রমজান রোজা ও ঈদ – শাহানা সিরাজী

PicsArt_04-24-09.54.33.jpg

রমজান রোজা ও ঈদ – শাহানা সিরাজী

১.

ইসলামের পাঁচটি খুঁটির মধ্যে রোজা তৃতীয়। অন্যগুলো হলো কালিমা, নামাজ, যাকাত ও হজ্জ্ব। রোজা অদৃশ্যমান ইবাদত। কারণ রোজাদার ব্যক্তিই জানেন তিনি রোজা রেখেছেন কি না অন্য কেউ জানার কথা নয়। রোজা মানে সংযম। সুবহে সাদিক থেকে সূর্য়াস্ত পর্য়ন্ত যাবতীয় পানাহার থেকে বিরত থাকা এবং যৌন মিলন, মিথ্যা কথা বলা, ফেৎনা সৃষ্টি করা, ছোগলখুরি করা,ওজনে কম দেয়া, হঠকারিতা, ঘুষ, সুদ, জুয়া, প্রতারণা, আত্মীয়র হক আদায় না করা, প্রতিবেশির হক আদায় না করা, ঝগড়া ফ্যাসাদ ইত্যাদি নেতিবাচক আচরণ থেকে নিজেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম বা রোজা বা সংযম করা। না খেয়ে থাকলে হয় উপবাস কিন্তু সংযমের মূল লক্ষ নিজেকে পরিশুদ্ধ করা। আপন আপন কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকা। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করা।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা ফরহেজগারী অর্জন করতে পারো।” (২:১৮৩)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়,
এক: রোজা রাখাটা ঈমানদারীর লক্ষণ। রোজা মানুষের ভেতর আল্লাহর প্রতি ভয়ের চেতনা সৃষ্টি করে।
দুই: আল্লাহ আমাদের ইবাদতের মুখাপেক্ষী নয়,বরং আল্লাহর বিধান পালন করা আমাদের জন্যই কল্যাণকর।
আল্লাহ আরো বলেন,“রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য ফরজ। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় ওই সংখ্যক রোজা রাখতে হবে। রোজা যাদের জন্য কষ্টদায়ক যেমন অতি বৃদ্ধদের জন্য, তারা অবশ্যই একজন অভাবগ্রস্ত রোজাদারকে অন্নদান করবে। যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেশি সৎ কাজ করে, তা তার জন্য বেশি কল্যাণকর। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে, তবে বুঝতে রোজা রাখাই তোমাদের জন্য বেশি কল্যানকর”( ২:১৮৪)
এ আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান; প্রত্যেক মানুষের জন্য উপযুক্ত বিধান রয়েছে।তাই রোজার বিধান অসুস্থ,সফরকারী ও সুস্থদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রয়েছে।

মহান আল্লাহ আরো বলেন,
“ পবিত্র রমজান মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। কুরআন সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শনকারী এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী।সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন রোজা রাখে। কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। তোমাদের জন্য যা সহজ তাই চান। যা তোমাদের জন্য কষ্টকর তা চান না। তাই তোমরা রোজা করবে এবং রোজার সমান সংখ্যা পূরণ করবে এবং সৎপথে পরিচালিত করার জন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা গাইবে ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে”(২:১৮৫)

