আগন্তুক – এম এ সিরাজী
শেষ বক্সটা রুমের কোণে রেখে মেঝেতে বসে পড়লো রাকিব। নতুন বাসায় উঠেছে সে। শহরের একদম শেষ মাথায় ছিমছাম একটা দোতলা বাড়িতে খুঁজে নিয়েছে নতুন ঠিকানা। প্রথম যখন বাড়িটা দেখে বাড়ির প্রশস্ত সীমানা দেখে অনেক অবাক হয়েছিল সে। অন্যান্য শহুরে বাড়ি থেকে এই বাড়িটা অন্যরকম। দক্ষিণের সীমানা ঘেঁষে আছে অনেক বড় একটা উঠান। উঠানের শেষ মাথায় আছে শান বাঁধানো পুকুরঘাট। পুকুরের ঠিক মাঝ বরাবর আছে একটা একচালা মাচা। রাকিব ভেবেছিল হয়তো বাড়িটার ভাড়া তার সাধ্যের মাঝে থাকবে না। তারপরও, কি মনে করে বাড়ির সামনে টাঙ্গানো টু-লেট নোটিশের নাম্বারে ফোন দেয় সে। ফোনালাপে জানতে পারলো বাড়ির মালিক দেশে থাকেন না। এই বাড়িটা অনেক শখ করে বানিয়েছিলেন দেশে ফিরে আসলে থাকবেন বলে। কিন্তু তার অবর্তমানে বাড়ির দেখাশোনা করার মতো কোন আত্মীয় তার দেশে নেই। একজন ম্যানাজার নিয়োগ দিয়েছিলেন কিন্তু শহরের শেষ প্রান্তে বাড়ি বলে তার নাকি যাতায়াতে অসুবিধা হয়। তাই ম্যানাজার চাকরিটা ছেড়ে দিতে চাইছে। এই জন্যই বাড়ির সামনে টু-লেট নোটিশ ঝুলিয়েছেন। বাড়ির মালিকের ভাড়ার প্রতি অতটা আগ্রহ নেই। কেউ যদি তার বাড়ি দেখেশুনে রাখতে রাজি থাকে তাহলে কম ভাড়াতেও বাড়িতে থাকতে দিবেন। রাকিব খুব সহজেই তার সাধ্যের মাঝে বাড়িটা ভাড়া পেয়ে গেলো। শহরের শেষপ্রান্ত বলে তার কোন অসুবিধা নেই। বরং তার জন্য একটা অনেক বড় সুবিধা। এমনি রাকিব ছোটকাল থেকে একটু অন্তর্মুখ। মানুষের আনাগোনা তার খুব একটা ভালো লাগে না। পেশাতেও সে ফ্রি-ল্যান্সার, বাসায় বসে কাজ। শুধু একটু ভালো ইন্টারনেট কানেকশন হলেই চলবে। ব্রডব্যান্ড কোম্পানীর সাথে কথা বলে নিয়েছে সে। কানেকশন পেতে কোন অসুবিধা হবার কথা না। সব কাজ গুছিয়ে নতুন বাসায় উঠতে এক সপ্তাহের মতো লাগলো। একটু আগে গাড়ি থেকে শেষ বক্সটা নামিয়ে ঘরের ভেতরে আনলো সে। সত্যিই ঠিকানা পরিবর্তন একটা অতি পরিশ্রমের কাজ।
একা অতবড় বাড়িতে বসবাস যতটা সুখকর হবে বলে ভেবেছিল বাস্তবে ব্যাপারটা কিন্তু তেমন না। সবার আগে আসে বাড়ি পরিষ্কার রাখার ব্যাপারটা। এতবড় সীমানা পরিষ্কার করা যেন- তেন ব্যাপার না। রান্নার ব্যাপারটাও তা নাহয় সামলানো যায়। কিন্তু পরিষ্কার করার জন্য একটা লোক নিয়োগ আবশ্যক। রাকিব আগের ম্যানেজারকে ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে জানিয়েছে। ম্যানাজার বলেছে কোন লোক পেলে পাঠবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত লোক পাঠানোর নাম গন্ধ নেই।
