ময়নার কাছে যামু – শাহানা সিরাজী

0001-16051546639_20210127_102721_0000.png

ময়নার কাছে যামু – শাহানা সিরাজী

১.
আলমের চায়ের দোকানে তুমুল যুদ্ধ চলছে। আশপাশের মানুষ যার যার উঠান থেকে কান উঁচিয়ে রেখেছে, আলম একটা শান্তশিষ্টলোক তার সাথে আবার কে ঝগড়া করছে?

ময়না বলল, আরে দেখো দেখো, আলম নয় তার দোকানের সামনে অন্য লোকেরা ঝগড়া করছে। ও! তাহলে আজ তার পোয়া বারো! বেচা-বক্রি ভালোই হবে! 
অ! বুঝতে পারছি, হের লাই আবার চিনি চা পাতা বাড়িত তুন নিছে! ময়না আর ফজরের আলাপ জমে উঠেছে। আইজ আলম মুরগী কিনবো পোলাও হবে। পোলাড়ার এই এক খাসলত! দুই টেকা বেচা অইলে তিন টেকা খরচ করে!

ময়না মুখ টিপে হাসে, ভালো মন্দ না খাইলে যে তাগড়া বউ  রাইকতে হাইরবোনি! ফজরও টিপ্পনী কাটতে ছাড়েনি- আমার বউ তাগড়া কম নাকি! তাইলে আমারেও পোলাও মুরগী আনন লাগবো, বুইঝঝি! ময়না হাসে, আরে মুরগী হরে কিনিও, ওই দেখো মারামারির দশা তুঙ্গে! ফজর দাঁত খিলাল করতে করতে সামনে এগোয়,ব্যাপারখানা কী!
পুরো গ্রাম জড়িয়ে পড়েছে মারামারিতে কিন্তু ইস্যুটা কি তা সবাই জানে না। পাগলা রশিদ ছড়ি ঘোরায় আর হাসে, হাসে আর বলে লাইগছে রে লাইগছে! এইবার লাইগছে। ফাটাইবো ফোকরারে। রইশার কথা কে হুনে! আরে ভাই অইছে কী তাই কও না ? এবার সবাই থতমত খায় ! একবার থামে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাইয়া মানুষ কাজী অইবো বাপের জন্মে হুনি নাই । অন্য পক্ষ বলে হুনছ নাই বলে হুইনবিনা এমন তো কথা নেই। দুপক্ষের ঝাঁপাঝাঁপিতে মারা যায় আশি বছর বয়স্ক মনুমিয়া। এবার চিত্র পাল্টে যায়। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে  দোষারোপ করে। পাগলা রইশা হাসে আর বলে লাশ আরো একটা পইড়বো। কারণ তোরা  মেরেছিস তোরা মেরেছিস বলতে বলতে আবার মারামারি শুরু হয়েছে। ফজর বেক্কল হয়ে মারের ফাঁকে পড়ে মাথা ফাটিয়ে বাড়িতে ফিরেছে। ময়নার সেই হাসির রেশ মুহূর্তেই উবে যায়। কে মাইরছে রে বলে দা নিয়ে বের হয়! ছুটতে ছুটতে আলমের দোকানের সামনে চলে আসে। কে মাইরছেরে ? দা দিয়ে কোপাতে শুরু করে। ময়নার এলোপাথাড়ি  দা পালানো দেখে অনেকেই সরে পড়েছে। কিন্তু ফোকরা এগিয়ে আসে। মাইয়া মাইনষের এতো দেমাক থাকা ভালো না। বেডাগো কিলাকিলিতে তোর কাম কী বলেই ময়নার হাত ধরতে যায়। ময়না কালক্ষেপণ না করেই দা চালায় । প্রথম কোপেই কুপোকাত ফোকরা।  আরেক পালা সবাই থতমত খেয়ে মারামারি রেখে যে যার মতো পালাচ্ছে। কারন খাইছেরে খাইছে মক্তবের হুজুরেরে ময়না , ফজরের বউ খুন করেছে। ফজর দৌড়ে আসে। ময়না রে , ও ময়না কী করলি! তোরে এখন পুলিশে ধইরবো। তোরে কোথায় লুকামু। পাগলা রইশা হিহি করে হাসে। ফোকরা খতম। হিল্লা এবার গেরামে কে পড়ইবো! ফজর রইশার দিকে তাকায় ,পাগলা রইশা আগেই কেমনে আন্দাজ কইরলো, ভাবছে ফজর।

২.

