মেঘ-জল – শাহানা সিরাজী
(কবি আমিনুল ইসলামকে)
মেঘ-জল ছুঁয়ে কবিতারা যখন পাখা মেলে দিলো
দেখলাম এক অনিশেষ দুর্ভেদ্য ক্ষণ!
চারদিকে তার কপাট লাগানো
,নিশিজাগানিয়ার মতো খুঁজতে
শুরু করলাম এক টুকরো আলো-
একটু আলো পথের সাঁঝে
একটু স্বপন বুকের মাঝে
ভাঙতে ভাঙতে নদীর মতো নতুন পথের চিরলরেখায়
পহরী এক হাত বাড়ায়-
আবদুল গণি রোড চঞ্চল হয়ে ওঠে
সে চঞ্চলতায় ডানাহীন পাখি এক উড়বার বাসনায়
পাস পায়,”এসো নারী অকপটে বলো,কী চাই তোমার…”
বোবা কলিজা হিম হয়ে যায়
কী বলতে গিয়ে কী বলি হায়!
সে দিন দুর্বার সাহসে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে বলি-
নিঃশ্বাস নিতে চাই।
তারপর মিরপুর২-আবদুল গনি রোড়-পি এস সি’র ট্রায়াঙ্গল পথে পা করেছিলাম ক্ষত-বিক্ষত,
দেহের অনু-পরমাণুর ভয়ার্ত চিৎকারে নির্ভার পাশে যাকে পেয়েছি সে তো আপনিই- কবি আমিনুল ইসলাম।
বহুজাতিক বাণিজ্যের চকমকি মোড়কে প্যাকেট হতে হতে
বেরিয়ে আসি; স্বপ্নালু চোখে আটলান্টিকের উত্তাল ঢেউ
শক্ত হাতে হাল ধরি, দূর হতে ভেসে আসা একটি শব্দ- এ কঠিন পথ,স্থির থাকতে হবে। চূঁড়ায় ফুটে থাকা কালোগোলাপ, সুবাস নিতে হলে অতিরিক্ত অক্সিজেন জমা রাখতেই হবে!
এজিবি কলোনির ধুলো জানে
কতোটা নির্ভরতা ছিলো ওখানে
লীনা ভাবী,লুবনা সজন – প্রাণের উৎসারণ
নিমিষেই মিশে গিয়েছে অস্তিত্বের অনুরণন ।
ক্লান্তি অবসাদ যখন আঁকড়ে ধরেছে
বার বার বহুবার ছুটে গিয়েছি আপনার কাছে।
অনায়াসে বুক চিতিয়ে দিয়েছিলেন সবুজকালির কলমের সামনে- আগার গাওয়ের বাতাসে মিশে আছে সেদিনের জড়ুলকাহিনী! এক এক করে সবাই যখন চলে গেলো আপনিই ধোঁয়াশা কুয়াশায় খুঁজে দিয়েছিলেন ম্যাচবক্স!
ভুলিনি কিছুই-
মানুষের হাতেই মানুষ বন্দি
মানুষে মানুষেই ফন্দি
মানুষের সৃষ্ট বেড়াজালে জড়িয়ে কেটে গেলো পায়ের আঙুল
রক্তাক্ত আমি আর যাবো কোথা! ঝরে পড়া পাতার আশ্রয় আর কোথা! বিষন্নতার মলাটে বন্দিনী এক এলো মেলো পা ফেলে এগিয়ে আসে.. আঁচল পাড়িয়ে যারা চলে গেলো তারা জানলো না এ আঁচলের যন্ত্রণা!
আপনিই কবিতার বরপুত্র
সকাল থেকে দুপুর
দুপুর থেকে বিকাল
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত
কখনো কবিতা, কখনো নির্দেশ, কখনো রাগ -ক্ষোভ- জেদ-
সবই আপনার সাথে। লীনা ভাবীর চায়ের সাথে প্রাণ খোলা হাসি,গল্প আড্ডা কোনটাকে ভোলা যাবে, বলুন?
কেউ কেউ জন্ম দিয়ে আপন
কেউ কেউ ভালোবেসে আপন
আপনি, লীনা ভাবী জন্ম এবং ভালোবাসার ঊর্ধ্বে ব্যাখ্যাতীত অন্য আপন
যার মন কবিতায় সিদ্ধ
যার মন শব্দের ব্যঞ্জনায় আবদ্ধ
তার চেতনায় মিশে থাকা গুল্ম
তার মননে এক বিন্দু শিশির
হতে হতে যদি ঝরে যাই ক্ষতি নেই
শাব্দিক উপযোজনায় ক্ষয় নেই লয় নেই
“আমি” সৃষ্টির মন্ত্র যে পাঠ করে শুনিয়েছে
সে অপার বিশ্ব উজ্জ্বল হতে উজ্জ্বলতায়
যতো দূর ধরা দিক সেখানেই একটি নাম
নিরন্তর শুভেচ্ছা ধবনি বাজিয়ে যাবে
কবি আমিনুল ইসলাম….
শাহানা সিরাজী
কবি প্রাবন্ধিক কথা সাহিত্যিক।