প্রাসাদ – শাহানা সিরাজী

Picsart_22-07-22_15-42-03-082.jpg

প্রাসাদ – শাহানা সিরাজী

মর্মরপাথরে গড়া এ প্রাসাদের মালিক কী ভাবে হলাম! বিস্ময় আর শংকায় কেঁপে উঠলো বুক। এতো প্যাসেজ করিডোর,এতো এতো কক্ষ এতো সুবিন্যস্ত কারুকার্যময় প্রাসাদ কে গড়ালো আমিই বা এর ভেতর কী ভাবে এলাম!

লঘুপায়ে হাঁটি, এ পথ থেকে ওপথ, একা। পথ হারানোর ভয়ে, গোলক ধাঁধায় হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে যখন কুঁকড়ে উঠলাম দেখি অন্য একটি হাত আমার হাতে।
কার হাত দেখার আগেই আঁকড়ে ধরলাম। আমাকে ছেড়ে যেও না। শক্ত করে ধরি,কঠিন ভাবে জড়িয়ে ধরি, আনন্দ এবং ভয় মেশানো অনুভূতি নিয়ে এগিয়ে যাই অন্য প্যাসেজে। চিৎকার করি।
তুমি কোথায়? এরা কারা? এ বিশাল প্রাসাদের প্রতিটি কক্ষ অসংখ্য পাগলের দখলে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবাই মর্মরপাথরের রূপে আকর্ণ ডুবে আছে। সবার গায়ে জীর্ণ পোশাক,দাঁতে ময়লা,চোখে অজানা ঝিলিক, ভাঙা প্লেটে থকথকে খাবার। তাকানো যাচ্ছে না।
ভাবছি,এরা কারা? পাশ থেকে আমার পরিচারিকা উত্তর দিলো- ওরা ওপাড়ার লোক।
তুমি দেখলে না, কী ভাবে ওরা প্রবেশ করলো?
এখন ওদের কী ভাবে সরিয়ে দেবো!
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ নিজেকে কফিনে আবিষ্কার করলাম। এই আমি মরিনি, কফিনে কেন আমি? বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারে আমি যখন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লাম,তুমি জোর করে টেনে কফিনের ঢাকনা সরালে,ঢাকনার সাথে আমিও পড়ে গেলাম সিঁড়ির অনেক নিচের ধাপে। তুমি হাত বাড়িয়ে তুললে, কাঁপতে কাঁপতে তোমার হাত ধরলাম, তাকিয়ে দেখি সে কফিনে শুয়ে খিলখিল হাসছে সেই মস্তিষ্কবিকৃত নারী!

দ্রুত সে প্যাসেজ পার হতে গিয়ে আবার তোমাকে হারালাম
তুমি অন্য প্যাসেজে অচেনা লোকদের সাথে কথা বলছো…

আমিও পড়লাম পরিপাটি এক অচেনা লোকের সামনে।
তার হাসি গায়ে জ্বালা ধরায়- পড়িমরি করে ছুটলাম আরেক দিকে- কোথাও আপনজন কেউ নেই। আব্বার কথা মনে হলো। কিন্তু আব্বা তো বেঁচে নেই এ প্রাসাদের ভার কী ভাবে বহন করবো?
এতো অসহায় পাগলকে কোথায় স্থান দেবো? কী ভাবেই বা তাদের উচ্ছেদ করবো? তবে কী পুলিশে ফোন দেবো?
ভাবতে ভাবতে প্রাসাদের ছাদে পৌঁছে গেলাম।
ছাদ ছুঁই ছুঁই থইথই জল। কেমন করে সে জলে পড়ে গেলাম,
এক সাগরজলের ঢেউ আমাকে তলিয়ে না নিয়ে উগরে দিয়েছে,দেখি সম্মুখে তুমি।
ডুবতে থাকা আমাকে আবার টান দিয়ে তুললে!
কাঁদতে কাঁদতে বললাম, কোথায় হারিয়ে গেলে?
পুরো প্রাসাদের রূপবিহারি তুমি বললে,অনেক কাজ পড়ে আছে। এ প্রাসাদ রক্ষায় নিমগ্ন হতে হবে। ভেজা চুল গুছিয়ে দিয়ে বললে, চলো,ঠান্ডা লেগে যাবে…..

চোখ পদ্মা-মেঘনার ধারায় একাকার
ছেড়ে যাবে না তো!

শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ),পিটিআই মুন্সীগঞ্জ।
কবি প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top