সরল বিশ্বাস এবং দুদক চেয়ারম্যান
আদিত্য আরাফাত
‘সরকারি কর্মকর্তারা সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে অপরাধ হবে না: দুদক চেয়ারম্যান’- একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। নিউজ পড়ে আমার মনে হলো অবাক করা মন্তব্যই করেছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। এটা দায়িত্বশীল মন্তব্য হতে পারে না।
এ শিরোনামে নিউজটি ওই অনলাইন নিউজপোর্টালে প্রকাশের পর তাদের ফেসবুক পেজেও দেওয়া হয়। মুহূর্তেই এটি ছড়িয়ে যায়। সবারই এক কথা; দুদক চেয়ারম্যান তার দায়িত্ব থেকে কীভাবে এমন মন্তব্য করলেন? এমন প্রশ্ন আমারও ছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি, দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদকে তুলোধুনো করা হচ্ছে। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, দুর্নীতি দমন যার কাজ তিনি কীভাবে দুর্নীতি করতে উৎসাহ হয় এমন বক্তব্য দিলেন? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে গ্রামের চায়ের দোকান; সব জায়গায় আলোচনার বিষয়- ‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে অপরাধ না’। সর্বত্রই যখন এ নিয়ে আলোচনা তখন আমার নিজেরই কৌতুহল হলো, আসলে তিনি কী বলেছেন!
ওই সময়ের ‘আনকাট’ ভিডিও দেখলাম। ভিডিওতে দেখি, ডিসি সম্মেলন শেষ করে বের হওয়ার সময় দুদক চেয়ারম্যান সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পেনাল কোডেই বলা আছে যে, সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম কোনো অপরাধ নয়। General Exception বলে এটাকে। তবে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে সরল বিশ্বাসে আপনি এ কাজটি করেছেন’। তিনি এভাবে বললেও সেই নিউজপোর্টালটি শিরোনাম করেছে- ‘সরকারি কর্মকর্তারা সরল বিশ্বাসে দুর্নীতিতে জড়ালে অপরাধ হবে না: দুদক চেয়ারম্যান’।
দুদক চেয়ারম্যান পেনাল কোড অনুযায়ী কথা বলেছেন, তার নিজস্ব বক্তব্য ছিল না এতে। অথচ খবরটি ভুলভাবে প্রচার হলো। এখানে ‘দুর্নীতি’ শব্দটিই তার মুখে শোনা যায়নি, অথচ শিরোনামে দু্র্নীতি শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম যে নিউজপোর্টাল ভুল শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ করে, তারপরই কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল হুবহু কপি-পেস্ট করে নিউজটি প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে যায় ভুল সংবাদটি।
একপর্যায়ে প্রথম যে নিউজপোর্টাল খবরটি ভুলভাবে প্রকাশ করে, তারা নিউজের সংশোধনী দিয়ে সঠিকভাবে প্রকাশ করে। ‘সরকারি কর্মকর্তারা সরল বিশ্বাসে দুর্নীতিতে জড়ালে অপরাধ হবে না’ এমন ভুল শিরোনামে সংশোধনী এনে শিরোনাম দেয় ‘সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম প্যানাল কোডে অপরাধ না’। সংশোধিত শিরোনামের সংবাদের ভেতরেও ঠিকঠাক বক্তব্য দেওয়া হয়।
ওই নিউজপোর্টাল সংশোধন করে সংবাদ প্রকাশ করলেও তাদের কাছ থেকে যারা নিউজ কপি করেছে তারা আর সংশোধন করেনি। অর্থ্যাৎ একটি ভুল নিউজই ছড়িয়ে যায়। যে কথা দুদক চেয়ারম্যান বলেননি, সেটির দায় চাপানো হয় তার ওপর। চায়ের দোকান থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচিত হতে থাকেন দুদক চেয়ারম্যান। একটি ভুল কত তাড়াতাড়ি ভাইরাল হতে পারে তার প্রমাণ এটি।
লেখক
সাধারণ সম্পাদক, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন-র্যাক
সিনিয়র রিপোর্টার, ডিবিসি নিউজ