বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মোস্তফা জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চের ২০১৯ সালের ১২ মে প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, একটি ক্যাডারে উচ্চ গ্রেড এবং পদোন্নতি প্রাপ্তি সহজতর। অন্য ক্যাডার পিছিয়ে পড়ছে, যা সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। দুই মাসের মধ্যে সওজ ও গণপূর্তের প্রকৌশলীদের গ্রেড উন্নীতের আদেশ দেওয়া হয় রায়ে। সরকারের আপিলে সুপ্রিম কোর্ট আদেশ বহাল রাখলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।
বিশেষ প্রতিবেদকঃ সারাদেশের প্রকৌশলীদের মধ্যে চাপা কষ্ট কেউ দেখে না। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন প্রকৌশলীদের হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রদিপের মত সারাদেশ তারা আলোকিত করলেও তাদের ব্যাক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন এবং চাকুরী জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন। যেখানে একই ক্লাসমেট ও ব্যাচম্যাট তরতর করে প্রমোশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে গ্রেডের সিমানা সেখানে প্রকৌশলীরা হতাশায় আগুনে পুড়ছে।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্যঃ
প্রকৌশলীদের ভাষ্য, জনপ্রশাসন প্রশাসন ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় প্রকৌশলীসহ সবার পদোন্নতি তাদের হাতে। নিজেরা পদ ছাড়াই শর্ত বদলে পদোন্নতি নিলেও অন্যদের ক্ষেত্রে নিয়োগবিধি, পদ খালি না থাকা, দুদকের ছাড়পত্র না থাকার কারণ দেখিয়ে আটকে দেয়। ৩৫ থেকে ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া ১ হাজার ৯৮০ কর্মকর্তার ৩৮৭ জন প্রকৌশলী ও চিকিৎসক। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত ৩২১ জনের মধ্যে ১২৯ জন প্রকৌশলী। তাদের একজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, প্রকৌশল ক্যাডারে পদোন্নতি ও ক্ষমতা নেই। তাই প্রশাসন প্রথম পছন্দ।
বিসিএসের ২৬ ক্যাডারের ১৪টি সাধারণ ও ১২টি কারিগরি। প্রকৌশলীরা নিয়োগ পান রেল (প্রকৌশল), সওজ, গণপূর্ত, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারে। তথ্য এবং খাদ্য ক্যাডারে কিছু পদ রয়েছে প্রকৌশলীদের জন্য। বঞ্চনার অভিযোগ করে প্রকৌশলীরা বলেছেন, সরকার পরিচালনায় যুক্ত থাকার সুবিধা নিয়ে প্রশাসন ক্যাডার এবং রাজনৈতিক কারণে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠা পুলিশে পদ ছাড়াই ব্যাচ ধরে পদোন্নতি পাচ্ছে। বাকিরা নির্বাচন ও রাজনীতিতে কাজে লাগে না বলে শর্ত পূরণ হলেও পদোন্নতি পায় না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, সেতু কর্তৃপক্ষ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে প্রকৌশলীরা কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ পেলেও ক্যাডার কর্মকর্তা নন। তাদের পদোন্নতির সুযোগ ক্যাডারদের তুলনায় আরও কম।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) সাধারণ সম্পাদক এস এম মনজুরুল হক মঞ্জু গণমাধ্যমে বলেছেন, আন্তঃক্যাডার বৈষম্যে প্রকৌশলীরা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যেতে পারেন না। এতে হীনম্মন্যতা তৈরি হয়, কর্মস্পৃহা নষ্ট হয়। বঙ্গবন্ধুর সরকারের সাতজন সচিব ছিলেন কারিগরি ক্যাডারের। কৃত্য পেশাভিত্তিক প্রশাসন তথা রেলের সচিব রেল ক্যাডার থেকে, সড়ক সচিব সওজ ক্যাডার থেকে হলে বৈষম্য-বঞ্চনা কমবে। শুধু প্রশাসন ও পুলিশ নয়; উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে প্রকৌশলীরাও অবদান রাখছেন।