কিছুক্ষণের ভেতর খবর ছড়িয়ে পড়লো আলমের দোকানের সামনে দুজন খুন হয়েছে। খুনি আর কেউ নয় ফজরের বউ ময়না। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ছুটে এলো। ঘটনা পর্যালোচনা করে পুলিশ ইন্সপেক্টর বেকুব হয়ে গেলো। ঢাকা শহরের কোন নারী কাজী হতে চায় এই নিয়ে বিবাদ! ওই নারী কাজী হতে চায় তাতে কার কী? বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে আছে। ধুত্তরি ছাই! মানুষের আর কাজ নেই, অকারণেই বিবাদ করে। এই শীতে কার ইচ্ছা করে ঘর ছেড়ে বের হতে। এই মানুষের জ¦ালায় শান্তি মতো একটা সিগারেটও টানা যাবে না! এরই মাঝে ম্যাজিট্রেট এসে পৌঁছে গিয়েছে। একহাতে মোবইল ফোন অন্য হাত পকেটে। ঠেঁটে ঠোঁট এমন ভাবে লেগে আছে পারলে এ গাঁয়ের মানুষগুলোর ফাঁসির রায় এখনই লিখে দেয়।  ইন্সপেক্টর দ্রুত লাশ পোস্ট মোর্টেমের ব্যবস্থা করুন। আলম এগিয়ে আসে ,স্যার আলমের দোকানের এক কাপ চা খেয়ে যান। জীবনেও ভুলবেন না। ম্যাজিস্ট্রেট দোকানে চা খেতে পারে না।  পাবলিক প্লেসে এ ভাবে চা খাওয়া মোটেই সমীচীন নয়। তবুও দাঁড়ালো। উদ্দেশ্য হলো ঘটনার পরম্পরা জানা। ময়নার সারা দেহে রক্তের ছাপ! একবার ময়নার দিকে তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নেয়। এসব খুন খারাবী দেশ থেকে যাবে না! কে যে এ মানুষকে সৃষ্টির সেরা উপাধী দিয়েছে! আলম যেন কিছুই জানে না। চা এগিয়ে দিচ্ছে এরে ওরে সাথে মনে করিয়ে দিচ্ছে ভাই, আইজ কিন্তু চায়ের দাম বাড়তি। এক কাপ সাত টাকা। ম্যাজিট্রেটে একবার তার দিকে তাকালো, ভাবলো, সুযোগ বুঝে চায়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। দিকগে! এ দেশে যেখানে  কোন নারী কাজী হতে চায় এ নিয়ে খুন হতে পারে, যেখানে করোনা মহামারীর সুযোগ নিয়ে ডাক্তর -নার্স, ব্যবসায়ী সবাই সুয়োগ নিতে পারে সে দেশে লোক সমাগমের সুয়োগে চায়ের দাম দুটাকা বাড়িয়ে দেয়া অন্যায় কিসের! আলম ডাক দেয়, স্যার,  নেন আপনের টাকা লাগবে না। কিন্তু ম্যাজিট্রেট পুলিশ, প্রশাসনের লোকের মাথা গুণে একশ টাকার নোট ধরিয়ে দেয়। আলম লজ্জায় কাচু মাচু করে বলে দিতেই যদি হয় তাহলে সত্তর টাকা দিন। বেশি কেন নেবো? বাকী ত্রিশ টাকা ফেরত দেয়। ম্যাজিট্রেট ভাবে, তাও ভালো আত্মসম্মান বোধ আছে। এরপর ময়নাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে থানায় নিয়ে আসে।

