অফিসে আসতে হবে। আমাকে একটু দয়া করেন।’

এবার দাদার সেই ভুবন ভোলানো হাসি। এক গাল হেসে তারপর বললেন-‘মিরাজের গল্পটা শুনছেন তো মনোযোগের সাথে। টেষ্ট করেছেন কখনো। নাকি সারা জীবন কাকের মতো পরের বাচ্চাকে নিজের বলেই মেনে নিলেন।’

আমি জানতাম দাদা আর মিরাজ ভাইয়ের সাথে থাকলে আরো আড্ডাবাজি হতো, গল্প হতো, চা খাওয়া হতো। হয়তো সারা রাতও কেটে যেত । কিন্তু বিরোধী দলের নেতা অর্থাৎ সাবেক প্রধানমন্ত্রী আগামী কাল দেশের বাইরে যাবেন বলে আমার প্রধান সহকারীকে সেখানে পাঠিয়েছি। কাল সকালে ভোরের কাজটা এসে না ধরলে বিষয়টা খারাপ লাগবে আমার কাছে ।

বিদায় নিয়ে বাসায় যাচ্ছি। গাড়ি ছুটছে বাসার উদ্দেশ্য, বিজয় সরণীর রাস্তায়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে এসে একটু থমকে দাঁড়ালাম ? সত্যি নিজের বাচ্চা বাচ্চা বলে এত কিছু
করছি; আসলে আমি নিজেই কি জানি ! বাচ্চা জন্মদানের ক্ষমতা আদৌ কি আমার আছে?


সাগর চৌধুরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top