প্রকৌশলীদের পুলিশ ও প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেওয়ার প্রতিযোগিতায় সিভিল সার্ভিস সমৃদ্ধ হচ্ছে বলে দাবি করেন কয়েকজন কর্মকর্তা। মনজুরুল হক বলেছেন, একজন স্নাতক হিসেবে প্রশাসন পুলিশে যাচ্ছেন প্রকৌশলীরা, তা দূষণীয় নয়। তবে গত কয়েকটি বিসিএসে সমবায়, পরিবার পরিকল্পনা, ডাকের সাধারণ ক্যাডারে প্রকৌশলীদের যোগ দেওয়ার নজির নেই। এ প্রসঙ্গে ক্যাডার বদলে রেল থেকে প্রশাসনে আসা একজন যুগ্ম সচিব গণমাধ্যমে বলেছেন, ওই সব ক্যাডারে পদোন্নতি, ক্ষমতার দাপট, সামাজিক প্রতিপত্তি নেই। একই গ্রেডে চাকরি করেও জেলা প্রশাসকের তুলনায় নির্বাহী প্রকৌশলীরা নগণ্য বিবেচিত হন। একজন উপসচিব গাড়ি কিনতে ৩০ লাখ টাকা ঋণ পান। রক্ষণাবেক্ষণে মাসে ৫০ হাজার টাকা পান। এসব সুবিধাই বড় পার্থক্য তৈরি করছে।
১৯৯৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সওজের সিভিল সাব-ক্যাডারে ৭৮ কর্মকর্তা যোগ দিয়েছিলেন। তাদের ৫৮ জন এখন চাকরিতে রয়েছেন। বাকিরা চাকরি ছেড়েছেন কিংবা ক্যাডার বদল করেছেন। প্রশাসনে চলে যাওয়া একজন কর্মকর্তা জানান, সওজে থাকলে তৃতীয় গ্রেডও পেতেন না। রেল পুরকৌশল সাব-ক্যাডারের ১৩ ব্যাচের চারজনের তিনজনই চাকরিতে নেই।
পদ ছাড়া পদোন্নতির নজির পুলিশেও
গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রশাসন ক্যাডারের ২২ ব্যাচের ১৮২ জনসহ ২২১ কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব হয়েছেন। জনবল কাঠামো অনুযায়ী তৃতীয় গ্রেডের এ পদের সংখ্যা ৩৩২। পদোন্নতির যুগ্ম সচিবের সংখ্যা এখন ৯৪৬। পদ না থাকলেও সুপারনিউমারারি তথা সংখ্যাতিরিক্ত হিসেবে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তারা আগের পদেই (ইনসিটু) দায়িত্ব পালন করবেন। সওজ ও গণপূর্তের ২০ ব্যাচ এখনও পঞ্চম গ্রেডে রয়েছে। চতুর্থ গ্রেড পেরিয়ে তাদের তৃতীয় গ্রেড পেতে হবে। প্রশাসন ক্যাডার পঞ্চম থেকে সরাসরি তৃতীয় গ্রেড পায়।
পুলিশ ক্যাডার ৭২০টি সংখ্যাতিরিক্ত পদোন্নতির প্রস্তাব করে। ৩৪২টি সংখ্যাতিরিক্ত পদোন্নতি অনুমোদন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডে পুলিশের ১৫ ও ১৭ ব্যাচের ৩৪ জনের সংখ্যাতিরিক্ত পদোন্নতির প্রস্তাব করা হয়। প্রশাসন ক্যাডারে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ ১৪৩, কর্মরত ৪৮৯ জন। উপসচিব পদের সংখ্যা ৯৭৪। কর্মকর্তা রয়েছেন ১ হাজার ২১১ জন। সিনিয়র সহকারী সচিবের পদসংখ্যা ২ হাজার ৬৮৭। কর্মকর্তা রয়েছেন ১ হাজার ৬১৯ জন। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রশাসনে চাকরির বয়স ১০ বছর হলে অধিকাংশ সিনিয়র সহকারী সচিব উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে যান। চাকরিতে যোগ দেওয়ার ১১ বছরের মাথায় গত বছরের নভেম্বরে প্রশাসনের ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তারা পদ খালি না থাকলেও উপসচিব হন।
সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রশাসন ক্যাডারের ২৭০ কর্মকর্তা গত ১৪ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ গ্রেডের সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তাদের অধিকাংশ ৩৬ ব্যাচের কর্মকর্তা। এর পর পদোন্নতির দাবিতে পুলিশ ক্যাডারের ৩৫ ও ৩৬ ব্যাচের কর্মকর্তারা গত ২৬ সেপ্টেম্বর আইজিপির সঙ্গে দেখা করেন। অথচ রেল ক্যাডারের ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তারা সাড়ে ১১ বছর চাকরির পর গত জানুয়ারিতে নবম থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পান। প্রকৌশল ক্যাডারগুলোর ৩১ থেকে পরবর্তী ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন নবম গ্রেডে।
রেলে পদ খালি, পদোন্নতি নেইঃ
প্রশাসন ক্যাডারের ১১ ব্যাচের ২৪ জন সচিব হয়েছেন। অথচ রেলের মহাপরিচালক দশম ব্যাচের কর্মকর্তা হয়েও আছেন দ্বিতীয় গ্রেডে, যদিও তাঁর পদটি গ্রেড-১। নিয়োগবিধি অনুযায়ী, মহাপরিচালক পদে পদোন্নতি পেতে ২০ বছর এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে তিন বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। মহাপরিচালক কামরুল আহসান ৩২ বছর চাকরি এবং দ্বিতীয় গ্রেডে দুই বছর পূর্ণ করেও রয়েছেন চলতি দায়িত্বে। ৯ মাস আগে দায়িত্ব পেলেও তাঁর গ্রেড-১ প্রাপ্তি প্রক্রিয়াধীন।
রেলওয়ের বাণিজ্যিক ক্যাডারের দশম ব্যাচের আরেক কর্মকর্তা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় গ্রেড পেয়েছেন। রেলে গ্রেড-১ পদ একটি থাকায় বর্তমান মহাপরিচালকের অবসরের আগে ওই অতিরিক্ত মহাপরিচালকের পদোন্নতির সুযোগ নেই। রেল কর্মকর্তারা বলেছেন, পুলিশেও গ্রেড-১ পদ একটি। কিন্তু সেখানে ১৩ ব্যাচের তিনজন, ১৫ ব্যাচের একজনসহ মোট চারজন গ্রেড-১ পদে রয়েছেন।
রেলে অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং সমমানের গ্রেড-২ পদ রয়েছে ৯টি। এর একটি অডিট ক্যাডারের জন্য সংরক্ষিত। বাকি আটটি পদের বিপরীতে মহাপরিচালকসহ দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা আছেন চারজন। গত ২০ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতি পাওয়া পুরকৌশল সাব-ক্যাডারের মো. শহীদুল ইসলাম একই দিনে চাকরি থেকে অবসরে যান। রেলের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের পদে রয়েছেন দশম ব্যাচের সিগন্যাল সাব-ক্যাডারের অসীম কুমার তালুকদার। মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা এই কর্মকর্তা ২০০১ সালের ডিসেম্বরে পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতি পান। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পান তৃতীয় গ্রেড। অসীম কুমার গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘জ্যেষ্ঠদের আগেই সিনিয়র সিলেকশন স্কেল পরীক্ষায় পাস করি। কিন্তু জনবল কাঠামোতে ওপরের দিকে পদ কম থাকায় পদোন্নতিতে সময় লেগেছে। এ নিয়ে আফসোস থাকলেও দুঃখ নেই।’