পুরো গ্রামে থমথমে অবস্থা । কী থেকে কী হয়ে গেলো!  এ বিবাদ শুরুই করেছে ফোকরা। তিন জামাতের মৌলবী। স্থানীয় মক্তবের হুজুর। একাধারে ফতোয়া দেয়া তার কাজ। আলমের দোকানের শ্রী অনেকটা তার কারনেই বৃদ্ধি পেয়েছে। রাসেল তাকে বলে বলদা মোমিন! এ নিয়ে তার আক্ষেপের শেষ নেই। কিন্তু তার সাথে লাগতে আসে না। কারণ সে জানে আসলেই সে বলদা মোমিন! লেখাপড়া তো করেছে রাসেলই।  গেলো মাসে কাদেরের বউ নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। কাদের দিয়েছে বউ তালাক। এই তালাক আদৌ হয়েছে কি না তা বোঝার আগেই সে ফতোয়া দিয়ে শেষ যে কাদেরের জন্য এ বউ হারাম। আবার বিয়ে করতে হলে হিল্লা বিয়ে লাগবে। রাসেল সে সময় গ্রামে ছিলো না। কাদের হুজুরের পায়ে ধরে বসে আছে, হুজুর আমার পাঁচটি বাল বাচ্চা। এ নিয়ে আমি কই যামু! পোলার মা কই যাইব, কী খাইবো? ফোকরা মিটিমিটি হাসে আর বলে, হে কথা আগে মনে ছিলো না? তাইলে আগে বউরে অন্য জায়গায় বিয়ে দাও। সে তালাক দিলে তুমি পাইবা না দিলে পাইবা না। কাদেরের আত্মা খাঁচা ছাড়া হওয়ার দশা! রাতারাতি কাদেরের বউকে সে বিয়ে করে রাতদিন একাকার করে  ভোগ করেই যাচ্ছে। কাদের তার পিছে পিছে ঘুরছে, হুজুর আমার সংসার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার বউ আমারে দেন। এ নিয়ে ময়না হুজুরকে বলে ছিলো, রাসেল স্যার এলে তোমার বারোটা বাজবে। সেদিন সে ময়নাকেও হিল্লা করবে বলে ঘোষণা দেয়। পাগলা রইশ্যা সেখানে ছিলো। ময়নার পেটে সে থেকেই গরম পানি ফুটছে। ফোকরারে গ্রাম ছাড়া করা লাইগবো। এ পর্যন্ত দশ জনের বউ সে ভোগ করেছে। ভিন্ন ভিন্ন নারী তার নেশা অই গেছে। আজ ময়না ভাগে পেয়ে সে শোধ তুলে দিয়েছে।  জন্মের জন্য এ গ্রাম মুক্ত হয়েছে। ফজরের মাথায় ব্যান্ডেজ। সেও ময়নার সাথে থানায় গিয়েছে। তার  এতো সাধের ময়না! সে থানায় থাকবে আর ফজর বাড়িতে থাকবে তা কী করে হয়! ময়না যখন হ্যান্ডকাপ পরে থানায় যাচ্ছে কাদের তখন ফোকরার বাড়ির দরজায়। কাদেরকে দেখে বিবিজান বের হয়ে এসেছে। কাদের তার হাত ধরে বলে,বউ, চল বাড়িতে যাই । ফোকরা মরেছে। কাদের বউ নিয়ে দৌড়ছে আর জিজ্ঞেস করছে, ফোকরা তোরে ছুঁইছেনি? বিবিজান বলে, খালী ছুঁইছেনি? ফোকরায় পারে নাই বাঁশমুয়া তুন বাঁশ লই আইতো। একটা বদমাইস উৎ-কাইত- চিৎ  কিচ্ছু বাকী রাখে নাই। আমনে দেখেন কামড়ায় সব নীল বানাইছে। আমনে এতোদিন আইয়ের ন ক্যা? আমার মনে অইছে মরি যাই। আমার হুত ঝিরা কেমন আছে? কনে রাইনছে কনে খাওয়াইছে? আম্মাজান কেমন আছে? কাদের কথা শোনে আর দৌড়ে , দৌড়ে আর কাঁদে।

