দুদকের সদ্যবিদায়ী কমিশনার জহুরুল হকের অনিয়ম ও দূর্নীতি!

Picsart_24-11-06_15-33-52-021.jpg

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":[],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"border":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

দুদকের সদ্যবিদায়ী কমিশনার জহুরুল হকের অনিয়ম ও দূর্নীতি!

অপরাধ প্রতিবেদকঃ দুর্নীতি করে দুদক কমিশনারের প্লট
সরকারি চাকরিজীবী কোটায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে পাঁচ কাঠা আয়তনের দুটি প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদ্যবিদায়ী কমিশনার মো. জহুরুল হক ও তার স্ত্রী মাসুমা বেগম। প্লট বরাদ্দ বিধিমালা অনুযায়ী কোনো পরিবারকে একাধিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও একটি রেখে অন্যটি রাজউকের কাছে সমর্পণ করতে হয়। অথবা রাজউকের দায়িত্ব একটি প্লটের বরাদ্দ ঠিক রেখে অন্যগুলো বাতিল করা। কিন্তু দুদক কমিশনার ও তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। দুদক কমিশনার উল্টো তাদের দুটি প্লটের আয়তনের সমান একটি ১০ কাঠার প্লট নিয়েছেন।

দেশের দুর্নীতি দমন সংস্থার শীর্ষপর্যায়ের একজন কর্মকর্তার এমন দুর্নীতির কাছে অনেকটাই অসহায় ছিলেন রাজউকের কর্মকর্তারা। তারা উপায়ন্তর না পেয়ে দুটি প্লটের আয়তনের সমান একটি প্লট দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

একজন চেয়ারম্যান ও দুজন কমিশনারের সমন্বয়ে দুদক গঠিত হয়ে থাকে।

কমিশনের মেয়াদ থাকে পাঁচ বছর। ২০২১ সালের ৩ মার্চ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হককে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি একই বছরের ১০ মার্চ দুদকে যোগ দেন। তার ২০২৫ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল। কিন্তু গত ২৯ অক্টোবর তিনিসহ পুরো কমিশন পদত্যাগ করেন। এর আগে তিনি ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর জেলা দায়রা জজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

নথিপত্রের তথ্য বলছে, দুদক কমিশনার (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় দেড় বছর ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট মো. জহুরুল হক তার নিজের নামে বরাদ্দ দেওয়া পাঁচ কাঠার প্লটের পরিবর্তে ১০ কাঠা আয়তনের প্লট দিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে রাজউক চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠিতে জহিরুল হকের পাঁচ কাঠা ও তার স্ত্রী মাছুদা বেগমের নামে থাকা পাঁচ কাঠার প্লট দুটি সমর্পণ সাপেক্ষে একটি ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বলা হয়। এরপরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এ-সংক্রান্ত নথি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রাজউকের ১৪তম বোর্ডসভায় উপস্থাপন করা হয়।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান মিঞার সভাপতিত্বে সভায় জহুরুল হককে রাজউকের পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পে ১০ কাঠা আয়তনের একটি করে প্লট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য রাজউকের পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শাখাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

রাজউকের পূর্বাচল শাখার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, রাজউকের বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুদক কমিশনার জহুরুল হককে ১৩/এ ধারায় ২৫ নম্বর সেক্টরের ২০৬ নম্বর সড়কের ১০ কাঠা আয়তনের ৪৭ নম্বর প্লটটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তিনি বাড়ি নির্মাণে নকশার অনুমোদন নিয়েছেন। তবে কততলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তা রাজউকের জোন-৪/১ অথরাউজড অফিসার বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অথরাইজড অফিসার বলেন, প্লটে ভবন নির্মাণে নকশার অনুমোদন অনেক আগেই দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি ভবনের উচ্চতা বাড়ানোর জন্য সংশোধিত নকশা অনুমোদনের জন্য রাজউকে জমা দেন। সেই নকশা ঠিক না থাকায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

রাজউকের নথিপত্র অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবী ক্যাটাগরিতে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হককে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের ১০ নম্বর সেক্টরের ৪০২ নম্বর রোডের পাঁচ কাঠা আয়তনের ১০ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে ২০২৪ সালের ৩০ জুন তার নামে প্লট রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়। এর আগে সরকারি চাকরিজীবী ক্যাটাগরিতে তার স্ত্রী মাছুদা বেগমকে একই প্রকল্পের ১০ নম্বর সেক্টরের ৪০২ নম্বর রোডের পাঁচ কাঠা আয়তনের ৯ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তার প্লটটি ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস) রুলস ১৯৬৯, অনুযায়ী রাজউকের সব প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। রাজউকের বিধিমালা অনুযায়ী, স্বামী ও স্ত্রীর নামে আলাদা আলাদা প্লট বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। কোনো প্রকল্পে স্বামী ও স্ত্রীর নামে আলাদা প্লট বরাদ্দ পেলে একটি প্লট বহাল রেখে আরেকটি সমর্পণ করতে হবে। স্বামী-স্ত্রী আলাদা প্লট বরাদ্দ নিলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু দুদক কমিশনার (তদন্ত) জহিরুল হক ও তার স্ত্রী মাছুদা বেগম আলাদা আলাদা প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। কিন্তু তারা স্বেচ্ছায় একটি প্লট সমর্পণ করেননি, রাজউক তাদের একটি প্লটের বরাদ্দ বাতিল করেনি। উল্টো মো. জহুরুল হক দুদক কমিশনার হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
রাজউকের এস্টেট শাখার একজন উপপরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস) রুলস, ১৯৬৯ অনুযায়ী রাজউকের সব প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বিধিমালা অনুযায়ী রাজউক কোনো আবাসিক প্রকল্প নিলে প্লট বরাদ্দ প্রদানের জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন আহ্বান করে।

