রবিশঙ্কর মৈত্রী’র কবিতা “দীর্ঘ উপবাসী আমি”

FB_IMG_1537819780393-1.jpg

দীর্ঘ উপবাসী আমি
রবিশঙ্কর মৈত্রী

বহু রক্ত-ক্ষত-ধোয়া স্বপ্ন আমার–
হাঁটু গেড়ে বসে অপলকে
আমৃত্যু তোমাকে দেখব বলে
বহু দূর থেকে ক্রমশ আসছি আমি।

ভীষণ বদলে গেছে পথ
বদলে গেছে নিঝুম দুপুর
নদীতে ঘাট নেই
বিলের তলায় জল নেই
কোথাও আর ঘাসবিছানো পথ নেই

দোকানবাড়ি বাজার-ঢাকা মাঠ পেরিয়ে
ভীষণ রুক্ষ্ম কঠিন অনাত্মীয় মুখ এড়িয়ে
খুঁজে পেলাম বাতাসবিহীন
তোমার জানালা।

কেমন আছো?
আজও তুমি একলা বসে
অন্ধকারে, বারান্দায়।
তোমার পায়ে শক্তি নেই
তোমার হাতে ইশারা নেই
তোমার চোখে স্বপ্ন নেই
তোমার মুখে ভাষা নেই
তোমার বুকে বাসনা নেই
পরিত্যক্ত রানিকুঠিরের মতো
নিশ্চল বসে আছো তুমি।

সমুদ্রের উত্তাল উদ্দাম ঢেউ ভেঙে দিয়ে
পাহাড়ের গাম্ভীর্যকে বিচূর্ণ করে
সকল সভ্যতার দানবকে ভ্রূকুটি করে
অসমাপ্ত পরিভ্রমণের গন্ধ নিয়ে
আমি এসেছি ফিরে তোমার কাছে–

তোমার চোখে মুখে
উত্তরের দিগন্ত
দক্ষিণের বিল
পুবের চন্দনা নদী
পশ্চিম-মধ্য মাঠের
জোড়া হিজলগাছের
গা ছমছমে ঘন ছায়াতল
খুঁজে নেব বলে
এসেছি তোমার কাছে।
অথচ, দুচোখ বন্ধ করে
হে অন্ধচন্দ্র, তুমি বসে আছ
নিবিড়ঘন অমাবশ্যা হয়ে;
তাকাও তুমি, কথা বলো।

দীর্ঘ উপবাসী আমি
তৃষ্ণার্ত অভুক্ত আমি
জল চাই না
অন্ন চাই না;
আবার আমি পূর্ণিমার প্রতীক্ষা চাই
আমার আর কোথাও ফেরা নেই
বলো, তুমি আবার কবে
শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া হবে?

৩রা অক্টোবর ২০১৮
আলেস, ফ্রান্স।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top