আগের আয়াতে রোজা ফরজ হবার মূলনীতি এবং এর কিছু বিধান তুলে ধরা হয়েছে। এ আয়াতে রমজান মাসে রোজা রাখার কথা সুনির্দিষ্টি করে বলা হয়েছে। এ মাসের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাত্রিতে পবিত্র কুরআন লাওহে মাহফুজে একযোগে নাজিল হয়। তাই অন্য যে কোন মাসের চেয়ে এ মাস গুরুত্বপূর্ণ। ‘রমজান’ শব্দের অর্থ পোড়ানো। অর্থাৎ বান্দা তার যাবতীয় পাপ এ মাসে রোজা রেখে, দান করে, নফল ইবাদত করে নিজের পাপ পুড়িয়ে পাপমুক্ত হতে পারে। তাই এ আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের রোজা রাখার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। সুরা বাকারার ১৮৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের দূরত্ব কতখানি তা বর্ণনা করছেন এ ভাবে-
“ আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে প্রশ্ন করে, তখন বলে দিন আমি তো কাছেই রয়েছি। আহবনকারী যখন আমাকে আহবান কার আমি সাড়া দিই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমাতে বিশ্বাস স্থাপন করুক, যাতে তারা ঠিক ভাবে চলতে পারে এবং পূর্ণতা লাভ করে।
এক ব্যক্তি রাসুলকে (স) বলেছেন, আল্লাহ কী আমাদের কাছে রয়েছেন যে চুপি চুপি ডাকলে শুনবেন? তিনি তো অনেক দূরে উচ্চস্বরে ডাকলেও শুনবেন না। তার প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। এবং আল্লাহ বলেন আমি মানুষের কল্পনার চেয়েও কাছে রয়েছি। সুরা ক্কাফের ১৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আমি মানুষের ঘাড়ের রগের চেয়েও কাছে আছি”সুতরাং যে কোন অবস্থায় যে কোন স্থানে বসে দোয়া কর না কেন আল্লাহ পাক শুনবেন।

২.

রোজা বা সিয়াম মুসলিম উম্মার জন্য সুসংবাদ বহনকারি মাস। এ মাসে যে প্রকৃত অর্থে সিয়াম বা রোজা পালন করবে আল্লাহ দিনে এবং রাতে তার দোয়া কবুল করবে এবং তাকে মাফ করে জান্নাতের দরজা তার জন্য খুলে দেবে। সুবহান্নাল্লাহ রোজা আমাদের জন্য কতই না সুসংবাদবহনকারী। হাদীসে বলা হয়েছে,“যখন রমজান আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখা হয়” (মুসলিম)

এ মাস ক্ষমা লাভের মাস। রমজান এলো আর কোন মুসলিম ক্ষমা লাভ করতে পারলো না তার মতো হতভাগা আর কে হতে পারে! রাসুল (স) বলেছেন, ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধুসরিত হোক যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেলো অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারলো না।”( তিরমিযি)

রমজানের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (স) বলেছেন, “রমজানে উমরা করা আমার সাথে হজ্জ্ব করার মতো সওয়াবের সামিল।”(বুখারী)

রোজা মানে না খেয়ে থাকা নয়। পূর্বেই বলেছি রোজা যাবতীয় পূণ্যের সমাহার। এ মাসের নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য, এ মাস পাপ মুক্তির মাস, ক্ষমা লাভের মাস। পাপমুক্তি বা ভালো কাজের মধ্যে অন্যতম হলো দান করা। রোজা মুমিনের আমলের বসন্তকাল। এ মাসে বান্দা যত আমল করবে তার পরকালীন ভাÐার ততই সমৃদ্ধ হবে। এ আমলেন অন্যতম হলো দান সদকা। বিপদগ্রস্তের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। মিসকিনের প্রতি সদয় হওয়া। মহানবী (স) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উদার ও দানশীল। রমজানে জিবরাইল তাঁর কাছে আসতেন । কুরআন পড়ে শোনাতেন। তখন তাঁর ভেতর দানশীলতা বেড়ে যেত। আনাস (র) হতে বর্ণিত “আমি রাসুলের চেয়ে বেশি দানশীল আর কাউকে দেখিনি”(তিরমিযি)
দান শীলতা একটি মহৎ গুণ। রাসুল(স) বলেছেন “উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম” মাহে রমজানে দানের ফজিলত অনেক বেশি। তিনি এ মাসকে হামদর্দি বা সহানুভূতির মাস বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ রমজান মাসে গরীব-দুঃখী, ইয়াতিম-মিসকিনদের প্রতি দয়া সাহায্য ও অনুগ্রহের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ মাসে আল্লাহ প্রতিটি সফল কাজের সওয়াব সত্তর গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ জন্য প্রত্যেক রোজাদারের উচিত সাধ্যানুযায়ী অনাথ, আর্ত,সহায়-সম্বলহীন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহর পথে ব্যয় করো, নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর তোমরা মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো, আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালোবাসেন”। রোজার মাসে দান সদকা করে অভ্যস্থ হলে পরবর্তী এগারো মাসও মানুষ দান সদকা করা শিকবে। রোজা শেখার মাস। ভালো কাজের অনুশীলনরে মাস।
রাসুল (স) বলেছেন,“ আল্লাহতায়ালা মানব সন্তানকে লক্ষ করে বলেছেন তোমরা দান করো, তাহলে তোমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দান করা হবে।”

