দুদকের উপ-পরিচালক রিজিয়া খাতুন তিন কোটি টাকার প্লট কিনেছেন ৬০ লাখ টাকায়

Picsart_23-01-01_15-49-37-741.jpg

রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের প্রতি কাঠা আবাসিক প্লট থেকে ১ থেকে সোয়া ১ কোটি টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই মূল্য ধরে হিসাব করলে ৩ কাঠা আয়তনের একটি প্লটের দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু রিজিয়া খাতুন তার প্লটের রেজিস্ট্রিকালে মূল্য দেখিয়েছেন ৬০ লাখ টাকা। প্লট ক্রয়ের সময় তিনি প্রায় আড়াই কোটি টাকার তথ্য গোপন করেছেন। একইসঙ্গে এ পরিমাণ টাকার যে পরিমাণ রাজস্ব আসতো সেটিও লোপাট করা হয়েছে।

অপরাধ প্রতিবেদকঃ ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় দেশে-বিদেশে বাড়ি-গাড়ি ক্রয়সহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ হরহামেশাই পাওয়া যায়। এবার অভিযোগ উঠেছে দেশের দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে যে সংস্থাটি কাজ করে, সেই প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একজন উপরিচালকের বিরুদ্ধে। তিনি চলতি বছরের মে মাসে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পে একটি ৩ কাঠার প্লট ক্রয় করেছেন। প্লটটির মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা হওয়ার কথা, কিন্তু রেজিস্ট্রিকালে মূল্য দেখিয়েছেন ৬০ লাখ টাকা। তিনি চাকরি জীবনে যে পরিমাণ বেতন-ভাতা পেয়েছেন, প্লটটির মূল্য তার থেকে কয়েকগুণ বেশি। এত টাকা দিয়ে কীভাবে প্লট ক্রয় করেছেন তা তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছেন সংস্থাটির অনেক কর্মকর্তা।

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের তথ্যমতে, রিজিয়া খাতুন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে ২০ নম্বর সেক্টরের ২১৭ডি নম্বর সড়কের ৩ কাঠা আয়তনের ৪ নম্বর প্লটটি ক্রয় করেন। প্লটের মালিক হেলাল আহমেদ চৌধুরী একজন প্রবাসী। তিনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী কোটায় প্লটটি বরাদ্দ পেয়েছেন। তার নগদ টাকার প্রয়োজন হলে তিনি প্লটটি ৬০ লাখ টাকায় দুদকের উপপরিচালক রিজিয়া খাতুনের সঙ্গে বিক্রির বিষয়ে চুক্তি করেন। এরপর প্লটটি রিজিয়া খাতুনের নামে হস্তান্তরের জন্য রাজউকে আবেদন করেন। রাজউক কর্তৃপক্ষ প্লটটি তিন মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করার অনুমোদন দেয়। এরপরই চলতি বছরের ৩১ মে প্লটটি রিজিয়া খাতুনের নামে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করা হয়। রিজিয়া খাতুন গত ১২ সেপ্টেম্বর প্লটের নথিপত্র তার কাছে হস্তান্তর করতে রাজউকে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে রিজিয়া খাতুনের কাছে প্লটের যাবতীয় নথিপত্র হস্তান্তর করা হয়।
 
অভিযোগ রয়েছে, রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের প্রতি কাঠা আবাসিক প্লট থেকে ১ থেকে সোয়া ১ কোটি টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই মূল্য ধরে হিসাব করলে ৩ কাঠা আয়তনের একটি প্লটের দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু রিজিয়া খাতুন তার প্লটের রেজিস্ট্রিকালে মূল্য দেখিয়েছেন ৬০ লাখ টাকা। প্লট ক্রয়ের সময় তিনি প্রায় আড়াই কোটি টাকার তথ্য গোপন করেছেন। একইসঙ্গে এ পরিমাণ টাকার যে পরিমাণ রাজস্ব আসতো সেটিও লোপাট করা হয়েছে।

আরও সংবাদ পড়ুন।

ঘুষখোরদের কোনো আত্মমর্যাদা থাকে না – দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ

রাজউকের এস্টেট ও ভূমি শাখার কর্মকর্তা বলেছেন, রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের প্রতি কাঠা বাণিজ্যিক প্লটের মূল্য এক কোটি টাকা ও আবাসিক প্লটের মূল্য দুই লাখ টাকা করে নির্ধারিত আছে। কিন্তু সেখানে প্রতি কাঠা আবাসিক প্লট ৯০ লাখ থেকে এক কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পূর্বাচল প্রকল্পে ৩ কাঠার একটি প্লটের মূল্য দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা থেকে তিন কোটি টাকার কম নয়। স্থান ভেদে প্লটের মূল্য আরও বেশি হয়ে থাকে। তবে পূর্বাচল প্রকল্পের যে দামে প্লট বিক্রি হচ্ছে, সেই মূল্য ধরে রেজিস্ট্রি হচ্ছে না। সেখানকার জমির মৌজা মূল্যের কম হওয়ায় রেজিস্ট্রেশনকালে প্লটের প্রকৃত মূল্য দেখানো হয় না। জমির বিক্রয় মূল্য অনেক কম দেখিয়ে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারও মোটা অংকের রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়।

দুদকের একজন উপ-পরিচালক বলেছেন, ‘দুদকের একজন উপপরিচালক এখন ৭০-৭৫ হাজার টাকা বেতন পান। তিনি যখন চাকরিতে প্রবেশ করেন তখন বেতন ১০-১২ হাজার টাকা ছিল। তার বেতন গড়ে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা ধরে হিসাব করলে তিনি বছরে চার লাখ ৮০ হাজার টাকা পেয়েছেন। সেই হিসাবে চাকরিজীবনে তিনি এক কোটি ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা পাওয়ার কথা। তার চাকরিজীবনের আয় ও ব্যাংক লোন নিয়ে ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট কিনতে সক্ষম হবেন। তার পক্ষে তিন কোটি টাকা খরচ করে প্লট কেনা কোনো ভাবে সম্ভব নয়। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

আরও সংবাদ পড়ুন।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সেগুনবাগিচা কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে – দুদকের অভিযান

আরও সংবাদ পড়ুন।

বিআরটিএ এর পূর্বাচল (ঢাকা মেট্রো-৪)অফিসে – দুদকের অভিযান

আরও সংবাদ পড়ুন।

সার আত্মসাতের অভিযোগে – সাবেক এমপি পোটন সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top