প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে ‘পরম্পরা কানন’ উদ্বোধন

প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে ‘পরম্পরা কানন’ উদ্বোধন

সাগর চৌধুরীঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃক দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে আজ মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরায় ৭৪টি গাছের চারা রোপনের মাধ্যমে ‘পরম্পরা কানন’ উদ্বোধন করা হয়েছে। গাছের চারাগুলো উত্তরা সেক্টর ১১ ও ১৩ এর চৌরাস্তা হতে ১২ নম্বর সেক্টরের ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার মিডিয়ানে লাগানো হয়েছে। ‘পরম্পরা কানন’ এর উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক শহরের প্রতীক হিসাবে গাছের চারাগুলো বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রোপন করেন। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, মুক্তিযোদ্ধা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এই ৭৪টি গাছের চারা রোপন করেন।

এ উপলক্ষে সোনারগাঁ জনপথ রোডের, জমজম টাওয়ার সংলগ্ন স্থানে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন দেশের জন্য, মানুষের জন্য লাল সবুজের পতাকার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি একটি পতাকা দিয়ে গেছেন, স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন। আমরা যদি তাঁকে ভালোবাসি তাহলে রাস্তা, ফুটপাতের উপর যেখানে সেখানে গাড়ি পার্ক করতাম না; ফুটপাতে নির্মাণসামগ্রী রাখতাম না; অবৈধভাবে দখল করতাম না। তিনি আরো বলেন, আমার ক্ষমতা আছে, আমার টাকা আছে, আমি রাস্তার মধ্যে ফুটপাতের মধ্যে রড সিমেন্ট রেখে দিব। আমি রাজনৈতিক দলের ছবি ব্যবহার করে এ সকল অবৈধ কাজ করবো, এগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন পছন্দ করেন না, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুও পছন্দ করতেন না। তাই আসুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিজ্ঞা করি, বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবৈধভাবে কেউ কিছু করবো না। আমাদের জনপ্রতিনিধিগণ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সাথে থাকলে দখলদাররা কিছুই করতে পারবে না। কারণ রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী আর কিছু হতে পারে না।

পরম্পরা ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি সম্পর্কে আতিকুল ইসলাম বলেন, বাঙালি জাতি-রাষ্ট্রের জন্ম ও বিকাশের ইতিহাস বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে এ জাতি-রাষ্ট্রের জন্ম। তাঁর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। শেখ হাসিনার হাতে এর উন্নয়ন ও বিকাশ। সোনার বাংলা অর্জণে আমরা অনেক কিছুতেই সফল। বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা, এই পরম্পরাই বাঙ্গালি জাতির পরম্পরা। মুক্তিযুদ্ধ থেকে উন্নয়নের পরম্পরা। আমাদের নতুন প্রজন্মকে এই পরম্পরা জানতে হবে। এ লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়োজন “পড়ি পরম্পরা, জানি নেতৃত্ব”। এই পরম্পরার মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মকে জানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ দুইটি গ্রন্থাগারের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার এবং শেখ হাসিনা সম্পর্কে প্রকাশিত বই ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডের ঘরে-ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে।

‘পরম্পরা কানন’ নিয়ে মেয়র আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ আমরা এখানে ৭৪টি গাছের চারা লাগাচ্ছি। এই চারাগুলো লাগাচ্ছেন ডিএনসিসির ৫৪ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৪তম জন্মদিনটিকে তাৎপর্যময় করে রাখতে এই ‘পরম্পরা কানন’। এতে একদিকে সবুজ ঢাকা গড়ার প্রত্যয় যেমন আছে, অন্যদিকে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’ গড়ার অঙ্গীকারও বটে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, বিশ্বের যে প্রান্তেই গিয়েছি সেখানে আমাকে মানুষ অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করে, তোমাদের নেতা শেখ হাসিনা এত দ্রুত কিভাবে দেশকে পাল্টে দিলেন? এর চাবিকাঠি কী? কীভাবে এত দ্রুত উন্নয়ন করলেন? আমি একটি কথাই বলেছি, তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, জাতির জনকের রক্ত তাঁর ধমনীতে প্রবাহিত। তিনি দেশকে ভালবাসেন, জনগণকে ভালোবাসেন, এদেশের মাটি ও মানুষকে তিনি ভালোবাসেন। তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি স্বপ্ন দেখেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। বাংলাদেশের মানুষ এজন্য তাঁকে চার বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। মন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৮১ সালে তিনি যখন এলেন, বাংলাদেশ জেগে উঠলো। মানুষ বলে শেখের বেটি এসেছে। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবেনা। তিনি বাংলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চষে বেড়িয়েছেন। যেখানে গিয়েছেন সেখানেই বঙ্গবন্ধু কন্যাকে জনগণ বুকে আঁকড়ে ধরেছে, তাঁকে এগিয়ে নিয়েছে, তাঁর সাথে থাকবেন বলে উৎসাহ দিয়েছে।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধু যখন কাজ করছেন, অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীরা দেশকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল, স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য তারা কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এ দেশ থমকে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা আজ বিশ্বনেত্রী, বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের নেত্রী। তিনি বিশ্ব মানবতার মা, বিশ্ব মানবতার নেত্রী। সারাবিশ্ব আজ তাঁর নেতৃত্বের প্রতি অবাক হয়ে আছে, বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশ তাঁর নেতৃত্বে কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা, র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যা ব) এর মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সংসদ সদস্য শবনম জাহান শিলা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top