হয়রত আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত,রাসুল(স) বলেছেন,“দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের নিকটতম এবং মানুষের নিকটতম হয়ে থাকে। আর দূরে থাকে জাহান্নাম থেকে। কৃপণ ব্যক্তি দূরে থাকে আাল্লাহ বেহেশত আর মানুষের কাছ থেকে। এবং জাহান্নাম তার কাছাকাছি থাকে। অবশ্যই একজন জ্ঞানহীন দাতা একজন কৃপন ইবাদতকারীর তুলনায় অধিক প্রিয়।”
রমজান মাসের অন্যতম দান ইফতার।
এ সম্পর্কে রাসুল(স) বলেন,“ কেউ যদি রমজান মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে ঐ ইফতার করানোটা তার গুনাহ মাফের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের উপায় হবে অথচ রোজাদারের নেকির কোন ঘাটতি পড়বে না” ইফতারের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী(স) বলেন,“ রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে
এক. ইফতারের সময়
দুই.মহান আল্লাহর সংগে সাক্ষাতের সময়।(বোখারী ও মুসলিম)
সুতরাং এ থেকে আমরা রোজা ও রোজার মাসের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি।

আমাদের সমাজে এমন অনেক পরিবার আছে যারা ইফতার সেহরী সংগ্রহ করতে হিমশিম খায়। আবার এমন লোকও আছে যারা ইফতার পার্টি করে বহু খাবার নষ্ট করে। সে সব পার্টিতে দুঃখী মানুষের প্রবেশের অধিকার থাকে না। এ সব পার্টি আদতে কোন কাজে আসে না। বরঞ্চ ফুটপাতে যারা অপেক্ষা করছে কারো সাহায্যের তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

ইমাম গাযযালীর মতে , ইবাদতকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে অবশ্যই ইলম হাসিল করতে হবে। ইলম হলো আল্লাহর নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালন করা, হালাল রুজি করা। যা আমরা খেয়ে জীবন ধারণ করি তা যদি হালাল না হয় তা হলে ইবাদতে ইলাহী কবুল হবে না। মহান আল্লাহ তখনই খুঁজতে থাকেন বান্দাকে কী ভাবে পাপমুক্ত করা যায়। অবৈধ ইনকাম থেকে দান করলেও ইলম অনুযায়ী তা গ্রহণযোগ্য হবে না । তা হলে আল্লাহ সুবহানুতায়ালা মানুষকে কীভাবে ক্ষমা করবেন!

৩.

