বিটিভি’র চট্টগ্রাম কেন্দ্রে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ; ভুয়া অনুষ্ঠান দেখিয়ে বিল উত্তোলন

Picsart_24-09-16_13-05-36-767.jpg

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":[],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":false,"containsFTESticker":false}

বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ; ভুয়া অনুষ্ঠান দেখিয়ে বিল উত্তোলন

লুটপাটের অবাধ ক্ষেত্র বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র,ক্যামেরা ও ড্রোন ভাড়ার নামে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ,লুটপাটের অবাধ ক্ষেত্র বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র, ভুয়া অনুষ্ঠান দেখিয়ে বিল উত্তোলন

অপরাধ প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের একটি অনুষ্ঠানের নাম ‘রান্না কথন’। এর প্রযোজক কন্ট্রোলার বা প্রোগ্রাম ম্যানেজার রোমানা শারমিন। ৫ সেপ্টেম্বর প্রচারিত ২৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন একজন উপস্থাপক ও একজন আলোচক। অথচ বিল করা হয়েছে ১২ জনের নামে। এর মধ্যে আটজনই আলোচক। বিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, উপস্থাপিকা ২ হাজার টাকা, আলোচক ৩ হাজার ও অনুষ্ঠান সহকারী দু’জন ৪ হাজার ৩৩২ টাকা সম্মানী পেয়েছেন। একটি রান্নার অনুষ্ঠানে আটজন আলোচক থাকার বিষয়টি অবাস্তব বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সব মিলিয়ে এই অনুষ্ঠানে সর্বমোট ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও বিল করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৩২ টাকা। 

মহেশখালীর ধলঘাটা দ্বীপ নিয়ে ‘দ্বীপ দর্পণ’ অনুষ্ঠানের প্রচার দেখানো হয়েছে ২ আগস্ট। বাজেট ৯৯ হাজার ৪১০ টাকা। এই অনুষ্ঠানে উপস্থাপক, নেপথ্যে ধারা বর্ণনাকারী ছাড়াও সাক্ষাৎকার প্রদানকারী হিসেবে ১৮ জনের নামে প্রায় ৭০ হাজার টাকা বিল করা হয়েছে।

বাজেটে ‘দ্বীপ দর্পণ’ অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি ২৫ মিনিট উল্লেখ থাকলেও প্রচারিত অনুষ্ঠানের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৫.১৭ মিনিট। ৫ মিনিটের অনুষ্ঠানে ১৮ জনের সাক্ষাৎকার প্রচারও অবাস্তব বলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এভাবেই বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রে শিল্পী সম্মানীর নামে অর্থ লোপাট অনেকটা ওপেন সিক্রেট। সাবেক জিএম আনোয়ার হোসেন রঞ্জু ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার রোমানা শারমিনের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গত দেড় বছরে অনুষ্ঠানমালার বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ প্রায় ৬ কোটি টাকা লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিয়মিত অনুষ্ঠান ধারণ ও প্রচার প্রায় বন্ধ থাকলেও ২ কোটি ২০ লাখ টাকা বাজেট করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেড় কোটি টাকা উত্তোলনও করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ২০২২-২৩ অর্থবছরে অনুষ্ঠান শাখার বাজেট ছিল ৮ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিএম নুর আনোয়ার হোসেন রঞ্জুর সময় বাজেট বেড়ে হয়েছে ১৩ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজেট ৫ কোটি টাকা বাড়লেও অনুষ্ঠানের সংখ্যা ও মান ছিল নিম্নমুখী। 

অর্থ লুটপাটের জন্য প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানের বাজেট বাড়ানো হয়েছে কয়েক গুণ। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ৩৪৩টি বিশেষ অনুষ্ঠান নির্মাণে খরচ হয় ৪৭ লাখ ১৩ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে শুধু ১০৬টি বিশেষ অনুষ্ঠান নির্মাণে মোট বাজেট ছিল ৬১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এক বছরের ব্যবধানে গড়ে প্রতিটি অনুষ্ঠানের বাজেট চার গুণ বেড়েছে। 

এ বিষয়ে সাবেক জিএম আনোয়ার হোসেন রঞ্জু বলেন, ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান তৈরিতে আমি অর্থ সাশ্রয় করেছি, আত্মসাৎ নয়। আমার সময়ে টেলিভিশনে কোনো সিন্ডিকেট ছিল না, এগুলো সব অপপ্রচার।’

‘দ্বীপ দর্পণ’ অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে অতিথি প্রযোজক সাখাওয়াত হোসেন মিঠু বলেন, ‘অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি কমবেশি হতে পারে। কিন্তু সময় কমলেও কোয়ালিটি নিয়ে আপস করিনি। অনুষ্ঠানে যাদের সাক্ষাৎকার প্রচার হয়েছে, কেবল তাদের নামেই বিল করা হয়েছে।’ 

