শৈত্যপ্রবাহ শুরু; সপ্তাহ জুড়ে থাকবে শীতের দাপট
আবহাওয়া প্রতিবেদকঃ পৌষের দ্বিতীয় পক্ষে এসে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের সঙ্গে দেশে শুরু হলো শৈত্যপ্রবাহ। পঞ্চগড়, মৌলভীবাজার ও কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা হঠাৎ এক ডিজিটে নেমে এসে শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে। আগামী দুই দিনে শীত আরো কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিশেষ করে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ এবং শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রার পারদ বেশি নামতে পারে। কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, সপ্তাহ জুড়ে থাকতে পারে শীতের দাপট। কারণ এ সময়ে তাপমাত্রা টানা কমবে। তবে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা ১৪, ১৫ বা ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে। এটা চলতি শীত মৌসুমে দ্বিতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহ।
এর আগে ১৯ ডিসেম্বর ১০ জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হয়। কিন্তু দু-তিন দিন পরে তা দূরও হয়ে যায়। আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে গেছে।
গতকাল পঞ্চগড় ও মৌলভীবাজারে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আগামী ৫-৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তাপমাত্রা হ্রাসের ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। শৈত্যপ্রবাহ নতুন নতুন অঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। এ সময়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বইবে। তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রির নিচে নামার অর্থাৎ শৈত্যপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করার আশঙ্কা নেই।
৫ থেকে ৬ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা একটু বাড়তে পারে। তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আকাশে মেঘ থাকার কারণে গত কয়েক দিন তাপমাত্রা কমেনি। ফলে সেভাবে পারদ নামেনি।
তবে গতকাল শনিবার থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। আগামী ৩ থেকে ৪ জানুয়ারি তাপমাত্রা আরো কমবে। গতকাল সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, মৌসুমের দ্বিতীয় দফার শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বিস্তার ঘটছে বিভিন্ন এলাকায়। এটি আরো এলাকায় ছড়াবে। বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এটি বিস্তার লাভ করতে পারে। প্রথমে মৃদু হলেও পরে তাপমাত্রা আরো কিছুটা কমে মাঝারি আকারে বইতে পারে শৈত্যপ্রবাহ।
এদিকে দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, জানুয়ারি মাসে দেশে দুই থেকে তিনটি মৃদু অর্থাত্ ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা মাঝারি অর্থাত্ ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। যার মধ্যে দুটি তীব্র অর্থাত্ ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে।
এছাড়া এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদনদী অববাহিকায় মাঝারি বা ঘন কুয়াশা এবং অন্য এলাকায় হালকা বা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এ ছাড়া সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা থাকতে পারে। এ সময়ে সারা দেশের রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গতকাল বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় ১৫ দশমিক ৬, ময়মনসিংহে ১৪, চট্টগ্রামে ১৬ দশমিক ৬, সিলেটে ১৪ দশমিক ২, রাজশাহীতে ১৩ দশমিক ৪, রংপুরে ১৩, খুলনায় ১৪ দশমিক ৮ এবং বরিশালে ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে গতকাল শনিবার ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় চারদিক। পৌষের শীত সঙ্গে ঘন কুয়াশার আর ঠান্ডা বাতাসে মানুষের সঙ্গে কাবু হয়েছে পশুপাখিও। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে তেঁতুলিয়া অফিসে। গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় ১০ ডিগ্রি এবং সকাল ৯টায় তাপমাত্রা কমে গিয়ে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পৌষের শীত আর হিমেল বাতাসে জবুথবু অবস্থায় দুর্ভোগে দিন কাটছে ছিন্নমুল ও নিম্ন আয়ের মানুষের। ভোরে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে চারদিক। তখন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। ভর দুপুরেও শীতের পোশাক মুড়িয়ে চলাফেরা করতে হয় পঞ্চগড়ে। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের দিকে শীতের তীব্রতা বেশি।
এদিকে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, শীত মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলায় ২৩ হাজার ৬০০ কম্বল জেলার দরিদ্র শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।