গণপূর্তের অডিটে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

Picsart_22-12-13_18-25-12-917.jpg

গণপূর্তের অডিটে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিবেদকঃ গৃহয়ান ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সরকারের প্রায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নমূলক বাস্তবায়ণকারী প্রতিষ্ঠান গৃহয়ান ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়িত কাজের অডিটে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি ধরা পড়েছে।

গত ২০২১-২২ অর্থ বছরের অডিট অধিদপ্তর থেকে
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রায় সারাদেশে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ ২৩টি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়িত কাজে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নানা অনিয়ম পাওয়া যায়। নিজ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভাগে অনিয়মের চিত্র উঠে
এসেছে।

রংপুর, আজিমপুর ও ইডেন গণপূর্ত বিভাগের অনিয়মঃ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত
অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীণ রংপুর গণপূর্ত সার্কেল ও নির্বাহী
প্রকৌশলী, আজিমপুর ও ইডেন গণপূর্ত কার্যালয়ের
২০২১-২২ অর্থবছরের সার্বিক কার্যক্রমের উপর অডিট
সম্পাদন কালে পরিলক্ষিত হয় যে, পিপিআর-২০০৮-এর
বিধি এবং অধিদপ্তরটির সাব-ডেলিগেশন অনুযায়ী
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা পরিহারের উদ্দেশ্যে একই কাজ খণ্ড খণ্ড করে ১ হাজার ২৮১ কোটি ৯৬ লাখ ৪৫ হাজার ৫৬৭ টাকা মূল্যের প্রাক্কলন অনিয়মিতভাবে অনুমোদন করা হয়েছে।

নিরীক্ষাকালে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের অনুমোদিত আরএপিপি
এবং প্রাক্কলন পর্যালোচনা করা হয়ে। পিপিআর ২০০৮-এর বিধি ১৭(১), অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষা অনুবিভাগের আর্থিক ক্ষমতা-২০১৫ সালের বিধান পরিপালন না করে প্রায় ১ হাজার ২৮২ কোটি টাকার কাজ খণ্ড খণ্ড অনুমোদন করা হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ক্রয় কাজ বিভক্তির উদ্দেশ্য হতে পারে
একটি একক অধিক ঠিকাদারকে সুবিধা প্রদান করা
অথবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবজ্ঞা করা। কাজগুলো কৃত্রিম বিভক্তির কারণে সমন্বয়হীনতা ও কারিগরি অসামঞ্জস্যতা দেখা যায় ও প্রক্রিয়া ব্যয় বৃদ্ধি পায়।

কোনো নিয়ম- নীতি না মেনে কাজগুলো বিভাজন
করা হয়েছে।

অডিট জবাব নিষ্পত্তির জন্য সহায়ক না হওয়ায় দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ পূর্বক পুনরায় অবহিত করতে বলা হয়। গণপূর্ত সার্কেল- ১ গণপূর্ত অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীণ
ঢাকা কার্যালয়ের সার্কেল-১-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর অধীনে ২০২১-২২ অর্থবছরের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর অডিট কমপ্লায়েন্স অডিট সম্পাদনকালে লক্ষ্য করেন যে, ভেরিয়েশনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ তৃতীয় পক্ষের মতামত গ্রহণ না করায় সরকারের প্রায় ৩৭ লাখ টাকা অনিয়মিত ব্যয় হয়েছে।

কাজের ডিপিপি, প্রাক্কলন, চুক্তিপত্র ও ভেরিয়েশন– সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে অডিট টিম উল্লেখ করে, রমনা পার্কের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ: প্রকল্প আইডি নম্বর-৬৯৩০৮৮ তারিখ ১৯ মে ২০২২ সালে মূল চুক্তি ২ কোটি ৬১ লক্ষ ৫৮ হাজার ২ শত ৪৪ টাকার ১৪.১১৮ শতাংশ বৃদ্ধিতে ৩৬ লাখ ৯৩ হাজার ১০৫ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পায়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি ৩০
নম্বর স্মারকে উল্লেখ করে, বিনিয়োগকৃত প্রকল্পের ক্ষেত্রে
ভেরিয়েশন যদি বেশি হয় সেক্ষেত্রে ঠিকাদার এবং
বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে ক্রস চেক করতে হবে।

