বাংলাদেশে পুরুষ শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার।
সাগর চৌধুরীঃ বাংলাদেশে যত কন্যা শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, প্রায় সমসংখ্যক পুত্রশিশুরাও একই নির্যাতনের শিকার হয়। তবে অনেকের ধারনা কন্যা শিশুর চেয়ে পুরুষ শিশুরা কম যৌন নির্যাতনের শিকার হয়!
এধারনা শুধু ধারনাই মাত্র। বরং দেশে পুরুষ শিশু নির্যাতনের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা সত্যিকার অর্থে ভয়াবহ।
পরিবারে, পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে, স্কুলে এমনকি ঘড়ের কাজের লোকের কাছেও পুরুষ শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন সমিক্ষায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।
শিশুদের নিয়ে কাজ করে,”আমরা শিশু” এমন এক সংগঠনের মাঠ কর্মি আয়শা বলেন, “আমরা পুরুষ বাচ্চাদের বিভিন্ন ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখি এবং বুঝতে পারি কোন বাচ্চা যৌন নির্যাতনের শিকার।
তাদের পরিবারের কাছে বা বাচ্চার বাবা মায়ের কাছে বিষয়টি বলি এবং বাচ্চার দিকে নজর রাখতে বলি”।
সেই সঙ্গে প্রকাশ্যে নারীদের দ্বারা পুরুষ বাচ্চার যৌন হয়রানির ঘটনারও আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। নারীরাও পুরুষ শিশুদের যৌন হয়রানি করে থাকে।
শিশু যৌন অপরাধ বা শিশু যৌন নির্যাতনের বর্ননা অনুযায়ী প্রকাশ্যে গোপনাঙ্গে হাত দেওয়ার মতো হয়রানি সব থেকে বেশী হয়।
বেশী বয়সী নারীরা অল্পবয়স এমন পুরুষ বাচ্চার গোপনাঙ্গে হাত দেয়। বিভিন্ন ভাবে নাড়াচাড়া করে। পুরুঙ্গে বল প্রয়োগ করে উত্তেজিত করার চেষ্ঠা করে।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর
যৌনরোগ ও চর্মরোগ ড. আজাদ বলেন, “আমার হাসপাতালে এমন অনেক পুরুষ শিশু আসে যা আমি হতবাক হই। সেসব পুরুষ শিশুর জন্য আমি কিছুই করতে পারি না। কারণ মানুষ নামক কীট পুরুষ বাচ্চার গোপনাঙ্গ নষ্ট করেছে”।
লজ্জা ও সংকোচ এ নিয়ে মুখ খোলে না পুরুষ বাচ্চারা। তাছাড়া পরিবারের কাছের মানুষদের কাছ থেকে এমন নির্যাতনের পাওয়ার কারণে বাচ্চারাও চুপসে যায়।
পুরুষশিশু নির্যাতন গর্হিত অপরাধ। আপরাধের পরিভাষায় বলে, অন্যের অসম্মতিতে গোপণাঙ্গে হাত দেওয়া একটি মানসিক বিকৃতি, যাকে ফ্রোটেরিজম বলা হয় মনোবিজ্ঞানে। সেই কাজটি কেন করে একজন মানুষ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনোবিজ্ঞানী সুফিয়া খাতুন বলেন, “এই মানসিক রোগের শিকার ব্যক্তিরা অন্যের সম্মতি না নিয়ে তার গোপণাঙ্গ ছুঁয়ে যৌন তৃপ্তি লাভ করেন।
পুরুষ শিশুরা খুব সহজেই নারীদের নির্যাতনের শিকার হয়।
পুরুষ শিশু যৌন নিপীড়নের বেশীরভাগ ঘটনাই নারীর হীন মনের পরিচয় পাওয়া যায়। এটা অনেক সময় প্রতিশোধ হিসাবেও করা হয়। আবার কখনো পরিবারের কলহের কারণেও হয়।
স্কুলে টিচারের দ্বারা এমন ঘটনারও বহু তথ্য আমাদের কাছে আছে,” বলে জানান এই
মনোবিজ্ঞানী।
বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বলছে, পুত্রশিশু বা পুরুষশিশুদের ওপরে যে যৌন নির্যাতন হচ্ছে, সেটা তাদের আত্মীয়রা বিশ্বাসই করেন না।
পুরুষশিশুরা যেহেতু স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করে বলে মনে করা হয়, তাই তাদের ওপরে কেউ প্রকাশ্যে যৌন হেনস্থা করবে, এটা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না।
যেসব পুরুষ শিশুরা যৌন নির্যতনের শিকার হয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইউসুফ নামের একজন বলেন, তার চাচী তার সাথে এমন অাচরন করেছে।
অয়ন নামের একস্কুল ছাত্র বলেন, তার স্কুলের শিক্ষিকা তাকে এমন যৌন নির্যাতন করেছে।
মিঠুন নামের একজন বলেন, দিদা রোজ এসব করতেন।
বাংলাদেশে পুরুষ শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতনের বিচার করার জন্য আলাদা কোনও আইন ও আদালত নেই।
অপ্রাপ্তবয়স্ক পুত্রশিশুদের ওপরে নির্যাতন অবশ্য নারী ও শিশু নির্যাতনের ধারায় বিচার হয়।
কতটুকু আর বিচারে সাজা হয়। কিন্তু একজন পুরুষ মানব শিশুর জীবনটা হয়ে ওঠে কত কষ্টের। সমাজের চোখে তারা নিছক মানুষ। কিন্তু প্রকৃত আপরাধীদের বিচার হয় কি?