দুদকে হাজির বিটিভির সাবেক জিএম মাহফুজা; অভিযোগ কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

Picsart_24-01-28_20-16-15-323.jpg

আজ মঙ্গলবার সকালে দুদকে হাজির হলেন বিটিভির সাবেক জিএম মাহফুজা আক্তার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

সাগর চৌধুরীঃ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ও বর্তমান কন্ট্রোলার/প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার ঘুষ, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

তিনি শিল্পী, কলাকুশলী, ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ও অনুষ্ঠান না বানিয়েই বিলের কোটি টাকা উত্তোলন করে গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশে-বিদেশে বিশাল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন।

এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফলে তার বিরুদ্ধে জোরালোভাবে অনুসন্ধান শুরু করেছেন দুদক কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আজকে তাকে দুদকে তলব করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে তাকে নোটিশ পাঠিয়েছেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক নাঈমুল ইসলাম।

আজ মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর ২০২৪) সকালে দুদক প্রধান কার্যালয়ে মাহফুজাকে হাজির হতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার তলবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম।

দুদক সূত্র জানায়, মাহফুজা আক্তারের বিরুদ্ধে ১৩২ পৃষ্ঠার বিস্তর অভিযোগ দুদকে এসেছে। অভিযোগ যাচাই ও দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিটের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের আমলযোগ্যতা পাওয়া যায়। ফলে কিছুদিন আগে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। 

অভিযোগ অনুযায়ী, মাহফুজা আক্তারের প্রায় ৪০০ কোটি টাকার অর্থ-সম্পদের মধ্যে শুধু কানাডার টরন্টোয় বাংলা টাউনের ৮ নম্বর রোডে ৩ মিলিয়ন ডলার দিয়ে একটি বাড়ি কিনেছেন। এ ছাড়া ঢাকা ও রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদ।

এর মধ্যে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এফ ব্লক, ১১ নম্বর রোডের ৪৩০ নম্বর প্লটে আপন আঙ্গিনা-মাহফুজা’স প্যারাডাইস নামে আট তলাবিশিষ্ট অট্টালিকা রয়েছে।

এ ছাড়া গুলশান-নিকেতনে তিন হাজার স্কয়ার ফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, রামপুরা-বনশ্রীতে প্রায় আড়াই হাজার স্কয়ার ফুটের আরেকটি ফ্ল্যাট, রংপুরের মিস্ত্রিপাড়ায় সাত কাঠা জমিতে ছয়তলা বাড়ি, নিউ জুম্মাপাড়ায় আরও দুটি একই ধরনের বাড়ি, গঙ্গাচড়ার গজঘণ্টা এলাকায় একটি পেট্রলপাম্প ও কয়েক বিঘা জমি এবং দুটি দামি প্রাইভেট কার রয়েছে তার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, মাহফুজা আক্তার ২০২২-২৩ অর্থবছরে অনুষ্ঠান নির্মাণের নামে বাজেটের অতিরিক্ত ১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা কোনো প্রকার অনুমোদন না নিয়েই খরচের নামে আত্মসাৎ করেন।

সাপ্তাহিক ও ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ আদেশে মো. মোহসীন সরদারের নামে নাটক নির্মাণ ও প্রচার দেখিয়ে ভুয়া শিল্পী সম্মানী বাজেট তৈরি করে ৯১ লাখ ৮ হাজার ৩৫১ টাকা আত্মসাৎ করেন।

৩৪৩টি বড় বাজেটের বিল নিজেরাই পাস করিয়ে ৪৭ লাখ ১৩ হাজার টাকা নামে-বেনামে তুলে আত্মসাৎ করেন। বিভিন্ন নাটকের প্রযোজক হয়ে ভুয়া নামে চেক ইস্যু করে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ১২ লাখ ২২ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এ ছাড়া ‘জাইকা’র এইচডি প্রকল্পের পিডি হয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। 

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নাঈমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত তলবি চিঠি দেওয়া হয়।

গত জানুয়ারিতে মাহফুজার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ২১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।


দুদক সূত্রে জানা গেছে, জিএম মাহফুজা আক্তারের ব্যক্তিগত নথির সত্যায়িত ফটোকপি, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেটের তথ্য এবং বাজেট ব্যয়ের পর বছর শেষে দাখিলকৃত প্রতিবেদনের কপি, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জিএমের বাংলো মেরামতের খরচের তথ্য: কাজের নাম, বিলের পরিমাণ, বিল গ্রহীতার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রে কতগুলো সাপ্তাহিক ও ধারাবাহিক নাটক এবং অনুষ্ঠান নির্মাণ হয়েছিল সেসবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নাটক ও অনুষ্ঠানের নাম, প্রযোজকের নাম, বিল গ্রহীতার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে গত ২০১৪-১৯ পর্যন্ত বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রে মাহফুজা আক্তারের প্রযোজনাকৃত ধারাবাহিক ও সাপ্তাহিক নাটকের নাম, বিলের পরিমাণ, বিল গ্রহীতার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর চাওয়া হয়েছে।

২০০৭ সালে পিএসসি’র মাধ্যমে প্রযোজক হিসেবে বিটিভিতে যোগদান করেন মাহফুজা আক্তার। ২০২২ সালে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করেন।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে যোগদান করেন। তাকে চলতি দায়িত্বে জিএম হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ৬ মাসের জন্য।

মাহফুজার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

আরও সংবাদ পড়ুন৷

মাহবুবুল আলম বিটিভির নতুন মহাপরিচালক

আরও সংবাদ পড়ুন৷

ইশরাত জাহান কেয়া বিটিভির নতুন জিএম

আরও সংবাদ পড়ুন৷

সরকারের ২১ কোটির টাকা আত্মসাৎ – বিটিভির জিএম মাহফুজার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

আরও সংবাদ পড়ুন৷

বাংলাদেশ টেলিভিশন এর প্রধান প্রকৌশলী’র বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে – দুককের অভিযান

আরও সংবাদ পড়ুন৷

মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপ-মহাপরিচালক

আরও সংবাদ পড়ুন।

তরুণরাই স্মার্ট বাংলাদেশের অভিযাত্রার সূর্য সারথি : তথ্য ও সম্প্রচার সচিব হুমায়ুন কবীর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top