প্রযুক্তিগতভাবে জটিল কার্যাবলীর ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ তৃতীয় পক্ষের মতামত গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা না মেনে ভেরিয়েশনের ক্ষেত্রে সেই মতামত গ্রহণ না করার ফলে সরকারের ৩৬ লাখ ৯৩ হাজার ১০৫ টাকা অনিয়মিত ব্যয় বা ক্ষতি সাধন হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

অডিটের জবাবে তৃতীয় পক্ষের মতামত গ্রহণ করার মতো প্রযুক্তিগত জটিলতা না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে মতামতের প্রয়োজন নাই উল্লেখ করলেও নিরীক্ষা মন্তব্যে অডিট নিষ্পত্তির বিষয়টি নাকচ করে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অডিটের জবাব নিষ্পত্তির সহায়ক নয়। এর ফলে, নিরীক্ষায় সুপারিশ করা হয় সরকারি অনিয়মিত ব্যয়ের সাথে
জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের।

অধিদপ্তরটিতে খোঁজ নিয়ে জানা
যায় অদ্যাবধি কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি।

অতিরিক্ত বিল পরিশোধঃ অধিদপ্তরটির ই/এম-৪, মিরপুর বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ-২ ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থ বছরের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর পরিচালিত অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিওকিউতে উল্লেখিত পরিমাণ বিল অপেক্ষা অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করা হয়। যার ফলে সরকারের ৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়।

বাস্তবায়িত কাজের টেন্ডার, বিওকিউ, এমবি এবং পরিশোধিত বিল-ভাউচার পর্যালোচনা করে অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ৪ টি কার্যালয়ের ঠিকাদারকে বিভিন্ন আইটেম থেকে অতিরিক্ত ৪ কোটি ৬৩ লক্ষ ৬৫ হাজার ৮৫১ টাকা বেশি পরিশোধ করা হয়েছে।

পিপিআর-২০০৮ এর বিধি-১২৭(২) লঙ্ঘন করে পেশাগত অসদাচরণ প্রকাশ করা হয়। অডিটের জবাব নিষ্পত্তির সহায়ক না হওয়ায় অতিরিক্ত পরিমাণ রেকর্ড বিল আদায় করে তার প্রমাণসহ পরবর্তী জবাব চেয়েছেন অডিট প্রতিনিধি দল।

এ বিষয়ে আজিমপুর ডিভিশন থেকে জানানো হয়, অডিট চলাকালীন প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কাগজপত্র সরবরাহের পর আপত্তি জানালে পরবর্তীতে আমরা বিস্তর কাগজপত্র জমা দেই।

সার্কেল-১-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামিলুর রহমান বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়ার জবাব দিয়েছি। আপত্তি জানালে চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করা হবে।

প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার বলেন, অডিটের বিষয়গুলোর মধ্যে কিছু মাঠ পর্যায়ে শেষ হয়, গুরুতর বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গণপূর্তেও নিজস্ব অডিট
টিমের সাথে সমন্বয় করে নিষ্পত্তি করে। তবে সেক্ষেত্রে অনেকেই সময়মতো জবাব না দেওয়ায় সরকারি অডিট টিমের সাথে সমন্বয়হীনতার অভাব দেখা দেয়। এজন্য অতিদ্রুত আমরা একটি ডাটাবেজ সফটওয়্যার চালু করব যাতে করে সময় অপচয় রোধ ও অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয়।

বিস্তারিত থাকছে পরের পর্বে….

আরও সংবাদ পড়ুন।

হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিজি আশরাফুল আলম ও তার স্ত্রী’র বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আরও সংবাদ পড়ুন।

গণপূর্তের প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ও তার স্ত্রী গোপা দের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট

আরও সংবাদ পড়ুন।

গণপূর্ত অধিদফতরের সিন্ডিকেট! ৪ প্রকৌশলীর অনিয়ম ও দুর্নীতি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top