বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ;সারাদেশে নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত
আবহাওয়া প্রতিবেদকঃ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই লঘুচাপ পর্যায়ক্রমে নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঘূর্ণিঝড় আসানিতে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশের আট বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দেখা গেছে। এজন্য কিছু এলাকার নদীবন্দরকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত এবং কিছু এলাকায় ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সাগরের বিশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়, দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও আশপাশের এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরো ঘনীভূত হতে পারে।
এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে পরবর্তী নির্দেশনা পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, সকালে আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি পরিবর্তিত হয়ে পরিণত হবে গভীর লঘুচাপে। পরে নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপের পর এটি ঘূর্ণিঝড় ‘আসানিতে’ রূপ নেবে। এখন পর্যন্ত লঘুচাপটি বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার দিকে মুখ করে আছে। তবে লঘুচাপটির গতিপথ বারবার বদলাচ্ছে। এ জন্য বলা মুশকিল, এটি তৈরি হলেও আসলে কোন দিকে যাবে? তবে প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী—এটি বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় আঘাত হানতে পারে।
আমেরিকার নৌবাহিনী পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক বাংলাদেশি পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, গতকাল শুক্রবার সকালে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে (আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিমে) একটি নিম্নচাপ ও নিম্নচাপ কেন্দ্রে বাতাসের সুস্পষ্ট ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে নিম্নচাপটি আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ার থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্হান করছে। সেখানে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সমুদ্রের পানির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দরকার ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই স্হানে উলম্ব বায়ু শিয়ারের মান ৫ থেকে ১৫ নটিক্যাল মাইল, যা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য খুবই আদর্শ অবস্হা নির্দেশ করে।
তিনি জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এই নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রবল সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করে ও বাতাসের গতি বৃদ্ধি পেয়ে ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক পর্যায় ডিপ্রেশন ও ডিপ-ডিপ্রেশনে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
নিম্নচাপকেন্দ্রে বর্তমানে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার। বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় ৬৪ কিলোমিটারের বেশি উঠলে নিম্নচাপটিকে ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ নামকরণ করা হবে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টার আগে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, ঘূর্ণিঝড়টি কোন স্হানের ওপর দিয়ে স্হলভাগে আঘাত করবে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের আকাশে অবস্হান করা পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্হায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
একই কারণে নদীবন্দরের জন্য এর দেওয়া বিশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়, রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, কুমিল্লা এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্হায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্হায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেতের অর্থ হচ্ছে, বন্দর এলাকা ক্ষণস্হায়ী ঝোড়ো আবহাওয়ার কবলে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিবেগের কালবৈশাখীর ক্ষেত্রেও এই সংকেত প্রদর্শিত হয়। এই সংকেত আবহাওয়ার চলতি অবস্হার ওপর সতর্ক নজর রাখারও তাগিদ দেওয়া।