ভোলায় খাল সংস্কারে অনিয়ম করলে নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা – নির্বাহী প্রকৌশলী

ভোলায় খাল সংস্কারে অনিয়ম করলে নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা – নির্বাহী প্রকৌশলী

আকতারুল ইসলাম আকাশঃ ভোলা সদর উপজেলা ২নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নে অবস্থিত কুমাইরা খাল সংস্কারে ব্যাপক অনিয়ম করায় সংস্কার বিল উত্তোলন আটকিয়ে দিয়েছেন ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভোলা সদর উপজেলা ২নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নে অবস্থিত কুমাইরা খালের ২ কিলোমিটার সংস্কার করার কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রুপালী কনস্ট্রাকশন। রুপালী কনস্ট্রাকশন থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজটি কিনে নেয় রুবেল কামাল ও জামাল সহ ৭ ব্যক্তি।

গতবছরের জানুয়ারি মাসে খালটি সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। ওই বছরেরই মার্চ মাসে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে কাজটি সমাপ্ত ঘোষণা করে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে কাজটি হস্তান্তর করতে গিয়ে দেখা যায় সংস্কারে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। যাঁর ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজটি বুঝিয়ে না নিয়ে অনিয়ম করা হয়েছে মর্মে কাজটি পুনরায় কার্যাদেশ অনুযায়ী সঠিকভাবে সংস্কার করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সাথে সংস্কার বিল উত্তোলন বন্ধ করে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি খালটি পুনরায় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এখনও সেই কার্যাদেশ অনুযায়ী সঠিকভাবে সংস্কার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দুইটি এক্সকাভেটর দিয়ে খালের তলদেশের মাটি কেটে তা খালের পাড়ে রাখা হচ্ছে। যাঁর ফলে বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টিতে ওই মাটি খালে গড়িয়ে পড়ে পলি জমার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়াও কার্যাদেশ অনুযায়ী খালটির গভীরতা ও প্রশস্ত সঠিকভাবে করা হচ্ছে না।

দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা কাটিয়ে ভোলা সদর উপজেলা ২নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের কৃষিজমির চাষাবাদের সুবিধার জন্য সরকার খালটি সংস্কারে প্রায় ৩৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়।

অভিযোগ রয়েছে, কার্যাদেশ অনুযায়ী খালটি গভীর ও প্রশস্ত করা হচ্ছে না। জানা যায়, ইউনিয়নটির গুপ্তমুন্সী গ্রামের রাস্তা মাথা বিল থেকে উৎপত্তি হওয়া কুমাইরা খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। একসময় এ খালের পানিতেই ওই ইউনিয়নের কৃষকরা বোরো জমিতে সেচ দিত। দীর্ঘদিন সংস্কারহীন থাকায় পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায় খালটি। ফলে আবাদ মৌসুমে খালটি পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। আবার বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহিত না হওয়ার ফলে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। পানি আটকে থাকায় চাষাবাদ ব্যাহত হয়।

সংবাদকর্মীরা খাল খনন এলাকায় গেলে শত শত কৃষক জড়ো হয়ে এ নিয়ে নানা অভিযোগ করে। কৃষকদের অভিযোগ, খালটি খননের নামে অনিয়ম হচ্ছে। কার্যাদেশ অনুসারে খালটি গভীর ও প্রশস্ত করা হচ্ছে না।

গুপ্তমুন্সী গ্রামের মো. রাসেল বলেন, গতবছর খালটি খনন করা হয়েছিল। তখন কাজে অনিয়ম হয়েছিল। যাঁর কারনে এখন আবারও পুনরায় খনন করা হচ্ছে। তবে এখনও কার্যাদেশ অনুযায়ী খনন করা হচ্ছে না।

কৃষকরা জানায়, এক্সকাভেটর দিয়ে খালের তলদেশের মাটি যেভাবে পারে ফেলা হচ্ছে, ভারি বর্ষণে সেই মাটি আবারও খালে ধসে পড়তে পারে। এলাকাবাসী বারবার এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করলেও কেউ তোয়াক্কা করছে না।

ওই গ্রামের সেলিম উদ্দিন খান বলেন, সঠিকভাবে খাল খনন না করলে সরকার বা কৃষকের লাভ হবে না। ঠিকভাবে কাজ না করলে এলাকাবাসী এ নিয়ে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।

নকশা অনুযায়ী খালের তলদেশে এলাকা ভেদে গভীরতা ধরা হয়েছে এক দশমিক আট মিটার বা পাঁচ ফুট। আবার কোথাও ছয় ফুটও নির্ধারণ করা আছে। এ ছাড়া প্রশস্ত ১০ মিটার বা ৩৩ ফুট করার কথা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গতবছর পাঁচ-ছয় ফুটের স্থলে দু-তিন ফুট মাটি তুলেছেন। এ ছাড়া প্রশস্তও করা হয়েছে কম। নিয়মানুযায়ী খননকাজের সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লোকজনের নিয়মিত তদারকি ছিল না।

বর্তমানে কাজটির দায়িত্বে থাকা মো. কামাল হোসেন জানান, গতবছর খালটি কার্যাদেশ অনুযায়ী খনন করা হয়নি। খনন কাজে অনেক ঘাটতি ছিল। যাঁর ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিল উত্তোলন বন্ধ করে পুনরায় কার্যাদেশ অনুযায়ী খনন কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে দ্বিতীয় এ খনন কাজ কার্যাদেশ অনুযায়ী করার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top