উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার চাল চুরি! হাতে নাতে ধরেন ভ্রাম্যমান আদালত

Picsart_23-11-13_08-17-57-812.jpg

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার চাল চুরি! হাতে নাতে ধরেন ভ্রাম্যমান আদালত

অপরাধ প্রতিবেদকঃ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি চাল বিক্রিসহ বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে পরিদর্শনে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন। এসময় খাদ্য কর্মকর্তার সরকারি বাস ভবন থেকে সীলমোহরসহ চালসহ বস্তা ও বিপুল পরিমাণে খালি বস্তা জব্দ করেন তিনি।

গত শনিবার (১১ নভেম্বর২০২৩) দুপুর ১২টার দিকে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদের বাস ভবন থেকে এক হাজার একশ খালি চালের বস্তা ও চালসহ ১৩টি বস্তা জব্দ করেন ইউএনও।

স্থানীয় ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন জানায়, খাদ্য গুদাম থেকে দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিতে চাল কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই পরিদর্শনে এসে খাদ্য গুদামের পাশে থাকা খাদ্য কর্মকর্তার বাসভবনে যান ইউএনও। সেখানে গিয়ে সরকারি সীলমোহর সহ ৫০ কেজির ১০ বস্তা ও ৩০ কেজির ৩ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। চালগুলোর পাশেই পরেছিল বিপুল পরিমাণে খালি বস্তা। খালি বস্তাগুলোও জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। খালি বস্তার মধ্যে ৫০ কেজির ৭৫০টি প্লাস্টিকের, ৫০ কেজির ৫০টি পাটের ও ৩০ কেজির ৩০০টি পাটের বস্তা জব্দ করা হয়।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খাদ্য গুদাম একটি স্পর্শকাতর জায়গা। খাদ্য কর্মকর্তার বাস ভবন থেকে চালসহ ও খালি বস্তা জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। বিকেলের মধ্যে লিখিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

এদিকে, সিলগালা করা ভবনের গ্রিল কেটে বস্তা সরানোর চেষ্টা করার সময়ে খাদ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আটক করা হয়।

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার বাসভবনে এক হাজারের বেশি সরকারি চালের বস্তা পেয়ে বস্তাসহ বাসভবনটি সিলগালা করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সিলগালা করার পর ভবনের জানালার গ্রিল কেটে সেই বস্তা সরানোর চেষ্টা করেন খাদ্য কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ। এই ঘটনার পর তাকে খাদ্য কর্মকর্তার পদ থেকে অপসারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গতকাল রোববার (১২ নভেম্বর২০২৩) সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তার সিলগালাকৃত বাসভবন থেকে জানালার গ্রিল কেটে জব্দকৃত বস্তাগুলো অপসারণের চেষ্টা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার হঠাৎ করেই পরিদর্শনে এসে খাদ্য গুদামের পাশেই থাকা খাদ্য কর্মকর্তার বাসভবনে যান ইউএনও। সেখানে গিয়ে সরকারি সীলমোহরসহ ৫০ কেজির ১০ বস্তা ও ৩০ কেজির ৩ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। চালগুলোর পাশেই ছিল বিপুল পরিমাণে খালি বস্তা। খালি বস্তাগুলোও জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন।

বস্তাগুলোসহ বাসভবনটি সিলগালা করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর রোববার সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ বাজারের ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ থেকে কর্মচারী সজিব ছৈয়ালকে ভাড়া করে আনেন খাদ্য কর্মকর্তা। পরে ভবনের উত্তর দিকের জানালার ৪টি রড বৈদ্যুতিক মেশিন দিয়ে কেটে ভেতরে প্রবেশ করে খাদ্য গুদামের নৈশ প্রহরী আবু হানিফ। আবু হানিফ প্লাস্টিক ও পাটের বস্তাসহ বেশ কিছু সুতা সরিয়ে ফেলেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন টের পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে খাদ্য কর্মকর্তাসহ বৈদ্যুতিক কাটার মেশিন পরিচালনাকারী সজিব ছৈয়ালকে আটক করেন। এ সময় নৈশপ্রহরী আবু হানিফ পালিয়ে যান।

ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী বিল্লাল হাওলাদার বলেন, খাদ্য কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ আমাকে বলেছিল তালুকদার বাড়ির একটি বাড়ির গ্রিল কাটতে হবে। কথা অনুযায়ী আমার কর্মচারী সজিবকে পাঠাই। পরে জানতে পারি সজিবকে তিনি খাদ্য গুদামের বাসভবনের গ্রিল কাটতে নিয়ে গেছেন। 

বৈদ্যুতিক কাটার মেশিন পরিচালনাকারী সজিব ছৈয়াল বলেন, মহাজন আমাকে ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে আসতে বলেছিল। এসে তার কথামতো খাদ্যগুদামের বাসভবনের জানালার গ্রিল কেটে দিয়েছি। কাটার পর একজন কিছু বস্তা ও সূতা সরিয়ে ফেলেছে। কথা ছিল বস্তাগুলো সরানোর পরে জানালার গ্রিলটি আবার জোড়া লাগিয়ে দেব। কিন্তু এর আগেই ইউএনও স্যার চলে আসেন।

খাদ্য গুদামের নৈশ প্রহরী মোক্তার হোসেন বলেন, হঠাৎ করেই আমার স্ত্রী খবর দেন যে সিলগালাকৃত বাসভবনের জানালার গ্রিল কাটছেন খাদ্য কর্মকর্তা। আমি দ্রুত এসে দেখতে পাই জানালার গ্রিল কেটে ফেলা হয়েছে। ইউএনও স্যারকে দেখে আমার অন্য সহকর্মী হানিফ পালিয়ে গেছে।

শরীয়তপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, জানালার গ্রিল কাটার বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জাজনক। বিষয়টি নিয়ে আমরা লজ্জিত। গতকালের ঘটনার পর তার বিষয়ে ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। তারপর আজ যা হয়েছে, তা ভাষায় করার মত নয়।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গতকাল শনিবার খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চালসহ এগারো শ খালি বস্তা খাদ্য কর্মকর্তার বাসভবন থেকে জব্দ করে বাসভবনটি সিলগালা করা হয়। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে জানতে পারি, খাদ্য কর্মকর্তা জানালার গ্রিল কেটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জব্দকৃত জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। পরে আমরা এসে খাদ্য কর্মকর্তাকে হাতে নাতে ধরেছি। তাকে তার পদ থেকে অপসারণ করে জেলা খাদ্য কর্মকর্তার নিকট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ দুদককে জানানো হবে।

আরও সংবাদ পড়ুন।

সাবেক খাদ্য সচিব বরুণ দেব মিত্রের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ সম্পদ জব্দ

আরও সংবাদ পড়ুন।

ফরিদপুরে উপ-খাদ্য কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন দুদকের হাতে গ্রেফতার

আরও সংবাদ পড়ুন।

সংসদে উত্থাপন – অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য মজুতের শাস্তি; কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top