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক জিএম নিতাই কুমার ভট্টাচার্য ও মাহফুজা আক্তার, মনোজ সেন গুপ্ত, জাঁ নেসার ওসমানের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। মাহফুজার বিরুদ্ধে ২১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের যাত্রা। গত ৩০ বছরে চট্টগ্রাম কেন্দ্র লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ।

যেভাবে লুটপাট হতো টাকা 
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রে বহির্দৃশ্য ধারণের জন্য দুটি ক্যামেরা রয়েছে। রয়েছে প্রয়োজনীয় জনবলও। কিন্তু ওই ক্যামেরাগুলো অকেজো দেখিয়ে বাইরে থেকে বেশি টাকায় ক্যামেরা, ড্রোনসহ নানা উপকরণ ভাড়া নেওয়ার দাবি করা হতো। এই ব্যয়কে শিল্পী সম্মানী হিসেবে দেখানো হতো। এভাবে দু’জনের অনুষ্ঠানে আটজন, চারজনের অনুষ্ঠানে ১৫-২০ জন  আলোচক ও সাক্ষাৎ প্রদানকারীর নামে বিল করা হতো। আলোচক ও সাক্ষাৎকার প্রদানকারীরা মূলত সিন্ডিকেটের লোক ছিলেন। এসব বহিরাগত শিল্পী সম্মানীর চেক নিয়ে টাকা উত্তোলন করে এর বড় অংশ প্রযোজক বা সংশ্লিষ্টদের কাছে ফেরত দিতেন বলে জানা গেছে। এভাবে একেকটি অনুষ্ঠানে প্রয়োজনের তিন-চার গুণ বিল করে টাকা আত্মসাৎ করা হতো।

রোমানা শারমিন ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ‘সংকল্প’ শীর্ষক  ১৩ পর্বের একটি ধারাবাহিক নাটককের জন্য ৯ লাখ টাকা বাজেট দেখিয়েছেন। ওই নাটক নির্মাণই করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। 

এ বিষয়ে রোমানা বলেন, ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রে অনুষ্ঠান ধারণের লোকবল ও উপকরণের ঘাটতি আছে। বহির্দৃশ্য ধারণে ক্যামেরা, ড্রোন, লাইট, গাড়িসহ নানা কিছু ভাড়া করতে হয়। কিন্তু বিল করতে হয় শিল্পী সম্মানী হিসেবে।’ প্রডাকশন খরচ কেন শিল্পী সম্মানী হিসেবে বিল করা হবে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই রীতি আগে থেকেই চলে আসছে। তবে প্রডাকশন খরচকে শিল্পী সম্মানী হিসেবে দেখানো উচিত হয়নি। এখানে সংস্কার দরকার।’

অনুষ্ঠানের নামে লুটপাটের চিত্রঃ চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রচারিত ৩১ পর্বের ‘বিজয় গাথা অনুষ্ঠান’ নির্মাণে বাজেট ছিল ১২ লাখ টাকা। অথচ ২০২২ সালে ৩১ পর্বে খরচ হয়েছিল মাত্র ৪ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে ‘বদলে গেছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে সরকারের উন্নয়ন প্রচারধর্মী ৯৮ পর্বের অনুষ্ঠানে খরচ দেখানো হয় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ফুটেজ দিয়ে এসব অনুষ্ঠানের বেশির ভাগ টাকাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। 

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নির্মিত অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে অভিনেতা জায়েদ খানসহ বিভিন্ন শিল্পীকে আনা হয়। এক দিনের অনুষ্ঠানে বাজেট দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। এ থেকে অন্তত ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।  চট্টগ্রামের জনপ্রিয় শিল্পী কল্যাণী ঘোষ বলেন, ‘চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রের বর্ষপূর্তিতে ঢাকা থেকে শিল্পী এনে অনুষ্ঠান করা হয়েছে, অথচ চট্টগ্রামের কোনো গুণী শিল্পীকে দাওয়াতই দেওয়া হয়নি। চট্টগ্রামের শিল্পীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।’ 

তবে, এই বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রে যোগাযোগ করা হলে, জানানো হয় তারা এখন আর এখানে নেই। তবে, ঢাকা কেন্দ্রে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, এখনো তারা যোগদান করেন নি।

আরও সংবাদ পড়ুন।

বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জিএম নূর আনোয়ার হোসেন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ

আরও সংবাদ পড়ুন।

বাংলাদেশ টেলিভিশন এর প্রধান প্রকৌশলী’র বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে – দুককের অভিযান

আরও সংবাদ পড়ুন।

সরকারের ২১ কোটির টাকা আত্মসাৎ – বিটিভির জিএম মাহফুজার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

আরও সংবাদ পড়ুন।

গণমাধ্যমকে জরুরি সেবাখাত হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে: ড. ইফতেখারুজ্জামান

আরও সংবাদ পড়ুন।

ইশরাত জাহান কেয়া বিটিভির নতুন জিএম

আরও সংবাদ পড়ুন।

মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপ-মহাপরিচালক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top