আদম ১৪ – শাহানা সিরাজী
নারী আমি
নারীর প্রতিশব্দ নেই
যাকে রমন করতে পারো সে রমনী
যার বল নেই সে অবলা
যাকে তোমরা কামনা করো সে কামিনী
যাকে তোমরা অহরহ ভোগ করো সে বেশ্যা।
যে থাকে গৃহবন্দী সে গৃহিনী
গৃহ থেকে বের হলেই বারবণিতা
যার জন্য লালায়িত থাকো সে ললনা
আমি নারী,ললনা,বারবণিতা,বেশ্যা,পতিতা, কামিনী, অবলা!
হ্যাঁ তবুও আমিই তোমাদের মা
আমার দেহ চুষে,বেয়ে বেড়ে ওঠো তোমরা।
আবার আমাকেই শেকল পরাও
কখনো আইন
কখনো ধর্ম দিয়ে
ইচ্ছে হলে তোমরা গ্রহণ করো
ইচ্ছে হলেই ত্যাগ
আমি নারী
আমার শ্রম- মেধা- যোগ্যতা-বিচক্ষণতা
তোমাদের কাছে বারবণিতা!
ভেবে দেখো লজ্জা কী তোমাদেরও নেই?
কিসে তফাৎ তোমাদের সাথে আমাদের?
কিসে তফাৎ জন্ম-মৃত্যু, ক্ষুধা-তৃষ্ণায়?
কিসে তফাৎ মেধা-মনন, যোগ্যতা-বিচক্ষণতায়?
দৈহিক কাঠামোয় পার্থক্য না থাকলে
কী করে তুমি আদম হতে?
কী করে শিশ্নোদরপরায়ণ হতে?
উত্থিত শিশ্ন কোথায় জমা রাখতে?
বংশের প্রদীপ কী করে জ্বালাতে?
একাই তুমি পারতে?
তবে কেন নারীকেই, হাওয়াকেই পদে পদে বাঁধা দাও?
তাকেই কেন অবরুদ্ধ থাকতে হবে?
তাকেই কেন অবদমিত করো?
অর্ধেক পৃথিবী হাওয়ার
বাকি অর্ধেক তোমার।
হাওয়ার অংশ নিয়ে হাওয়া যদি ফিরে যায়
তোমার অংশ তলিয়ে যাবে।
পারবে ব্যালেন্স রাখতে?
হাওয়া ইশ্বরের মুখোমুখি দাঁড়ায়-
মুখে কথা নেই,চোখেও জল নেই
ইশ্বর ভয়ার্ত কন্ঠে হাওয়াকে ডাকে,
কাছে এসো,আরো কাছে-
যে ধর্মের জালে তোমাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে
সে ধর্মই বলে কেয়ামতের মাঠে আদমের অস্তিত্বই থাকবে না
ঈসার জন্যই
হাজারো আদমের লজ্জা ঢাকার জন্য
সেদিন তোমার নামই উচ্চারিত হবে
সে মা মা ডাকে তুমিই আন্দোলিত হবে
সে আরশের পাশে হাওয়াই বসবে!
শান্ত হাওয়া ধীর কণ্ঠে বলে-
ওসব আমার চাই না
আমার অর্ধেক দুনিয়া ধবংস করো
আদমের অংশ থাক তার উদ্যতপকেটে!
আদম হাঁটু মুড়ে ইশ্বরের সামনে নতজানু-
নারীর একটি যুযুৎসই প্রতিশব্দ দাও
ইশ্বর বজ্র কণ্ঠে হুঙ্কার ছাড়ে
মা…..
শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর সাধারণ
পিটিআই মুন্সীগঞ্জ,
কবি,প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।