রাকিব সারাদিন নিজের ল্যাপটপে ব্যস্ত থাকে। বিকালে মাঝে মাঝে পুকুর পাড়ে যায়। পুকুরের মাঝে ওই একচালা মাচার ব্যাপারটা অনেক অদ্ভুত । মাচা তো আছে কিন্তু মাচাতে পৌঁছাবার কোন উপায় নেই। এক মাত্র সাঁতারই ভরসা। বাড়ির মালিক নৌকা কিনবেন বলে ঠিক করেছিলেন। এখনো কেনা হয়নি। সেদিনো রাকিব বিকেল বেলাতে পুকুর ঘাটে বসে সময় কাটাচ্ছিলো। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামলো। রাকিব কোনমতে গা বাঁচিয়ে ঘরে এসে দরজা জানালা বন্ধ করে আবার নিজের ল্যাপটপ নিয়ে কাজে বসে গেল। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে রাকিবের ধ্যান ভাঙ্গল। অনেক অবাক হলো সে। কে এলো এই অবেলায়, তাও এত বৃষ্টির মাঝে। ওই দিকে আগন্তুক এক নাগাড়ে কলিং বেল বাজিয়ে চলছে। রাকিবের একটু ভয়ও লাগলো শহরের এই প্রান্ত অত একটা জনবহুল নয়। কে জানে ডাকাত টাকাত নাকি! দুরুদুরু বুকে পিপ-হোল দিয়ে দেখলো আগন্তুক হলো একজন রমণী। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে একহাতে বৃষ্টির ছাঁট থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে আরেক হাত দিয়ে কলিং বেল চেপে চলছে। কাঁধে আবার মাঝারি মাপের একটা ব্যাগ ঝুলছে।
রাকিব দরজা খুলে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো আগন্তুকের দিকে। রাকিব কিছু বলার আগেই রমণী বলে উঠলো, ‘আপনি কি রাকিব? জাসেদ আমাকে পাঠিয়েছে।’
জাসেদ হলো এই বাড়ির পুরানো ম্যানেজার। রাকিব তো তাকে কাজের লোক পাঠাতে বলেছিল। এই মেয়েকে দেখেতো মনে হচ্ছে শিক্ষিত, কোন ভাবেইতো কাজের লোক মনে হচ্ছে না।
‘কোথাও মনে হয় একটা ভুল হয়েছে। আমিতো কাজের লোকের জন্য বলেছিলাম।’
‘কেন? আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমি কাজ করতে পারবো না?’
‘না মানে তা কেন মনে হবে, আমি আসলে কাজের লোক চাইছিলাম। আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে…’
‘কি মনে হচ্ছে? শিক্ষিত? দেখুন অনেক দূর থেকে এসেছি। তার উপর বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েছি। কাজ দিবেন নাকি দিবেন না তা আপনার বিষয়। এখন দয়া করে একটু ভেতরে আসতে দিন। বৃষ্টি শেষ হলে চলে যাবো।’
মেয়েটার কথায় রাকিব একটু লজ্জা পেলো। সরে গিয়ে মেয়েটাকে ভেতরে আসতে দিলো। মেয়েটা ঘরে ডুকেই জিজ্ঞাসা করে উঠলো ‘কিচেনটা কোন দিকে?’