৩.
এ দিকে ময়না তদন্তে দুই লাশের রিপোর্ট বলে হার্ট এটাক করে মরেছে তারা। তবুও ময়না হলো আসামী। কারণ দায়ের কোপ সবাই দেখেছে, মরতেও দেখেছে। ময়নার জন্য লড়াই কে করবে? ফজর সে যে থানার বারান্দায় বসেছে উঠার নাম নেই। কেবল আমার ময়না মারে নাই। দায়ের কোপে কেমনে মরে এসব বলছে আর কাঁদছে। কিন্তু আইন অন্ধ। আইন তার নিজের গতিতে চলে। ময়নাকে চালান দেয়া হয়েছে। এবার মামলা কোর্টে উঠবে,   সেখান  থেকেই জামিন নিতে হবে, মামলা চালাতে হবে। তবেই না এর শেষ হবে! ফজর শক্ত হাতে হাল ধরে।  যে করেই হোক ময়নারে হাজত থেকে বের করতে হবে।

গ্রামে এখনো ঠাণ্ডা  যুদ্ধ চলছে। নারী কাজী হবে! হাই কোট সে মামলার রায় দিয়েছে যে নারী কাজী হতে পারবে না কারণ নারীর মাসিক চলে। সে সময় সে মসজিদে যেতে পারবে না। কাজেই তার কাজী হওয়া যাবে না। কিন্তু মাকসুদা ছেড়ে দেয়ার পাত্রী নয়। সে আপীল করে দিয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে কাজী নিয়োগ হবে। যোগ্যতা চেয়েছে আলেম পাস। আমি আবেদন করেছি। আমার ইন্টারভিউ হয়েছে। তাতে আমি কোয়ালিফাই করেছি। তাহলে আমাকে কেন নিয়োগ দেয়া হবে না?  মাকসুদার যুক্তি ফেলনা নয় । বাংলাদেশে মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রি আইন হয়েছে ১৯৭৪ সালে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ আইন করেছেন। কাজীর কাজ হলো কেবল বিয়ে রেজিস্ট্রি করা। যার সাথে মসজিদের মোনাজাতের কোন সম্পর্ক নেই। মোনাজাত যে কেউ করতে পারে। বিয়ের জন্য মোনাজাত শর্ত নয়। শর্ত হলো নিকাহনামা লেখা এবং কাজির বালামে সেটা রেজিস্ট্রি করা।  সে রেজিস্ট্রির জন্য মসজিদে যাওয়াও কোন শর্ত নয়। বিয়ে রেজিস্ট্রি কাজী তার ক্যাচম্যান্ট এরিয়ার যে কোন জায়গা থেকে করতে পারে।  মেয়ের বাড়ি, ছেলের বাড়ি, কাজীর অফিস, অথবা অন্য যে কোন জায়গা থেকেই কাজী বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে পারে।  মাকসুদার যুক্তি আপীল বিভাগ ফেলতে পারেনি। এবার রায় এসেছে, আলীম পাস যে কেউ কাজী হতে পারবে। জয় মাকসুদার। জয় সে গ্রামের মাকসুদার সাপোর্টারদের। অথচ মাকসুদা জানলোই না এই এক মামলার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে মারামারিতে দুজন মানুষ নিহত হয়েছে! হায়! হুজুগে বাঙালি! আপন খেয়ে পরের মোষ তাড়ালি!

