যদিও কয়েক বছর ধরে জনপ্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে অনেকেই নিজেদের যোগ্য করে তুলেছেন সরকার ও জনপ্রশাসনের শীর্ষপদে কিন্তু ভেতরের চাপাকান্না শোনেনি সরকার ও উচ্চ পদে আসিনেরা। ফলাফল চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে। যদিও সিনিয়রদের বক্তব্য, পদ আটকে থাকলে কি হবে! আমরা জুনিয়রদের সকল সুবিধা দিয়েছি। প্রমোশন ও অর্থিক সুবিধা সবই দিয়েছি।
বিশেষ প্রতিবেদকঃ জনপ্রশাসনের বেশ কিছু শীর্ষ পদে পরিবর্তন আসছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে রদবদল করা হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অন্তত ২০ জন সচিব অবসরে যাচ্ছেন। তাদের স্থলে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হবে। নিরুৎসাহিত করা হবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। চলতি উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদেও নতুন মুখ পদায়ন করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামীতে সরকারি কর্মকমিশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে পরিবর্তন আসতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার তিন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে রদবদল আনা হয়। এদিন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিনকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে। অন্যদিকে অর্থ বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহমান খানকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে তাঁকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এছাড়া বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দারকে পদোন্নতি দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামীতে নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলমকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হতে পারে। সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোলকে বিদ্যুৎ বিভাগে এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমানকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে বদলি করা হতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদসহ বেশ কয়েকজনের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পরিবর্তন হতে পারে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল অথবা শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানাকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেনকে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে বদলি করা হতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মশিউর রহমানকে পাঠানো হতে পারে জননিরাপত্তা বিভাগে।
রদবদলের ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দেওয়া কয়েকজন সচিবকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে প্রশাসনের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে সচিবের শূন্য পদ পূরণ করা হবে জানা গেছে।
জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘প্রশাসনে বদলি ও পদোন্নতি একটা রুটিন ওয়ার্ক। কোন মন্ত্রণালয়ে কাকে সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে তা এখন বলতে পারছি না। তবে যাদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, সেখানে নতুন সচিব পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান।’
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কমানোর পরিকল্পনা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্য মতে, প্রশাসনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ ৮৫ জন সচিব আছেন। তাদের মধ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অন্তত ১৮ থেকে ২০ জনই চুক্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন শতাধিক কর্মকর্তা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আগামীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিরুৎসাহিত করা হবে। নিয়মিত কর্মকর্তাদের দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করা হবে সব পদ।
বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে দায়িত্ব পালন করছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া। একইভাবে বিসিএস ১৯৮৫ ব্যাচের আখতার হোসেন আছেন এসডিজির মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্বে এবং মাসুদ বিন মোমেন আছেন পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বে।
চুক্তিতে আরও আছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব গোলাম হাসিবুল আলম, সংসদ সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আবদুস সালাম, জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ে সংযুক্ত সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খান ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী। এ ছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন এবং ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ফজলুল বারীও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কাজ করছেন।
অবসরে যাচ্ছেন ২০ সচিব।
আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ২০ সচিবের অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। ঢালাওভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিরুৎসাহিত করা হলেও তাদের মধ্য দু’একজন চুক্তিতে থেকে যেতে পারেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের নিয়মিত চাকরির মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ১০ অক্টোবর। পরে তাঁকে আরও এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। আগামী ১০ অক্টোবর চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। ফলে এ পদে নতুন কেউ আসবেন নাকি তাঁকেই আরও এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। মাহবুব হোসেন বিদায় নিলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সম্ভাবনাই বেশি। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তিনি এগিয়ে রয়েছেন।
আগামী ৫ জুলাই মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাঁর মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। তা না হলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল মুখ্য সচিব হতে পারেন। আবার জনপ্রশাসন সচিব মেজবাহ উদ্দিনকেও মুখ্য সচিব করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্য কেউ মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে বসবেন।
প্রশাসনের সূত্রগুলো জানায়, আগামী জুলাই থেকেই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা সচিব পদে বসবেন বলে আলোচনা রয়েছে।
গত ৩০ এপ্রিল অবসরে গেছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম। এ পদে সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে মোসাম্মত শাহানারা খাতুনকে পদোন্নতি দিয়ে ইতোমধ্যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আজ ১৯ মে অবসরে যাচ্ছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ। ৩০ জুন চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর। তিনি নতুন করে আরও ছয় মাস কিংবা এক বছরের জন্য নিয়োগ পেতে পারেন।
১১ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) সত্যজিৎ কর্মকার, ১৪ জুলাই পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল, ২৭ আগস্ট পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এবং ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন অবসরে যাচ্ছেন।
২৯ সেপ্টেম্বর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদ, ৯ অক্টোবর বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমান, ৪ নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব হামিদ জমাদ্দার, ২৪ নভেম্বর ভূমি সচিব খলিলুর রহমান, ৭ ডিসেম্বর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদের অবসর জীবন শুরু হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর চাকরির মেয়াদ আছে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তার আগেই আগামী জুলাইয়ে তিনি মুখ্য সচিব পদে কিংবা অক্টোবরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পেতে পারেন। তাঁকে এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দিতে পারে সরকার। ৩০ ডিসেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদের অবসরে যাওয়ার কথা ৩১ ডিসেম্বর।
একই দিন চাকরির মেয়াদ শেষ হবে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন এবং ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এ কে এম শামিমুল হক সিদ্দিকীর।
আরও সংবাদ পড়ুন।
ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড’রা কাউকেই আমলে নিচ্ছেন না; মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত সরকার
আরও সংবাদ পড়ুন।
প্রশাসন ক্যাডারের পদ বেড়ে দ্বিগুণ;সিভিল সার্ভিস(প্রশাসন) গঠন ও ক্যাডার আদেশ-২০২৪ জারি
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
১০৫ উপ-সচিবের আকুতি! পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতা বঞ্চিত জুনিয়রদের অধীনে কাজ করছেন
আরও সংবাদ পড়ুন।
চুক্তি থেকে কবে মুক্তি মিলবে পাঞ্জেরী? ক্ষোভ, দুঃখ ও কষ্টে চাপা পড়েছে জনপ্রশাসন!
আরও সংবাদ পড়ুন।