রাকিব হাতের ইশারাই দেখিয়ে দিল। মেয়েটা ব্যাগ নিয়ে কিচেনের দিকে চলে গেল। রাকিব কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এমনি মানুষের সাথে কথা বলতে তার অনেক অস্বস্তি লাগে। মেয়েদের সাথে কথা বলার সময় হৃৎপিণ্ড গলা দিয়ে বের হয়ে আসতে চায়। আর সুন্দরী মেয়ে হলে তো কথাই নেই। রীতিমত হাঁটুতে হাঁটুতে বাড়ি লাগার অবস্থা হয়। নতুন আগন্তুক একজন মেয়ে সেই সাথে সুন্দরীও । কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে। রাকিবের চিন্তার রাজ্যে রাশ পড়লো চায়ের কাপের শব্দে। মেয়েটা এর মাঝেই ভেজা কাপড় পরিবর্তন করে একটা হলুদ শাড়ি পরেছে। আচ্ছা মেয়েটা জানলো কিভাবে হলুদ রাকিবের প্রিয় রং। চায়ের কাপ টেবিলে রাখতে রাখতে মেয়েটা বলে উঠলো, ‘খুব ভিজে গিয়েছিলাম। চা না খেলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। তাই বানালাম। আশাকরি, কিছু মনে করেন নি। আপনার জন্যও এনেছি।’
রাকিব কিছু না বলে চায়ের কাপে চুমুক দিলো, চুমুকের সাথে সাথেই মনে হলো রাকিবের জন্মই হয়েছে এই চা খাবার জন্য। চায়ের এমন স্বাদ আগে কখনো পায়নি সে। প্রতিটা চুমুকে চুমুকে অন্যরকম অনুভূতি পাচ্ছিলো সে। এ যেন কোন অপার্থিব অনুভূতি। চা খেতে খেতে মেয়েটা রাকিবকে তার জীবনের কথা বললো। মেয়েটার নাম নীহা। কাজের লোকের কাজেই সে এখানে এসেছে। নীহার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। এর পর বিয়ে হয়। বছর তিনেক আগে স্বামী আরেক বিয়ে করে তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। তারপর থেকেই জীবন সংগ্রামের একনিষ্ঠ যোদ্ধা সে। জাসেদ যখন বললো এই কাজের কথা, কাজের সাথে নাকি থাকার ব্যবস্থা আছে তাই অনেক আশা নিয়ে এসেছে সে। রাকিব আবার পড়লো চিন্তার মাঝে। কাজের লোকের কথা বলেছিল কিন্তু থাকার কথাতো বলে নি। তার উপর সারা বাড়িতে শুধু সে এক পুরুষ মানুষ থাকে। একটা মেয়েকে রাখা ঠিক হবে? এই দিকে বৃষ্টি থামার কোন নাম নেই। রাকিবকে কোন কথা বলতে না শুনে নীহা বললো, ‘ আমি বুঝতে পারছি আপনি আমাকে রাখবেন না। অসুবিধা নেই বৃষ্টি থামলেই আমি চলে যাব।’
রাকিব দেখলো হতাশায় নীহার মুখটা কালো হয়ে গেছে । থেকে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে। হয়তো অনেক আশা নিয়ে এসেছিলো। রাকিবের চা খাওয়া শেষ হলে নীহা কাপ নিয়ে কিচেনে চলে গেল। রাকিবের মুখে এখনো চায়ের স্বাদ লেগে আছে। খুব ইচ্ছা করছে নীহাকে ডেকে বলে আর একবার দিতে। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছে না বলাটা ঠিক হবে কি? রান্নাঘরে নীহার কাজের শব্দ আসছে। মেয়েটা মনে হয় কাজ ছাড়া থাকতে পারে না। কিছুক্ষণ পরে রান্নাঘর থেকে রান্নার সুঘ্রাণ ভেসে আসলো। নীহার রান্নার ঘ্রাণ রাকিবকে তার শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। মায়ের হাতের গরুর মাংস তার অনেক প্রিয় ছিল। রাকিবের বাবা-মা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আজ প্রায় পনেরো বছর। রাকিব প্রায় মাংস রান্না করে, কিন্তু মায়ের রান্নার ঘ্রাণ আনতে পারে না। আজ বহু বছর পর পেলো সেই ঘ্রাণ। ঘণ্টা খানেকের মাঝে নীহা খাবার টেবিল ভরিয়ে তুললো নানা বাহারি খাবারের আইটেমে। এত অল্প সময়ে এতকিছু কিভাবে সম্ভব রাকিব ভেবে পেলো না। রাকিবের অবাক হওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে নীহা বলল,