ময়নার কী হবে এখন! দুইটা খুনের দায় তার মাথার উপর। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে! ব্যাপারটি এখন গুরুতর হয়ে গিয়েছে। রাতের আঁধারে নুরু এসেছে এইটুকু বলার জন্য , ফজর আলী বিরোধী দল করে তাই সরকারি দল ইচ্ছা করে নিজেরা খুন করে তার বউ এর উপর চাপিয়ে দিয়েছে। আবার দুলু এসেছে, ফজরকে বলতে হবে  সে সরকারি দল করে সুযোগ বুঝে বিরোদী দল খুন করে সরকারি দলের লোককে  ফাঁসানোর জন্য, সরকারের সুনাম নষ্ট করার জন্য তার বউকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। ফজর এখন দিশাহারা। সে কোন দলে যাবে! যে দলই সে সাপোর্ট করবে অপর দল তাকে ঘায়েল করে ফেলবে। ময়না জেলে পচবে  ফজর খুন হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকবে। তাহলে ফজর এখন কী করবে! পালিয়ে যাবে গ্রাম থেকে? সত্য কথা বলবে? ফজর সরকারি- বিরোধী কোন দলই করে না। ময়না রাগের মাথায় আঘাত করেছে। পরদিনই কোর্ট । কোর্টে নুরু এবং দুলু দুজনই উপস্থিত। ফজর কোর্টে উঠবে সাক্ষী দেয়ার জন্য। এজলাসে উঠে ফজর দেখে নুরু এবং দুলু দুজন দু কর্নারে পকেট ফাঁক করে তাকে পিস্তল দেখাচ্ছে। উল্টা পাল্টা হলে তাকে খতম করে দেবে। ফজর এক চিৎকার দিলো, ও ময়না রে, তুই কী কইরলি !  এখন আমার বেঁচে থাকা দায়! বলেই জ্ঞান হারায়। অবস্থা বেগতিক দেখে নুরু-দুলু  সরে পড়েছে। কোর্ট সেদিনের জন্য মূলতবী ঘোষণা করে।

৪.
এভাইে চেতনে অচেতনে ফজরের দিন যায়। ময়না জেলে চোখের জলে বুক ভাসায়। আবার আনন্দও পায়, রাসেল ভায়ের বলদা মোমিন হুজুরেরে খতম কইরছি, নইলে গ্রামের কোন বেডার বউ বাদ থাইকতো না। ছলে বলে বিয়ে ভাঙার দোহাই দিয়ে হিল্লার নাম করে নারীর উপর নির্যাতন কইরতো।  ময়না মাঝে মাঝে হো হো করে হাসে। জেলার ভাবলো, খুনীর নিজের যখন বোধ জাগ্রত হয় তখন অপরাধবোধ কারো কারো এতো তীব্র হয় যে সে পাগল হয়ে যায়। ময়নাও হয়তো তেমনি পাগল হয়ে গিয়েছে। তাকে পাগলা গারদে নেয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। কেবল একটা আইনি অর্ডার লাগবে। এ দিকে ফজরকে পাওয়া যাচ্ছে না  পুরো গ্রামে হইচই পড়ে গিয়েছে। ময়নার অভাবে ফজর কোথায় চলে গিয়েছে। নুরু আর দুলু এক অপরকে দোষারোপ করে রীতিমতো বন্দুক যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। গ্রামের যুবক প্রৌঢ় কোন পুরুষ বাদ নেই বিবাদে জড়ানি। কেউ নুরু কেউ দুলুর পক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

একদিন ভোর বেলা  প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে সবার ঘুম ভাঙে। কী হয়েছে ! কী হয়েছে! চারদিকে ভয় আতঙ্ক জেঁকে বসেছে। নারী -শিশু -বৃদ্ধ বৃদ্ধা -কেউ ঘর থেকে বের হবার সাহস পাচ্ছে না। এমন সময় ফজরের চিৎকার শোনা গেলো-আমি ময়নার কাছে যামু! পাগলা রইশশা কোথা থেকে বেরিয়ে এসে বলে, পইড়ছেরে পইড়ছে, এবার রুইত- কাতলা পইড়ছে।
ফোকরা গেছে
রুইত কাতলা গেছে
ময়না-ফজর এক অইছে, হিহিহি
গ্রামে এবার শান্তি আইছে।
পাগলার আওয়াজ শুনে আালম দরজা খুলে বের হয়। গতরাতে মরিয়ম নরম করে বিরানী রান্না করেছে, আলমের দেহ-মনে এক প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। স্মিতমুখে দোকানের পথে হাঁটা শুরু করে। ভোরের নরম রোদের সাথে তার মনও তুলতুলে হয়ে আছে। মরিয়ম একটা বউই বটে! দোকানে পৌঁছেই তার চোখ কপালে উঠে যায়। আইজও মাশাল্লাহ বেচাবিক্রি বালাই অইবো!  

শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ)
পিটিআই মুন্সী গঞ্জ
কবি, প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top