স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ জালিয়াতি – নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিচালকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

Picsart_22-10-24_18-45-10-348.jpg

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ জালিয়াতির – নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিচালকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সাগর চৌধুরীঃ সারাদেশের আলোচিত ঘটনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ জালিয়াতির কারণে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিচালকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।

আসামী ১) ডাঃ শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম (৬০), সাবেক পরিচালক (প্রশাসন), সভাপতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনী নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম-শ্রীরামকান্দি, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।

(২) ডাঃ আ.ফ.ম. আখতার হোসেন, সাবেক
উপপরিচালক (প্রশাসন), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা, পিতা: মো: মোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার, বর্তমানে উপপরিচালক, ন্যাশনাল ইনষ্টিউট অব কিডনি ডিসিসেস এন্ড ইউরোলজি, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭।

(৩) মোঃ হারুনুর রশিদ (৫৮), সিনিয়র সহকারী শিক্ষক, খিলগাও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা এবং

(৪) অধ্যাপক মোঃ শওকাত আলী, চেয়ারম্যান, ফলিত গণিত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।

গণ পরস্পর যোগসাজসে অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে খাতা প্রনয়ণ ও খাঁটি হিসেবে ব্যবহার এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ করে অফিসিয়ালি সরবরাহকৃত উত্তরপত্র বর্তমানে থাকা উত্তরপত্র দ্বারা কোন এক পর্যায়ে প্রতিস্থাপিত করে দন্ডবিধি ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭(ক) ও ১৯৪৭সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শান্তিযোগ্য অপরাধ করায় দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো: ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জরুরী প্রয়োজনে বিভিন্ন হাসপাতাল/মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১২০০টি, মেডিকেল টেকনেশিয়ান ১৬৫০টি এবং ক্যার্ডিওগ্রাফারের ১৫০টি পদসহ মোট ৩০০০(তিন হাজার) পদ রাজস্বখাতে পদ সৃজন নবসৃজিত ৩০০০টি পদের মধ্যে ২০২টি পদ বাদ দিয়ে ২৭৯৮টি শূন্য পদে জনবল নিয়োগের জন্য ২৩ জুলাই ২০২০ তারিখে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়।

গত ৩০.০৬.২০২০ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তিনটি আলাদা আলাদা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ০৫ জুলাই, ২০২০ থেকে অনলাইন আবেদন শুরু হয় এবং ২০ জুলাই, ২০২০ তারিখে শেষ হয়। মোট ৭২,৬১৫ জন প্রার্থী আবেদন করেন। আবেদনকারী ২৩,৫২২ জনের অনুকূলে অনলাইনে টেলিটকের মাধ্যমে প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়।

লিখিত পরিক্ষা গ্রহনের নিমিত্ত লিথোকোড সম্বলিত খাতা প্রনয়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গনিত বিভাগের চুক্তি হয়।

চুক্তি মোতাবেক অধ্যাপক মোঃ শাওকাত আলী, চেয়ারম্যান, ফলিত গণিত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার খাতা তৈরী (লিথোকোডসহ), কক্ষ ভিত্তিক খাতা প্যাকেট করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ কমিটির নিকট প্রেরণ করেন। নিয়োগ কমিটি পরিক্ষা গ্রহনের পূর্বদিন রাতে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে প্রশ্নপত্র প্রনয়ণ করেন।

অতপর লিথোকড সম্বলিত খাতা, প্রশ্ন, হাজিরা শীট কেন্দ্র ভিত্তিক সিলগালা করে ট্রাঙ্গে রেখে তালা সিলগালা করেন।

পরিক্ষার দিন সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক মনোনীত কেন্দ্র ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিলগালাকৃত ট্রাঙ্ক বুঝে নিয়ে বাহন মারফত কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের নিকট বুঝে দেন।

আরও সংবাদ পড়ুন।

জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটে অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্য – দুদকের অভিযান

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই নিয়োগ পরীক্ষা নিম্নলিখিত তারিখ ও সময়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।

ক) মেডিকেল টেকনোলজিস্ট: পরীক্ষার তারিখঃ ১২/১২/২০: পরীক্ষার সময়ঃ সকাল ১০টা- ১২টা

খ) মেডিকেল টেকনেশিয়ান ১) মেডিকেল টেকনেশিয়ান (ইসিজি): পরীক্ষার তারিখঃ ১৮/১২/২০: সময়ঃ সকাল ১০.৩০টা- ১২.০০ টা ২) মেডিকেল টেকনিশিয়ান (এনেসথেশিয়া, ডায়ালায়সিস, কার্ডিওগ্রাফার, বায়োমেডিকেল, ইটিটি, পারফিউশনিষ্ট, সিমুলেটর, অর্থোপেডিক্স, ইকো): পরীক্ষার তারিখঃ ১৯/১২/২০: সময়ঃ সকাল ১০.৩০টা- ১২.০০ টা।

মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও কার্ডিওগ্রাফার পদে নির্দিষ্ট দিন লিখিত পরিক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগন কেন্দ্র হতে খাতা, লিথোকডের ছেঁড়া অংশ এবং প্রশ্ন বুঝে নিয়ে বাহন মারফত অধিদপ্তরে নিয়ে আসেন এবং নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব উপপরিচালক আ.খ.ম. আক্তার হোসেন এর নিকট জমা প্রদান করেন।

সদস্য সচিব সমুদয় খাতা বুঝে নিয়ে একই দিন মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট ও মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান (ইসিজি) সংশিষ্ট খাতা মূল্যায়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গনিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো: শাওকত আলী এর নিকট প্রদান করেন এবং মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান (অন্যান্য) পদের লিখিত খাতা মূল্যায়নের জন্য খিলগাও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো: হারুনুর রশিদ এর নিকট প্রদান করেন। লিখিত পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর রাতে কতিপয় সিন্ডিকেট চক্র পুনরায় নতুন খাতায় প্রশ্ন উত্তর লিখে মো: হারুনুর রশিদ ও মো: শাওকত আলী এর সহোযোগীতায় অফিসিয়ালি সরবরাহকৃত কিছু কিছু উত্তরপত্র বর্তমানে থাকা উত্তরপত্র দ্বারা প্রতিস্থাপন করেন।

টেকনেশিয়ান ও টেকনোলজিস্ট পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪৪৫৩টি খাতা, টেবুলেশন শীট ও অন্যান্য ডকুমেন্টস পরীক্ষান্তে ২৪১১টি উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিংয়ের ছিদ্র ও পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন প্রকারের সংকেত লক্ষ্য করা গিয়েছে।

এছাড়া চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ২৫৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮০০ জন পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিংয়ের ছিদ্র ও পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন প্রকারের সংকেত লক্ষ্য করা গিয়েছে। ২৪১১টি উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিংয়ের ছিদ্র ও পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন প্রকারের সংকেত সংক্রান্তে চাকুরীপ্রার্থিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা কোন সঠিক তথ্য প্রদান করেননি। তবে গোপনীয় অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজসে চাকুরীপ্রার্থিদের নিকট হতে ক্ষেত্রবিশেষে ১৫-২০লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদানের শর্তে জালজালিয়াতির আশ্রয় গ্রহন করা হয়।

এমতাবস্থায়, ১) ডাঃ শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম, সভাপতি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনী নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি ও সাবেক পরিচালক (প্রশাসন), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত), পিতাঃ মৃত- এসএমএ শহিদ, মাতাঃ মৃত ফিরোজা বেগম, বর্তমান ঠিকানঃ বাড়ি নং-৪৩, রোড নং-১৮, সেক্টর ১৮, উত্তরা, ঢাকা, স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম-শ্রীরামকান্দি, টুঙ্গিপাড়া,
গোপালগঞ্জ,

(২) ডাঃ আ.ফ.ম. আখতার হোসেন, সদস্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনী নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি ও সাবেক উপপরিচালক (প্রশাসন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা, বর্তমানে উপপরিচালক, ন্যাশনাল ইনষ্টিউট অব কিডনি ডিসিসেস এন্ড ইউরোলজি, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭। আবাসিক ঠিকানা: ফ্ল্যাট-বি-৬, বাড়ি-৩, সেক্টর-৪, উত্তরা, পিতা: মো: মোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার, স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম: চাদপুর, পোষ্ট: হাটশশীগঞ্জ, উপজেলা: তজুমদ্দিন, জেলা: ভোলা,

(৩) মোঃ হারুনুর রশিদ, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক, খিলগাও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা, পিতাঃ মোঃ কামরুল ইসলাম, মাতাঃ ফাতেমা বেগম, গ্রাম-গিলাবের আজকিতলা, ডাকঘরঃ কুমারটেক, শিবপুর, নরসিংদী

এবং

(৪) অধ্যাপক মোঃ শাওকাত আলী, চেয়ারম্যান, ফলিত গণিত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিতা: মো: ফরমান আলী, ঠিকানা: গ্রাম-সোনাকান্দার, পোষ্ট+উপজেলা- পীরগঞ্জ, জেলা- রংপুর পরস্পর যোগসাজসে অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে খাতা প্রনয়ণ ও খাঁটি হিসেবে ব্যবহার এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ করে অফিসিয়ালি সরবরাহকৃত উত্তরপত্র বর্তমানে থাকা উত্তরপত্র দ্বারা কোন এক পর্যায়ে প্রতিস্থাপিত করায় দন্ডবিধি ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭(ক) ও ১৯৪৭সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আরও সংবাদ পড়ুন।

বন্ড লাইসেন্সে রাজস্ব ফাঁকি – ফাঁসলেন ১০ কাস্টমস কর্মকর্তা সহ ১৩ জন

আরও সংবাদ পড়ুন।

১০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অপরাধে উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলামকে আটক করেছে দুদক

আরও সংবাদ পড়ুন।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এস.কে সিনহার আমেরিকার বাড়ি ক্রোকের আদেশ; শীঘ্রই এমএলএআর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top