সিআইডি প্রধানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুপারিশে পুলিশ বাহিনীর ভেতরে চাপা ক্ষোভ
বিশেষ প্রতিবেদকঃ চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে আরও এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি সিআইডির প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
চিঠিতে সিআইডি’র অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমানকে (বিপি- ৬২৮৯০২০৯১৮) আগামী ৩১ জুলাই থেকে এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়য়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সম্প্রতি অবসর-পরবর্তী এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য পুলিশ সদর দফতরে একটি আবেদন করেছিলেন সিআইডি প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান। গত ১ জুন পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট-১) কাজী জিয়া উদ্দিন আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠিয়ে দেন। মন্ত্রণালয় থেকে সেই আবেদন পাঠানো হলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
এদিকে অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আবেদন নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পর কাউকে আবারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া মানে অন্যান্য কর্মকর্তাদের যথাযথ পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা। এতে কর্মকর্তারা ‘ডিমরালাইজড’ হন। এসব বিষয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ওপর প্রভাব ফেলে। সবাই চাকরি জীবনে যথাযথ নিয়মে পদোন্নতি পেতে চান। এটি যেকোনও কর্মকর্তারই নৈতিক অধিকার। কিন্তু বাহিনীতে শীর্ষ পর্যায়ে পদের সংখ্যা কম থাকায় যথাযথ যোগ্যতা থাকার পরও অনেকে কাঙ্ক্ষিত পদে যেতে পারেন না।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ প্রধানের পদ একটি। একটি ব্যাচ থেকে একজনের বেশি এই পদে আসীন হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে পুলিশের কর্মকর্তারা চাকরি জীবনে অন্তত অতিরিক্ত আইজিপি বা ডিআইজি হিসেবে চাকরি করার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু কোনও ব্যাচের কেউ একজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলে ওই ব্যাচসহ অধস্তন ব্যাচ বা কর্মকর্তারা পদোন্নতি বঞ্চিত হন।
পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আবেদন নিয়েই অনেকের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগের সুপারিশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর এই ক্ষোভের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে পুলিশ কর্মকর্তাদের অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবারের বৈঠকের এজেন্ডা ছিল অ্যাসোসিয়েশনের পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম নিয়ে। কিন্তু এজেন্ডার বাইরে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে পদের সংখ্যা কম থাকার কারণে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেন। শীর্ষ পর্যায়ের পদের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রসঙ্গটিও চলে আসে। এ সময় অনেকেই শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আপত্তি জানিয়ে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, বৈঠকের এজেন্ডা ছিল অ্যাসোসিয়েশনের পরবর্তী এজিএম নিয়ে। এর বাইরে অন্য কোনও এজেন্ডা ছিল না। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সহ অন্যান্য আলোচনার বিষয়টি তিনি নাকচ করে দেন।