রমজানে রোজা রাখার পর আসে আনন্দের দিন। রোজা ভঙ্গের দিন। আমাদেও রাসুল এ দিনে দুরাকাত নামাজ পড়ে মিষ্টি খেয়ে রোজা ভঙ্গ করতেন। এ দিনের নাম ঈদের দিন। রোজাদার ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ এর প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতে পারে না। আসুন ঈদ নিয়ে আলোচনা করি-
ঈদ মানে আনন্দ ঈদ মানে খুশি। ঈদের সামাজিক অর্থ উৎসব আর আভিধানিক অর্থ পুনরাগমন বা বারবার ফিরে আসা। তাই প্রতি বছরই মুসলমানদের জীবনের ফিরে আসে খুশির ঈদ। প্রথমটি উদযাপিত হয় দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর। যাকে আমরা বলি ঈদ-উল-ফিতর বা রোজার ঈদ, আর অন্যটি আত্মত্যাগের কোরবানীর ঈদ বা ঈদ-উল-আজহা। এই দুইটি ঈদই হলো মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশে ঈদের দিন দুইটি খুবই জাঁজমকের সাথে উৎসবমূখর পরিবেশে পালিত হয়। সবাই এ দিন যার যার সাধ্যানুযায়ী ভালো পোশাক পরে। ঘরে ঘরে উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করে। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরাও এ আনন্দের অংশীদার হয়। দরিদ্র ও গরীবেরাও এ দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদা আনন্দের সাথে পালন করে। মুসলমানেরা এ দিন কৃতজ্ঞচিত্তে খুতবাসহ ঈদের দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। আত্মীয়-স্বজনের সাথে কুশল বিনিময় করেন। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই কোলাকুলিসহ সালাম ও শুভেচ্ছার হাত বাড়িয়ে দেয়। সমাজের ধনী ও সক্ষম ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট হারে গরিবদের ফিতরা বা শর্তহীন অনুদান বিতরণ করে থাকে যা ধর্মীয় দিক থেকে ধনীদের জন্য বাধ্যতামূলক।

এই যে ঈদ, এই উৎসবের কীভাবে উদ্ভব হয়েছে তার ইতিহাস ও তথ্য সঠিকভাবে আজও জানা যায়নি। নানা ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সূত্র ও তথ্য থেকে বাংলাদেশে রোজাপালন এবং ঈদ-উল-ফিতর বা ঈদ-উল-আজহা উদযাপনের যে ইতিহাস জানা যায় তাতে ১২০৪ খৃস্টাব্দে বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে এলেও এদেশে নামাজ, রোজা ও ঈদোৎসবের প্রচলন হয়েছে তার বেশ আগে থেকেই। বঙ্গদেশ যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুসলিম অধিকারে আসার বহু আগে থেকেই মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ ও সাধকরা ধর্ম-প্রচারের লক্ষ্যে উত্তর ভারত হয়ে পূর্ব-বাংলায় আসেন। অন্যদিকে আরবীয় এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের বণিকেরা চট্টগ্রাম নৌবন্দরের মাধ্যমেও বাংলার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এভাবেই একটা মুসলিম সাংস্কৃতিক তথা ধর্মীয় প্রভাব পূর্ব-বাংলায় পড়েছিল।

অষ্টম শতকের দিকেই বাংলাদেশে মুসলমানদের আগমন ঘটে। ফলে এই সুফি, দরবেশ এবং তুর্ক-আরব বণিকদের মাধ্যমে বর্তমান বাংলাদেশে রোজা, নামাজ ও ঈদের সূত্রপাত হয়েছে বলে মনে করা হয়। তবে সে যুগে তা ছিল বহিরাগত ধর্মসাধক, ব্যবসায়ী ও ভ্রমণকারীদের ধর্মীয় কৃত্য ও উৎসব। এদেশবাসীর ধর্ম-সামাজিক পার্বণ নয়। এদেশে রোজা পালনের প্রথম ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যায় তাসকিরাতুল সোলহা নামক গ্রন্থে। এ গ্রন্থে দেখা যায় আরবের জনৈক শেখ উল খিদা হিজরি ৩৪১ সন মুতাবিক ৯৪১ খৃস্টাব্দে ঢাকায় আসেন। বঙ্গদেশে-ইসলাম আগমন পূর্বকালে শাহ সুলতান রুমি নেত্রকোনা এবং বাবা আদম শহীদ বিক্রমপুরের রামপালে আস্তাানা গেড়ে ইসলাম প্রচার শুরু করেন বলে জানা যায়। শেখউল খিদা চন্দ বংশীয় রাজা শ্রীচন্দের শাসনকালে (৯০৫-৯৫৫ খৃস্টাব্দ) বাংলায় আগমন করেন বলে অনুমান করা হয়। তবে এদের প্রভাবে পূর্ব বাংলায় রোজা, নামাজ ও ঈদ প্রচলিত হয়েছিল তা বলা সমীচীন নয়। এঁরা ব্যক্তিগত জীবনে ওইসব ইসলাম ধর্মীয় কৃত্য ও উৎসব পালন করতেন একথা বলাই সঙ্গত। কারণ বাংলাদেশে ‘নামাজ’, ‘ রোজা’ বা ‘খুদা হাফেজ’ শব্দের ব্যাপক প্রচলনে বোঝা যায় ইরানীরা বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু করলে কারণ শব্দগুলি আরবীয় ভাষার নয়, ফার্সি ভাষার।