‘দুই তিনদিনের হিসাবে রান্না করে দিলাম আপনার জন্য। বৃষ্টিতে আশ্রয় দিয়েছেন। এটুকু আপনার জন্য করতেই পারি। খাবার ঠাণ্ডা হবার আগেই শুরু করুন।’
রাকিব বেশি কিছু ভাবার সময় পেলো না। খাবার গুলো যেন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এক একটা আইটেম মুখে দেয় আর স্বাদে আবিষ্ট হয়ে যায় সে। এ যেন বেহেস্তি খাবার। রাকিব যত খাচ্ছে তার খাবার তৃষ্ণা যেন আরো বেড়ে যাচ্ছে। শেষ কবে এত খেয়েছে রাকিব মনে করতে পারছে না। রাকিব খাবার শেষ করার সাথে সাথে নীহা সব কিছু গুছিয়ে কিচেনে চলে গেল। রাকিব সোফাতে বসে বসে কিচেনে পানি পড়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছে। নীহা মনে হয় সব ধুয়ে রাখছে। কাজ শেষ করতে করতে বৃষ্টিও বন্ধ হলো। নীহা ব্যাগ নিয়ে চলে যেতে নিতেই রাকিবের বুক হাহাকার করে উঠলো। নীহা চলে গেলে এই খাবারের স্বাদ আর সে কোথায় পাবে! যে করেই হোক নীহাকে আটকাতে হবে। রাকিব বলতে গেলে লাফিয়ে উঠলো সোফা থেকে, ‘তোমার যাবার দরকার নেই। এখানেই কাজে থাকো।’
নীহা ঠোঁটে এক চিলতি হাসি ঝুলিয়ে বললো ‘ আচ্ছা, ঠিক আছে, আমার থাকার জায়গা দেখিয়ে দিন।’ রাকিব নীহার থাকার জন্য উপরের তলায় একটা রুম দিলো। নীহা অবশ্য সারাদিনই কাটায় রান্নাঘরে। রান্নাঘর থেকে নীহাকে খুব একটা বের হতে দেখে না সে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে বাড়ির প্রতিটা ইঞ্চি একদম ঝকঝকে তকেতকে থাকে। নীহা কখন এইসব করে রাকিব বুঝে পায় না। সত্যি মেয়েটা অনেক পরিশ্রমী। নীহার আর একটা জিনিস রাকিবের অদ্ভুত লাগে। নীহা কখনো রাকিবের সামনে বসে না। রাকিব যখন খায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। রাকিব অনেকবার বলেছে বসতে। কিন্তু নীহা বসে না। অল্প কিছুদিনের মাঝেই রাকিবের রুটিন নীহা আয়ত্ত করে নিয়েছে। এখন দেখা যায় অনেক কিছু আর মুখ ফুটে বলা লাগে না। তার আগেই চলে আসে। এইতো সেদিন পুকুর ঘাটে বসে মনে মনে বলছিল এক কাপ চা হলে মন্দ হতো না। সাথে সাথে নীহা চা হাতে হাজির। মানুষের সঙ্গ অপছন্দ করা রাকিব এখন রীতিমত নীহার উপস্থিতি উপভোগ করছে। তবে মাঝে মাঝে তার একটু সন্দেহ হয় এত কাজ নীহা কিভাবে করে!
সেদিন যথারীতি নাস্তা করে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিল সে। এর মাঝে জাসেদের ফোন। রাকিবতো জাসেদকে ফোন করে ধন্যবাদ দিতে ভুলেই গিয়েছিল। ইদানীং কি যেন হয়েছে সব ভুলে যায়। খুশি মনে জাসেদের ফোন ধরলো সে। ওপাশ থেকে জাসেদ বলে উঠলো, ‘ হ্যালো ভাই, একটা লোক পাইসি।’
‘হুম, আমার কাছে এসেছে সে। অনেক ভাল কাজ করে।’
‘কি বলেন ভাই, লোক তো আমার সামনে!’
