সপ্রবি শিক্ষক নিয়োগ – পরীক্ষা শুরুর আগেই পরিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে যেত উত্তরপত্র

Picsart_22-12-26_08-52-40-392.jpg

সপ্রবি শিক্ষক নিয়োগ – পরীক্ষা শুরুর আগেই পরিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে যেত উত্তরপত্র

অপরাধ প্রতিবেদকঃ গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করা হয়েছে বলে প্রমান পেয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে উত্তরপত্র। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের এমন সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। 

ডিবি জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে বসে এই পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করত চক্রটি। 

গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে দুইজন ঢাবি শিক্ষার্থী ও তিনজন পরীক্ষার্থী। তারা হলেন- ঢাবি শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন (২৬) ও সুজন চন্দ্র রায় (২৫) এবং পরীক্ষার্থী মনিষ গাইন (৩৯), পংকজ গাইন (৩০) ও লাভলী মন্ডল (৩০)।

তাদের গ্রেফতারের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিবির হারুন বলেন, গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

এই ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ জেলার সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এই পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তরপত্র ও ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাতজন ও রাজবাড়ীতে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এই ঘটনায় দুই জেলায় আলাদাভাবে মামলা দায়ের করেন সংশ্লিষ্টরা। রাজবাড়ীতে আটক হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান- কীভাবে এবং কখন তার মোবাইলে উত্তরপত্র এসেছে। 

হারুন জানান, মাদারীপুরে গ্রেফতার হওয়া পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জামিনে বের হয়ে যান। ঘটনাটি তদন্তের জন্য মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলমের অনুরোধে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ তদন্তে নামে।

গ্রেফতার করা হয় চক্রের সদস্য ঢাবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন ও সুজন চন্দ্রকে। তারা দুজনই ঢাবির জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তারা গোয়েন্দা পুলিশকে জানান- পরীক্ষার আগেই তারা প্রশ্ন সমাধানের জন্য পেয়েছেন। এই প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যোতির্ময় গাইনের চাচা অসিম গাইনের মাধ্যমে। প্রশ্নপ্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাসে তাদের দিয়ে প্রশ্ন সমাধান করান অসিম। এই প্রস্তাবে জ্যোতির্ময় ও সুজনসহ সাতজন ঢাবির জগন্নাথ হলের জ্যোতির্ময়গুহ ঠাকুরতা ভবনের ২২৪ রুমে বসে তারা প্রশ্নের সমাধান করে পাঠান। 

ডিবির হারুন জানান, অসিম তার ভাতিজা জ্যোতির্ময় গাইনকে প্রশ্ন সামাধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। আর পরীক্ষার দুই থেকে তিন মাস আগেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন অসিম। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স শেষের পথে- এমন পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন তিনি। তাদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন অসিম। তাদের সমাধান করে দেওয়া প্রশ্নের মধ্যে ৭২ থেকে ৭৫টিই মিলেছে। 

হারুন বলেন, এ ঘটনায় দুজনকে (অসিম ও জ্যোতির্ময়) আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দিয়েছেন। যারা প্রশ্নের সমাধান করেছেন, আদালতে তারাও স্বীকার করেছেন। যারা প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন, তারাও স্বীকার করেছেন। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।

ডিবি পরীক্ষা বাতিলের অনুরোধ জানাবে কি না- এমন প্রশ্নের জাবাবে হরুন অর রশীদ বলেন, মামলার তদন্তে পাওয়া সবকিছুই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন পরীক্ষা বাতিল করবেন, নাকি বহাল রাখবেন।

তবে, কয়েক দাপে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়ে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বরিশাল বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়ও অসাধু পন্থা অবলম্বন করার আটক হয়েছে বেশ কয়েকজন। বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলায় শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষায় ও অনেকেই আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগেও একই ঘটনা ঘটেছে! নোয়াখালী জেলায় পরিক্ষার্থী আটক করা হয়েছে।

তাহলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দপ্তরের এতগুলো ইতর বিশেষের ঢাকঢোল পিটানো গল্পের কি হলো! প্রশ্নপত্র তো ফাঁস ঠেকানো গেল না।

আরও সংবাদ পড়ুন।

প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাই-বোন আটক

আরও সংবাদ পড়ুন।

ভোলায় প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি; ৩ জনের কারাদণ্ড

আরও সংবাদ পড়ুন।

মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে – এক ব্যক্তি পরপর দু’বারের বেশি সভাপতি হতে পারবেন না

আরও সংবাদ পড়ুন।

আগামী চার মাসে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে – প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহমদ

আরও সংবাদ পড়ুন।

আগামী জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হবে – প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী

আরও সংবাদ পড়ুন।

https://wnews360.com/archives/51877

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top