ইতিহাসবিদ হাকিম হাবীবুর রহমান বলেছেন : ১৬৪০ খৃ. বাংলার সুবেদার শাহসুজার নির্দেশে তাঁর প্রধান অমাত্য মীর আবুল কাসেম একটি ঈদগাহ নির্মাণ করেন। এর দৈর্ঘ ছিল ২৪৫ ফুট ও প্রস্থ ১৩৭ ফুট। নির্মাণকালে ঈদগাহটি ভূমি থেকে বার ফুট উঁচু করা হয়। ঈদগাহের পশ্চিম দিকে ১৫ ফুট উঁচু প্রাচির দিয়ে ঘিরে সেখানে মেহরাব ও মিনার নির্মাণ করা হয়। মুঘল আমলে দরবার, আদালত, বাজার ও সৈন্য ছাউনির কেন্দ্রে অবস্থিত ছিল এ ঈদগাহ। প্রথমদিকে শুধু সুবেদার, নায়েবে নাজিম ও অভিজাত মুঘল কর্মকর্তা এবং তাদের স্বজন-বান্ধবরাই এখানে নামাজ পড়তে পারতেন। পরে ঈদগাহটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই ঈদগাহর পাশে উনিশ শতকের শেষদিক থেকে একটি মেলারও আয়োজন করা হয়। এই ঈদগার পার্শ্বে একটি সুন্দর সেতুর চিহ্নও রয়েছে। ঈদগাটি এখন পুরাকীর্তি।

শামসুজ্জামান খান তার ‘বাংলায় ঈদ, বাঙালির ঈদ’ নিবন্ধে বলেছেন ‘ঈদোৎসব শাস্ত্রীয় ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তবে দ্বাদশ শতকের বাংলায় ইসলাম এলেও চার/পাঁচশত বছর ধরে শাস্ত্রীয় ইসলামের অনুপুঙ্খ অনুসরণ হয়েছিলো তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। সেকালের বাংলায় ঈদোৎসবেও তেমন কোনো ঘটা লক্ষ্য করা যায় না। এর কারণ হয়তো দুটি:এক. গ্রাম-বাংলার মুসলমানেরা ছিলো দরিদ্র এবং দুই. মুসলমানের মধ্যে স্বতন্ত্র কমিউনিটির বোধ তখনো তেমন প্রবল হয়নি। ফলে ধর্মীয় উৎসবকে একটা সামাজিক ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর অবস্থাও তখনো সৃষ্টি হয়নি। বৃহৎ বাংলায় ঈদোৎসব তাই সপ্তদশ, অষ্টাদশ এমনকি ঊনবিংশ শতকেও তেমন দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। নবাব-বাদশারা ঈদোৎসব করতেন, তবে তা সীমিত ছিলো অভিজাত ও উচ্চবিত্তের মধ্যে, সাধারণ মানুষের কাছে সামাজিক উৎসব হিসাবে ঈদের তেমন কোনো তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা ছিলো না। ঊনিশ শতক ধরে বাংলাদেশে যে ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন চলে তার প্রভাব ভালোভাবেই পড়েছে নগর জীবন ও গ্রামীণ অর্থবিত্তশালী বা শিক্ষিত সমাজের ওপর।

