উড়োজাহাজ লিজে ১১০০ কোটি টাকার অনিয়ম
বিমানের পরিচালকসহ ৮ কর্মকর্তাকে তলব
বিশেষ প্রতিবেদকঃ ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজের নামে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক পরিচালক ও তিন জিএমসহ আট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পৃথক নোটিশে তাদেরকে আগামী ১১ ও ১২ অক্টোবর হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
তবে তলবকৃতদের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ আর এম কায়সার জামানকে ১১ অক্টোবর হাজির হওয়ার নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি বিশেষ বিবেচনায় গত ২ অক্টোবর হাজির হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। ঐ দিন দুদকের উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হক ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত অনুসন্ধান টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর আগে একই অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চার কর্মকর্তাকে গত ২০ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
তলবকৃতদের মধ্যে এ আর এম কায়সার জামান ছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের ম্যানেজার (প্লানিং) মোহাম্মদ আজাদ রহমান, প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার জি এম ইকবাল ও লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্সের জিএম আজরা নাসরিন রহমানকে আগামী ১১ অক্টোবর হাজির হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কস্ট অ্যান্ড বাজেট বিভাগের জিএম সি এম খায়রুল আলম, কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস এ এস এম মঞ্জুর ইমাম, চিফ অব টেকনিক্যাল হাসান ইমাম, করপোরেট প্লানিং বিভাগের জিএম মো. বেলায়েত হোসেন এবং ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড মেশিন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক এম এম আসাদুজ্জামানকে আগামী ১২ অক্টোবর হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে নোটিশে।
দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্তে অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। স্থায়ী কমিটির পাঠানো প্রতিবেদনের আলোকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মিশরীয় দুটি বিমান লিজ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, মিশরীয় দুটি বিমান লিজ চুক্তির ও দরপত্রের স্পেসিফিকেশনে কোনো দুর্বলতা আছে কি না এগুলো খতিয়ে দেখছে দুদক টিম। প্রয়োজনে এর সঙ্গে জড়িত অন্য কর্মকর্তাদেরও পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
দুদুক সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর নামে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কিন্তু বছর যেতে না যেতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখার জন্য ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ঐ ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে।
এতসব প্রক্রিয়ায় ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানিকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের গচ্চা দিতে হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।