রেলে প্রকৌশলীদের গ্রেড-৩ পদসংখ্যা ১৬। গ্রেড পেয়েছেন ছয়জন। বাকিরা চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। রেল প্রকৌশল ও ট্রাফিক ক্যাডার থেকে পূরণযোগ্য কমন গ্রেড-৩ চারটি পদের একটিতে প্রকৌশলী রয়েছেন। প্রকৌশলীদের গ্রেড-৪ পদসংখ্যা ৩১। ছয়টি চলতি দায়িত্ব দিয়ে পূরণ করা হয়েছে। পদ ফাঁকা থাকার কারণ সম্পর্কে ১৮ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা জানান, সব শর্ত পূরণের পরও পদোন্নতি আটকে যায় দুদকের অনাপত্তি জটিলতায়। মামলা নয়, ঠুনকো অভিযোগেও পদোন্নতি হয় না। অনাপত্তির মেয়াদ থাকে তিন মাস। পদোন্নতির প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড পর্যন্ত যেতে যেতে তা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেছেন, ক্যাডার কম্পোজিশন এবং নিয়োগবিধির কারণে পদোন্নতি জটিলতা রয়েছে। প্রশাসন উদ্যোগী হলে সমস্যা নিরসন সম্ভব।
সওজেও পদ খালিঃ
সওজে ৬৩৩টি ক্যাডার পদের বিপরীতে কর্মরত ৪৯৫ জন। সওজের প্রধান প্রকৌশলী গ্রেড-১ পদ। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর তিনটি পদ গ্রেড-২। কিন্তু চারটি পদই খালি। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা। তিনি ১৮ ব্যাচের ক্যাডার। তিনটি গ্রেড-২ পদ খালি থাকলেও প্রধান প্রকৌশলীসহ ১৮ ব্যাচের মেধাতালিকায় তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার পদোন্নতি প্রস্তাব অনুমোদন হচ্ছে না। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রশাসনের ১৮ ব্যাচ এখনও দ্বিতীয় গ্রেড পায়নি, যুক্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। অথচ প্রশাসনে পদোন্নতির অন্য ক্যাডার কোথায় আছে, দেখা হয় না। সওজে সিভিল সাব-ক্যাডারে গ্রেড-২ ও গ্রেড-৩ মিলিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদ ১৫টি। গ্রেড-৩ পাওয়া কর্মকর্তা রয়েছেন ১৪ জন। অর্থাৎ ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে তিনজন গ্রেড-২ পেলেও কেউ অবসরে না যাওয়া পর্যন্ত চতুর্থ গ্রেডের কেউ তৃতীয় গ্রেডের পদোন্নতি পাবেন না। মেকানিক্যাল সাব-ক্যাডারে তৃতীয় গ্রেডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদও শূন্য। ২০ ব্যাচের চতুর্থ গ্রেডের একজন কর্মকর্তা চলতি দায়িত্বে রয়েছেন।
২০১৩ সালের রিট মামলায় হাইকোর্ট প্রধান প্রকৌশলী পদ গ্রেড-১, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদ গ্রেড-২ এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদ গ্রেড-৩-এ উন্নীতের আদেশ দেন। সরকার এর বিরুদ্ধে আপিল করলেও গত ২৫ জুন রিভিউয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ রায় বহাল রাখেন। সওজের প্রকৌশলী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন বলেছেন, রায় বাস্তবায়ন না হলে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে।
সওজে সিভিল সাব-ক্যাডারে চতুর্থ গ্রেড তথা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর পদসংখ্যা ৩৯। এতেও রয়েছেন ১৮ ব্যাচ। এই ব্যাচের বাকি পাঁচ কর্মকর্তা এখনও পঞ্চম গ্রেডের নির্বাহী প্রকৌশলী, অর্থাৎ ২৪ বছরে পদোন্নতি পেয়েছেন দু’বার। ২১ ও ২২ ব্যাচের কর্মকর্তারা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে চলতি দায়িত্ব পালন করলেও তারা পঞ্চম গ্রেডের চাকুরে। প্রশাসনের এ দুই ব্যাচ তৃতীয় গ্রেড পেয়েছে। সওজের এই ব্যাচের কর্মকর্তাদের চতুর্থ গ্রেড পাওয়ার পর গ্রেড-৩ পেতে আরও কয়েক বছর লাগবে। তত দিনে সচিব হওয়ার দৌড়ে থাকবে প্রশাসন ক্যাডারের ব্যাচ।