মুঘল যুগে ঈদের দিন যে হইচই বা আনন্দ হতো তা মুঘল ও বনেদি পরিবারের উচ্চপদস্থ এবং ধনাঢ্য মুসলমানদের মধ্যে কিছুটা হলেও সীমাবদ্ধ ছিল। তার সাথে সাধারণ মানুষের ব্যবধান না থাকলেও কিছু দূরত্ব ছিল। তাই ঈদ এ দেশে জাতীয় উৎসবে রূপান্তর হতে সময় নিয়েছে। মুঘলরা যে ঈদের গুরুত্ব দিতেন তা বোঝা যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় খোলামেলা গণমুখী শাহি ঈদগাহের উপস্থিতি দেখে। সুফিসাধকদের ভূমিকা ছিল এ ক্ষেত্রে আলাদা, অধিকতর গণমুখী। উনিশ শতকের শেষ দিকে ঈদের আনুষঙ্গিক আনন্দ হিসেবে যুক্ত হয় একটি নতুন উপাদান লোকজ মেলা। সে ধারা আজো কমবেশি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ঈদ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু ঈদ আনন্দমেলার আয়োজন করা হয়। সামর্থের জাড়াতালির ভেতরও ঈদবাজার এখন অনেক বেশি জমজমাট ও উৎসবমুখর।

পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মে যেসব প্রধান ধর্মীয় উৎসব উদযাপিত হয়, সেগুলোর মধ্যে ঈদুল ফিতর হচ্ছে সময়ের মাপে কনিষ্ঠতম, কিন্তু আয়োজন-প্রয়োজনে ব্যাপকতর। এই মহান ও পুণ্যময় উৎসবের উদযাপন শুরুহয় আজ থেকে ১৩৮৮ সৌর বছর আগে থেকে। ইসলামের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা:এর মদিনাতে হিজরতের অব্যবহিত পরই ঈদুল ফিতর উৎসব পালন শুরু হয়। আরবদের ইহুদি ধ্যানধারণা ও জাহেলি প্রথার পরিবর্তে দুই ঈদ ছিল আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য ঘোষিত উপহার। ইসলামি আদর্শে উজ্জীবিত আরববাসী রাসুল সা:-এর নির্দেশে শুরুকরল ঈদ-উল- ফিতর ও ঈদ-উল-আজহা উৎসব উদযাপন। এর আগে পৌত্তলিক ভাবনায় অগ্নিপূজকদের নওরোজ এবং মূর্তিবাদীদের মিহিরজান নামে দু’টি উৎসবে মদিনাবাসী শরিক হতো। আরবরা এ মেলায় অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ কাজে মেতে ওঠতো। একই সাথে মেলায় আদিম উচ্ছ¡লতায়ও মেতে উঠত তারা। সেগুলো ছিল উচ্চবিত্তের খেয়ালিপনার উৎসব। এর পরিবর্তে জন্ম নিলো শ্রেণিবৈষম্য-বিবর্জিত, পঙ্কিলতা ও অশালীনতামুক্ত ইবাদতের আমেজমাখা সুনির্মল আনন্দে ভরা ঈদআনন্দ। আমেজের দিক থেকে পবিত্র ও স্নিগ্ধ, আচরণের দিক থেকে প্রীতি ও মিলনের উৎসব ঈদুল ফিতর। ইসলামের ধর্মীয় উৎসব হিসেবে ঈদুল ফিতরের আনুষ্ঠানিকতার দিকটি প্রধানত মুসলমানদের মধ্যেই সীমিত থাকে। তবে ইসলাম সাম্য-মৈত্রী, শান্তি স¤প্রীতির ধর্ম ও ঈদের অর্থ আনন্দ বিধায় ঈদ সব মানবের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনে। জাতীয় জীবনে এর রূপময়তা সর্বত্র চোখে পড়ে। সব ক্ষেত্রে এর ইতিবাচক প্রভাব অসাধারণ হয়ে ধরা দেয়। ভিন্ন ধর্মের মানুষও ঈদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সুফল ভোগ করে। ঈদ উৎসবে গতানুগতিক জীবনধারার অধ্যাত্মবাদের সাথে যোগ হয় প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর ভিন্নমাত্রিক জীবনধারা। তাই ঈদের আর্থসামাজিক গুরুত্বও অপরিসীম। ঈদের সাথে রমজানের আত্মশুদ্ধির কথাও বলা যেতে পারে। কারণ রোজার সাথে ঈদের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ। তাতে বদল হয়েছে ধর্মের অবিমিশ্র ও শুদ্ধ রূপেরও। যে কারণে বাংলাদেশের মুসলমানের সাথে আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনচর্চা এক হলেও উৎসব অনুষ্ঠানে রকমফের সহজেই চোখে পড়ে। এর মুখ্য কারণ, পোশাক-আশাক ও খাদ্যাভ্যাসে জাতীয় বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের তো বটেই, বিশ্বের মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ।

বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে দুর্গাপূজা ও ঈদ পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে শান্তি পূর্ণভাবে। এতে দুই ধর্মের লোকদের ধর্ম পালনে শান্তি প্রিয় মনোভাব এবং সামাজিক স¤প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োজিত ছিলো। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে, নির্ভয়ে এবং সংঘাতমুক্তভাবে পারস্পরিক ধর্মীয় উৎসব পালন করবেন- এমনটাই কাম্য।

৪.

ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর সামাজিক তাৎপর্য ছাড়াও রয়েছে অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও গুরুত্ব। ঈদ উপলক্ষে পোশাক ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য কেনাকাটা, অতিথি আপ্যায়নের ধুমধাম। শহরে আলো ঝলমলে, সুসজ্জিতকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত থাকেন অনুষ্ঠানস্থলের আয়োজকবৃন্দ। সেই সঙ্গে ধর্মীয় সংস্কৃতির অনুষ্ঠানাদি, কার্ড বিতরণ, আলোচনা ও ঘনিষ্ঠজনদের কাছে রাখা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
ঈদ সামনে রেখে প্রতিবারই ঈদের বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে, এতে একই সাথে চাঙ্গা হয়ে ওঠে দেশের অর্থনীতি। পুরো অর্থব্যবস্থা আবর্তিত হয় দেশের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে। দারিদ্র্য হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মানোনয়নের ফলে ঈদকেন্দ্রিক লেনদেন প্রতিবছর বাড়ছে। ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে পাঠায়। ঈদের সময় বৈদেশিক আয়ের প্রবাহ বেড়ে যাওয়া গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। চাঙ্গা হয়ে ওঠে ব্যাংকিং খাতও । এ উপলক্ষ্যে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অন্য সময়ের চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি লেনদেন হয়। অন্য সময় ব্যাংকগুলোতে প্রতিদিন কলমানি লেনদেন হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। ঈদ সামনে রেখে প্রতিদিন কলমানি মার্কেটে লেনদেন হয় সাড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিতে মুদ্রা সরবরাহ, মুদ্রা লেনদেন, আর্থিক কর্মকান্ডের প্রসারই অর্থনীতির জন্য আয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মুদ্রা সরবরাহ গতিশীলতা আনয়ন করে। ঘূর্ণায়মান অর্থনীতির গতিপ্রবাহে যে কোনো ব্যয় অর্থনীতির জন্য আয়। দেশজ উৎপাদনে এর থাকে অনিবার্য অবদান। যে কোনো উৎসব অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গতিশীলতা আনয়ন করে, সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থায় একটা স্বতঃপ্রণোদিত আবহ সৃষ্টি হয়।

তাই মুসলমানদের জীবনের ঈদের তাৎপর্য অনেক। ঈদ অর্থ খুশি এবং ফিতর এসেছে ফিতরা থেকে। সুতরাং ঈদুল ফিতরের অর্থ দাঁড়ায় দানখয়রাতের মাধ্যমে পবিত্র ঈদের উৎসবকে আনন্দে উদ্ভাসিত করে তোলা। জাকাত-ফিতরার মাধ্যমে ধনী ও গরিবের মধ্যকার ভেদাভেদ দূরীভূত হয়। আর এতেই হয় মুসলিম হৃদয় উদ্বেলিত। ঈদুল ফিতরের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতায় পরস্পরের শুভেচ্ছা, আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা বিনিময়ের মাধ্যমে মানবিক ও সামাজিক সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটা হলো ঈদুল ফিতরের সামাজিক তাৎপর্য। সমগ্র বিশ্বের প্রত্যেক মুসলমান যাতে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য রমজান মাসে বেশি হারে দানখয়রাত, জাকাত ও ফিতরা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এটা হলো ঈদুল ফিতরের অর্থনৈতিক তাৎপর্য। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সাদা-কালো নির্বিশেষে একই কাতারে মিলিত হওয়া মানবস¤প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন পবিত্র ঈদ। ঈদ-উল-আজহা ও এর ব্যতিক্রম নয়।

