ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় ঈদের ছুটি শেষে অফিস খুললেও আফিসে নাই কর্মকর্তারা
সাগর চৌধুরীঃ পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন দিনের ছুটি শেষ হয়েছে গতকাল শনিবার (১৫ মে)।
আজ রবিবার (১৬ মে) থেকে খুলেছে অফিস। পাশাপাশি খুলেছে ব্যাংক-বিমা এবং শেয়ার বাজারও।
সরকারের এমন নির্দেশনা থাকলেও ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক কর্মকর্তাই অফিস করছেন না।
বৃহস্পতিবার (১৩ মে) থেকে তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়। শুক্রবার (১৪ মে) পালিত হয় ঈদুল ফিতর। সাধারণ নিয়মানুযায়ী, রমজান মাস ২৯ দিনে হিসাব করে ঈদুল ফিতরের ছুটি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মানুষকে কর্মস্থলে রাখতে বৃহস্পতিবার (১৩ মে) থেকে ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।
ঈদের ছুটি শেষে রবিবার সকাল থেকেই অফিসে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও অফিস শুরু হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি তুলনামূলক অনেক কম।
জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায় আজ সকাল থেকে যোগাযোগ করেও অফিসারদের পাওয়া যায় নি।
বিষয়টি জানতে ভোলা জেলা এলজিডি অফিসের অফিস প্রধান আবদুর রাজ্জাক এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করে চেষ্ঠা করলেও তিনি ফোন করেন নি। জানতেও পারি নি, অফিস প্রধান হয়েও কেন অফিস করছেন না?
এদিকে ভোলা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান হিসাবে আঃ মালেক মিয়া থাকলেও সাধারন মানুষ কবে তার দেখা পেয়েছে সেটাও অজানা। কারণ তিনি ভোলায় সংযুক্ত থাকলেও অফিস করেন নাকি বরিশাল ও ঢাকায়। ইদের আগেও তাকে অফিসে পাওয়া যায় নি। ইদের পরেও আজ তার অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায় নি।
এদিকে ভোলা জেলার সিভিল সার্জন অফিসের অফিস প্রধানের কাছে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, সব অফিসার তো আর এক রকম না। আর সব ডাক্তারও এক রকম না। তারপরও যারা আজ অফিস করছেন না, তারা সরকারের আইন ভঙ্গ করছেন। উর্ধতন কর্মকর্তারা চাইলে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন।
দৌলতখান উপজেলার uno মোহাম্মদ তারেক হাওলাদার বলেন, এমনিতেই এবছর ইদের ছুটি কম। আমি তো আর ছুটি যেতে পারি নি। দৌলতখানে ছিলাম। অনেক অফিসার পরিবারের সাথে ইদ করার জন্য গিয়েছে। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম, অনেকেই অফিসে আসেন নি। দেখে ব্যবস্থা নেব।
জেলা জজ পদমর্যাদার একজন সিনিয়র কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে, নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, এটা সরকারী আইন লঙ্গন। অফিসে উপস্থিত না হলে, সরকারী বিধান মত শাস্তি মুলক ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পারে উর্ধতন কর্মকর্তারা।
তবে জেলার ভোলা সদর থেকে শুরু করে দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন,চরফ্যাশন ও মনপুরায় একই চিত্র লক্ষ করা গেছে।
তবে চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় এই চিত্র বয়াবহ রুপ ধারন করেছে। স্থানীয়রা বলছেন,এখানকার অনেক সরকারী কর্মকর্তা ইচ্ছামত অফিস করছেন। ইদের আগেও অনেক কর্মকর্তা অফিস করেন নি,অফিস না করা সম্পর্কে উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানালেও কোন সুরাহা করেনি উর্ধতনরা।
প্রতিটি উপজেলায় হরহামেশাই দেখা মেলে এমন চিত্রের। সাধারন মানুষ কার কাছে অভিযোগ করবে এমন কথাই জানতে চায়!
তবে তজুমদ্দিন উপজেলার uno পল্লব কুমার হাজরা বলেন,’ঈদে কর্মস্থল ত্যাগ না করার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা উপজেলার সকল দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রমসহ জরুরি সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা অফিস করছেন মর্মে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে কেউ কর্মস্থলে না থাকলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
অভিযোগের সুরে ভোলার একজন ওষধ ব্যবসায়ী বলেন, ড্রাগসুপার নামে একটা পদ আছে জেলায়, কিন্তু বহু খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায় না। কিন্তু সরকারী খাতায় তিনি নাকি রোজ হাজির থাকেন।
ভোলা জেলা তথ্য কর্মকর্তা মোঃ নুরুল আমীন কি ভোলায় থাকেন নাকি ভোলার বাহিরে থাকেন এমন প্রশ্ন খোদ জেলার প্রশাসন কার্যালয়ের? কারণ, ইদের আগেও বহুদিন ভোলা জেলার জেলা তথ্য কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে পাওয়া যায় নি। আজও সরোজমিনে গিয়ে তাকে অফিসে পাওয়া যায় নি।
কর্মকর্তাদের অফিস না করার বিষয়ে জানতে ভোলা জেলার জেলা প্রশাসক তৌফিক এলাহি চৌধুরী কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাকে ধন্যবাদ প্রশ্ন করার জন্য, কিন্তু অফিস টাইমে অফিস করবে না এটা খুবই খারাপ লাগল। তারপরও আমি খোঁজ নিচ্ছি। দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করব।