সওজে সিভিল সাব-ক্যাডারে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর অনুমোদিত পদ ১৫ হলেও রয়েছেন ৩০ জন। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এ উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রকৌশলেও অতিরিক্ত পদোন্নতি রয়েছে। সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, বাড়তি ১৫ জন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে আছেন। কারণ, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিচালক পদটি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর। চলতি দায়িত্বের জন্য বাড়তি বেতন, পদোন্নতি হয় না। শামীম আল মামুন গণমাধ্যমে বলেছেন, পদ ছাড়াই পদোন্নতি কোনো ক্যাডারেই থাকা উচিত নয়। কিন্তু যদি একটি-দুটি ক্যাডারে দেওয়া হয়, তাহলে তা অন্যদেরও সুযোগ পাওয়া উচিত।
আদালতের রায়েও গ্রেড বাড়ছে না গণপূর্তেঃ
পদসংখ্যা বিবেচনায় গণপূর্ত সবচেয়ে বড় প্রকৌশল ক্যাডার। সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলীর গ্রেড-১ পদ। তবে বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার তৃতীয় গ্রেডে রয়েছেন। তিনি ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা। গণপূর্তে গ্রেড-২ পদ নেই। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদ গ্রেড-৩। এই গ্রেডের ১৬টি পদে রয়েছেন ১৫ ও ১৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা। ১৮ ব্যাচের একজন গ্রেড-৩ পেয়েছেন।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীরা গ্রেড-৪। এ গ্রেডের ৪৬টি পদে রয়েছেন ১৮ থেকে ২০ ব্যাচের কর্মকর্তারা। প্রশাসনের ১৮ ব্যাচ গ্রেড-২ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। গণপূর্তের ১৮ ব্যাচের গ্রেড-৩ পেতে লাগবে আরও কয়েক বছর। একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেছেন, একসঙ্গে চাকরি শুরু করেও প্রশাসনের চেয়ে পিছিয়ে পড়তে হয়, কনিষ্ঠদের অধীনে চাকরি করতে হয়। তাই প্রকৌশলীরা পেশা বদল করেন। রাষ্ট্রাচারে উপসচিব এবং তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের মর্যাদা নির্ধারণ করা হলেও সমান গ্রেডের প্রকৌশলীর কথা নেই।
গণপূর্তের মামলায় হাইকোর্ট দুই মাসের মধ্যে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী পদ গ্রেড-১, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদ গ্রেড-২ এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদ গ্রেড-৩-এ উন্নীত করার আদেশ দিয়েছিলেন। ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত সুপ্রিম কোর্টের রিভিউর রায়ে তা বহাল রয়েছে। তবে দুই বছর হতে চললেও রায় বাস্তবায়ন হয়নি। গত বছরের আগস্টে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, গ্রেড উন্নীত করতে অর্থ বিভাগের সম্মতি, প্রশাসনিক উন্নয়ন সচিব কমিটির অনুমোদন লাগবে।
একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর প্রশাসন অনুমতি দিতে বাধ্য। কিন্তু ঘোরানো হচ্ছে। গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী বলেছেন, রায় বাস্তবায়ন হলে পদোন্নতি সমস্যা থাকবে না।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের অনিয়ম ও দূর্নীতি
আরও সংবাদ পড়ুন।
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর সেখ মোহাম্মদ মহসিন এর অনিয়ম-দুর্নীতি