আজকের দিনে ঈদের প্রকৃত তাৎপর্য থেকে মানুষ অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। কলহ-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষের ফলে গোটা সমাজ তলিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান ঈদ নামমাত্র আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন ‘অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ ঈদের বাজারের দিকে তাকিয়ে দেখালেই বোঝা যায়; সবাই কেমন অসহনীয় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তারা অধিক মূল্যবান পোশাক-আশাকে সুসজ্জিত হয়ে সবার দৃষ্টিতে আকর্ষণের চেষ্টা করেন।

আল্লাহ রাববুল আলামিন উম্মতে মোহাম্মদীকে সম্মানিত করে তাদের এ দুটো ঈদ দান করেছেন। আর এ দুটো দিন বিশ্বে যত উৎসবের দিন ও শ্রেষ্ঠ দিন রয়েছে তার সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন ও সেরা ঈদ। ইসলামের এ দু’টো উৎসবের দিন শুধু আনন্দ-ফুর্তির দিন নয়। বরং এ দিন দুটোকে আনন্দ-উৎসব এর সাথে সাথে এই আসমান জমিনের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালার ইবাদত-বন্দেগি দ্বারা সুসজ্জিত করতে পারলেই ঈদের তাৎপর্য আরো বেশি উদ্ভাসিত হবে।
পাড়া প্রতিবেশিনা খেয়ে না পরে আছে অথচ আপনি নানান ভূষণে আবৃত,নানান উপাচারে আপনার টেবিল সজ্জিত সেটি আপনার ক্ষমতার বহিঃ প্রকাশ মাত্র প্রকৃত ঈদ নয়। প্রকৃত আনন্দ ও নেকি পেতে হলে সবাইকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। যে কাতারের নাম ‘মানুষ’।
২০২০-২০২১ সালে এসে আমরা বিশ^বিমারীতে পড়েছি। সারা পৃথিবী এক সাথে এতা বড়ো বিপদে অতীতে আর কখনো পড়েনি। মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে কোন মতে বেঁচে আছে। আমরা দেখি সরকার কর্তৃক নিধর্অরিত ত্রাণও মানুষ পায়নি পাচ্ছে না। কেন পাচ্ছে না? আমরা তো দেশে এখন মেজোরিটি পারসেন্ট মুসলিম । আমাদের রোজার শিক্ষা কোথায় গেলো! তাহলে আপনি কী নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে দাঁড়াবেন। এ দুনিয়া কী শুধূই ভোগ বিলাসের জন্য? আপনার সৎ ইপার্জন দিয়ে যদি আপনি বিলাসী হন তা নিয়ে আল্লাহ আপনাকে তিরষ্কার করতে পারে, হে বান্দা তোকে কো কম দিইনি, সব নিজেই ব্যবহার করেছিস! কিন্তু দুঃখী মানুষের হক না হক করলে আল্লাহ আপনাকে মাফ করবে কী দিয়ে? পুরোবছর পৃথিবীর অর্থনীতিও বদলে গিয়েছে। তথাপিও আমরা ব্যক্তিগত কিংবা সামষ্টিক উদ্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি।
আসুন রোজার ফজিলতের কথা ভেবে নিজের সামর্থকে সকলের মাঝে বন্টন করে প্রকৃত ঈমানদার হয়ে উঠি এবং “মানুষ” হয়ে উঠি।

তথ্যসূত্র: পবিত্র কুরআন
হাদীস
ইন্টারনেট

শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ)
কবি, প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top