ডিআইজি প্রিজন্স বজলুর রশীদ বরখাস্ত
অপরাধ প্রতিবেদকঃ ডিআইজি প্রিজন্স বজলুর রশীদকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বুধবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গুরুদণ্ড দিয়ে তাকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় ‘বেপরোয়া ডিআইজি প্রিজন্সের ঘুসকাণ্ড, স্ত্রী কুরিয়ার সার্ভিসে নেন কোটি কোটি টাকা’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের সঙ্গে একটি ভিডিও ক্লিপের কিউআর কোডও প্রকাশ করা হয়েছে। বজলুর রশীদের স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহারের নামে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে নিবন্ধিত ০১৮৫৬৫৫৩৫৮নং মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহার করা হয়েছে। এই সিম নাম্বারে বিভিন্ন সময়ে এসএ পরিবহণের মাধ্যমে তৌহিদ হোসেন, বিথি ও দুলালের নামে ৩০টি রসিদে ৯৮ লাখ ৩৫০ টাকা পাঠানো হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে প্রকাশিত সংবাদে বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে বজলুর রশীদ সরাসরি জড়িত।
চাকরি ক্ষেত্রে এমন আচরণ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর ৩(খ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ। এ ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নং ০৯/২০২ রুজু করা হয়। এ বিষয়ে ২ মার্চ ২০২০ তারিখে স্মারক উল্লেখ করে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী পাঠানো হয়। সেখানে বজলুর রশীদ জবাব দাখিল করেন এবং ব্যক্তিগত শুনানি প্রার্থনা করেন। ১০ জানুয়ারি তার শুনানি গ্রহণ করা হয়।
শুনানিতে প্রদত্ত বক্তব্য সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খায়রুল আলম সেখ, উপসচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং উপসচিব মোহাম্মাদ আবু সাঈদ মোল্লার সমন্বয়ে একটি তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়। তদন্ত বোর্ড ২৯ জুন প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’র অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত মর্মে মতামত দেয়। প্রতিবেদনে দাখিলকৃত কাগজপত্রাদি, তথ্যপ্রমাণ এবং প্রাসঙ্গিক সব বিষয় পর্যালোচনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনীত ‘অসদাচরণ’র অভিযোগটি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়।
গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশের পর ডিআইজি বজলুর রশীদের জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদক অনুসন্ধানে নামে। ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর জবানবন্দি নিতে তাকে দুদকে তলব করা হয়। সেখানে তাকে বেইলী রোডে রূপায়ন সেন্টারে প্রায় ৩ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনার অর্থের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফ্ল্যাটটি তিনি ৩ কোটি ৮ লাখ টাকায় কেনেন। কিন্তু এ বিপুল অঙ্কের টাকার কোনো বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। এরপর ওইদিনই তার বিরুদ্ধে মামলা সহ তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
ইতোমধ্যে দুদকের এ মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চলছে বিচার কাজ। এক বছর ৯ দিন কারাভোগের পর গত বছরের ২৯ অক্টোবর তিনি জামিন পান।