‘কি বলো তুমি, তোমার পাঠানো লোকতো বেশ কিছুদিন থেকে কাজ করছে আমার বাসায়।’
‘না ভাই আমি কোন লোক পাঠাই নাই।’
রাকিব আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিলো। অজানা আতঙ্ক ভর করলো তার উপর। তবে কি নীহার এখানে আসার পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে? জাসেদের নাম নীহা কিভাবে জানে? কিচেন থেকে নীহার রান্নার শব্দ আসছে। রাকিব ধীর পায়ে গেল দোতলায় নীহার রুমে। এভাবে একটা মেয়ের রুমে ঢুকতে রাকিবের খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। নীহার আসল পরিচয় জানার জন্য তার রুমে কিছু পাওয়া যায় কিনা তা খোঁজ করা এখন জরুরী। নীহার রুম দেখে মনে হয় কেউ এই রুমে থাকে না। সারা ঘরে কিছু নাই। শুধু খাটের নিচে নীহার ব্যাগটা। ব্যাগ হাতড়েও কিছু পেল না। ব্যর্থ মনোরথে রাকিব নিচে নেমে আসলো। ঠিক করলো নীহাকে চোখে চোখে রাখতে হবে। সারাদিনই নীহার উপর চোখ রাখলো রাকিব। সন্দেহ করার মতো কিছু পেলো না। রোজকারের মতো রাতের খাবার খেয়ে রাকিব নিজের ঘরে চলে গেল ঘুমাতে। বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে সে। আসলে কে এই নীহা? কেন সে এখানে? আসলেই কি সে অসহায় আশ্রয়হীন নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছে সে? হঠাৎ খুট করে একটা শব্দ শুনলো রাকিব। আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হতেই দেখলো নীহা উঠানের মাঝে হাঁটছে। এত রাতে নীহা উঠানে কি করছে ভেবে অবাক হলো সে। রাকিব আস্তে আস্তে উঠানের দিকে এগিয়ে গেল। নীহা এখন পুকুর ঘাটের দিকে এগিয়ে গেল। রাকিব ততক্ষণে উঠানে এসে দাঁড়িয়েছে। পুকুর ঘাটে এলোচুলে নীহাকে কেমন যেন অপার্থিব লাগছে। হঠাৎ নীহা পেছনে ফিরে রাকিবের দিকে তাকালো । কে জানে ওই দৃষ্টিতে কি ছিল রাকিব নীহার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে পারছিল না। নীহা রাকিবের দিকে তাকিয়ে এক চিলতে হাসি দিয়ে সোজা পুকুরের মাঝের মাচার দিকে হাঁটা দিলো। রাকিব অবাক হয়ে দেখলো পানির উপর হেঁটে হেঁটে মাচায় গিয়ে উঠলো নীহা। মাচায় বসে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘রাকিব সাহেব, আমার জ্ঞান কিন্তু রান্নায় সীমাবদ্ধ নয়, আমি আরো অনেক কিছুই পারি। আপনার মনের খবরও পড়তে পারি। আমি কে জানতে চাইছিলেন। জানিয়ে দিলাম। চাইলে আমাকে তাড়িয়ে দিতে পারেন। তার আগে মাচায় আসুন, এক সাথে এক কাপ চা খাই।’
রাকিবের মনে হলো বুক থেকে পাথর নামলো। আর যাই হোক নীহা চোর ডাকাত কেউ না। এই যুগে এত ভালো কাজের লোক পাওয়া দুষ্কর। কিছুই বলা লাগে না। নিজ থেকে সব বুঝে যায়। একে হাতছাড়া করা যাবে না। রাকিব দ্রুত পায়ে পুকুরের পানিতে নেমে সাঁতরে মাচার দিকে যেতে লাগলো, নীহাকে অসন্তুষ্ট করা চলবে না।
এম এ সিরাজী
লেখক পরিচিতি: এম.এ,সিরাজী
জন্ম: ২২/০৮/১৯৯০
বাবা: আ.ন.ম. মাসরুরুল হদা সিরাজী
মা: শাহানা সিরাজী
তিনি একজন লেখক,গবেষক ও মনোবিজ্ঞানী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্সএবং মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে গ্রাজুয়েট রিসার্চার হিসাবে মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত
বাড়ি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার সিরাজপুর গ্রামে।