শাহানা সিরাজী’র যুগল কবিতা
১
তেল
তেলের এতো দাম তবু তেল দেয়ার নাম
তেলে তেলে গেছে ভেসে আমার নিজ গ্রাম!
হায় রে তেলের এতো দাম!
ঈদের বাজার করবো বলে গেলাম বাজারে
জিনিসপত্র যাই দেখি তেল দেখি না রে!
বলি, এতো কেন খাস হীরক রাজার দাস
মন্ত্রীর হবে পেট মোটা প্রজারা সব পোড়া পোড়া
হাড্ডিসার প্রজা দেখে রাজা খেলো টাস!
বলে ও মন্ত্রী, কেমন তুমি তন্ত্রী!
তোমার এত্তো বড়ো ভূড়ি তোমার নেই তো কোন জুড়ি
প্রজার কাছে গেলে শুনি তেলের এতো দাম!
হায় রে তেলের এতো দাম!
মন্ত্রী বলে ও রাজা, শোনুন রাজা, পাঁঁচবেলাতে সয়ার খাজা
বলি, আসে থেকে কোথা, এতো যদি প্রজা খাবে রাজা খাবে কী তা!
হেসেই রাজা খুন মন্ত্রীর এতো গুণ! গোপি গায়েন গেয়ে ওঠেন দেখো রে….
ভুল বুঝিয়ে রাজারে নিলো সব গিলে রে
রাজা থাকেন ঘুমের ঘোরে রাজ্য থাকে মন্ত্রীর ঘোরে
ওঠো রাজা দেখো দেখো,তোমার দয়ার কাঙাল কাঁদে
ক্ষুধায় তাদের পেট জ্বলে, মন্ত্রী তোমায় রাখে ছলে
তুমি দয়াল রাজা ভালোবাসে তোমার প্রজা
তুমি ভেন্না কাঠের গুঁড়ি দিয়ে মন্ত্রী সান্ত্রীর পেট ফুঁড়িয়ে
বাঁচাও তোমার প্রজা,ও রাজা,শোনো রাজা….
ও বাঘা, বাজারে ঢোল বাজা, শুনুক তালে রাজা
দেখুক পালের রাজা, ধরুক চোরের রাজা
ও বাঘা, বাজা রে ঢোল বাজা, টাস্কি খাক রাজা!
তেলের তেলে চুবে রাজা নাক ডোবাডুবি
রাজা কেমনে ধরবে চুরি,ও রাজা কেমনে ধরবে চুরি
প্রজা কোথায় পাবে ঘুড়ি!
ঈদের বাজার হয় না করা হয় না তেল কেনা
তেল ছাড়া খাবো তবু করবো না দেনা
পকেট বোঝাই আছে টাকা ঘুষখোর মহাজনের
রাষ্ট্রনীতি বিকিয়ে করে ফন্দিফিকির প্রয়োজনের
এমন মানুষ আছে কোথায় কোন চাঁদের দেশে
টাকার কাছে নত হতে বিবেকে বাঁধে না যে!
২.
আইন
আইন থাকলেই হয় না চাই তার এপ্লিকেশন
মন থাকলেই হয় না চাই মন বিশ্লেষণ!
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোলূপ দৃষ্টি
কেড়ে নেয় ছিঁড়ে নেই মানুষের কৃষ্টি!
অন্যায় রুখতে যদি হয় তৈরি আইনের চালা
হিমালয় গলে গেলেও ভাসবে ডুববে না পালা
প্রশাসন একক কোন নয় নির্ভেজাল বুনোবেগুন
অনেক লোকের চেইনশপে একটি ঝিল্লির আভরণ!
কেনাবেচা সহজ, সহজ ইজারা বর্গা দেয়া
সেখানে তুমি যাবে? কিল খাবে, চলবে মোটা কিছ দেয়ানেয়া!
দলিল পত্র, আইন যতোই থাকুক তোমার পক্ষে
তুমি যদি না পারো চ’ বর্গীয় বর্ণ ইউজ করতে
বুড়ো আঙুল দেবে দেখিয়ে, বাইরে অন্দরে চলবে
কোর্টও আলো-আঁধারির গোপন খেলায় মজবে
তুমি বেকুব হয়ে ঝিঁঝিঁর ডাক শুনবে, শুনবে বিরোধীর গালি
অন্তরে হাজার প্রশ্ন যাবে বয়ে একী প্রশাসন নাকি তালি!
একী পুলিশ নাকি অন্যায়ের ঝাঁপি
একী জনগনের ট্যাক্সের টাকায় পোষা বিড়াল!
একী অন্যায়কে ন্যায় বানানোর তাবেদারী তন্ত্র!
একী মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার কুকুরকুণ্ডলী!
আইনের পাতা উলটে আইন হাতে দাঁড়াতে পারো
মৃতশব্দগুলো উড়ে এসে তোমার অধিকার দেবে নাতো!
উপহাস -পরিহাস -নির্মমতা তোমার কাঁধে,হাতে, পায়ে
দেবে কৌশলী জাল পেতে তুমি মুষড়ে পড়ে যাবে!
ক এর পিছে খ,খ এর পিছে গ,গ এর পিছে ঘ সব শেষে ঙ
কে সাধু কে সন্ন্যাস কে হবে আসমানী সুবাসের হাটু ভাঙা দ!
মানুষ এখন আসমানী কিতাব ব্যবহার করে মিথ্যা বলার জন্য
মানুষের ভেতর হিংস্র জানোয়ার হিস হিস করে চিবিয়ে খাওয়ার জন্য!
প্রকৃতির নিয়মের বাইরে গেলেই তাণ্ডব প্রকৃতিই নিয়ে আসে
মানুষের নিয়মের বাইরে গেলে সিন্দুকভাঙা টাকা আসে!
ব্যাংক লুট কোন ব্যাপার না! মানুষের বাড়িঘর দখল কোন ব্যাপার না!
যদি থাকে একটা সিল’ ক্ষমতার ঝলক, পোশাকের পলক
যদি থাকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নূন্যতম কোন পদক!
বেত উঁচিয়ে হাত উঁচিয়ে কলম ঝরিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে
তোমাকে পাঠিয়ে দেবে লালঘরে কিংবা সোজা হাসপাতালে!
রাষ্ট্রের সদস্য আমি ন্যায় বিচার আমার অধিকার!
রাষ্ট্র নায়ক আজ আছো কাল নেই আমি চিরতার
রাষ্ট্রের মানুষের ভেতর হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধ
রাষ্ট্রকেই আনতে হবে ফিরিয়ে মিটিয়ে ঝাল ক্রোধ!
আমি নাগরিক, অরণ্য-নদী-পাহাড় আমার
আমি নাগরিক পৈতৃক সম্পত্তি একান্তই আমার
আমাকে যদি আমার অধিকার ভোগ করতে না দাও
তাহলে জবাব দাও হে রাষ্ট্রতন্ত্র, তুমি কার?
এ আইন প্রণেতা কে? এ আইন কার জন্য?
কাকে রক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয় কলম মিথ্যা কথা বলে?
কাকে রক্ষার জন্য জনগনের টাকায় বেতন ভোগ করা বাহিনী পোশাকের অমর্যাদা করে?
রাস্তায় – পার্কে-অফিসে -আদালতে আইনের বিরূপ ব্যবহার
রাষ্ট্রকে ব্যথিত করে না?
জেগে ওঠো জনগন,ফুঁসে ওঠো জনগণ
ভূতের বর পাও কি না দেখো…
শাহানা সিরাজী
কবি প্রাবন্ধিক ও কথাসাহিত্যিক
ঢাকা