পরে দাখিল করা আবেদন যাচাই-বাছাই করে যোগ্যদের প্লট বরাদ্দ দেয়। যদিও এই বিধিমালা একাধিকবার সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল বিধিমালা সংশোধন করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (ভূমি, প্লট, স্পেস ও ফ্ল্যাট বরাদ্দ) বিধিমালা-২০২৪ নামে গেজেট প্রকাশ হয়।

তিনি আরও বলেন, রাজউকের প্রতিটি প্রকল্পের জন্য আলাদা আলাদা প্লট বরাদ্দ নীতিমালা রয়েছে।
পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী ২০০২ সালে যখন প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়, তখন স্বামী-স্ত্রীর আবেদনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য উল্লেখ ছিল না।

এ কারণে বিপুলসংখ্যক স্বামী-স্ত্রী আবেদন করেছেন। পরে ২০০৯ সালে পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নীতিমালা পরিবর্তন আনা হয়। তখন নীতিমালার ১৩(১) ধারায় বলা হয়, বৃহত্তর ঢাকা মহানগরীর রাজউকের আওতাধীন এলাকার কোথাও পূর্বতন ডিআইটি বর্তমানে রাজউকের প্রকল্পের প্লটের জন্য আবেদনকারী স্বামী, স্ত্রী, পরিবার ও পোষ্যর নামে কোনো আবাসিক জমি, বাড়ি বরাদ্দ বা লিজ দেওয়া হলে এবং উত্তরাধিকার বা ক্রয়সূত্রে জমি, বাড়ির মালিক হলে তিনি আলোচ্য প্রকল্পে প্লট পাওয়ার যোগ্য হবেন না।

এই নীতিমালা প্রণয়নের আগে যেসব স্বামী ও স্ত্রীর নামে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রথমজনের প্লট বরাদ্দ বহাল রেখে পরের জনের প্লট সমর্পণ করতে রাজউক থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনার পর যেসব স্বামী ও স্ত্রী আলাদা আলাদা প্লট পেয়েছেন, তাদের প্লট সমর্পণ করতে ২০১০ সালের ২৬ আগস্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। পরে অনেক দম্পতি তাদের একজনের নামের প্লট বহাল রেখে আরেকজনের প্লট সমর্পণ করে টাকা ফেরত নেন। আবার রাজউক যেসব স্বামী-স্ত্রীর নামে প্লট বরাদ্দের বিষয়ে জানতে পেরেছে, তাদের একটি বহাল রেখে আরেকটি বাতিল করেছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক ও তার স্ত্রীর প্লট রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। তাদের প্লট ২০০৯ সালের বিধিমালা প্রণয়নের পর দেওয়া হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী তাদের একজনের প্লট সমর্পণ করার কথা, কিন্তু তারা তা করেননি। তাদের প্লট দেওয়ার সময় রাজউকের এমএসআই ডেটাবেস সিস্টেম ছিল না। এ কারণে রাজউক বিষয় বুঝতে পারেনি এবং প্লটের বরাদ্দ বাতিল করেনি। তবে রাজউক কোনোভাবেই তাদের দুটি প্লট বহাল বা দুটি প্লট একত্র করার ক্ষমতা রাখে না। মো. জহুরুল হক দুদক কমিশনার হওয়ায় প্রভাবশালী ছিলেন। তিনি তার প্লটের আয়তন বাড়াতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। মন্ত্রণালয়ের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক তাকে একটি ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেয়।

রাজউকের তথ্যমতে, পূর্বাচল প্রকল্পে ২০০২ সালে ১৭ হাজার এবং ২০১১ সালে আরও ৬ হাজারসহ ২৩ হাজারের বেশি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক, আধিবাসী কোটা এবং ১৩-এ ধারাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে ২৬ হাজার ২১৩টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা প্লট বুঝে নিয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৫০০ মানুষ ভবন নির্মাণ করতে রাজউক থেকে নকশার অনুমোদন নিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, জহুরুল হক তার প্লটটিতে ভবন নির্মাণের জন্য ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির মালিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক বশির আহমেদের বিরুদ্ধে প্রায় ৫১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। আর্থিক সুবিধা পেতে দুদকের মামলার আসামিকে ভবন নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়াও জহুরুল হকের বিরুদ্ধে স্ত্রী-সন্তানের যাতায়াতের জন্য দুদকের একটি গাড়ি সাড়ে ৩ বছর ধরে অনিয়মের মাধ্যমে ব্যবহার করছেন। যা রাষ্ট্রের সম্পদ তসরুপ করার অভিযোগ আছে। গাড়িচালকের নাম সাদ্দাম হোসেন। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী অবৈধভাবে গাড়ি সাড়ে ৩ বছর রাখতে পারে না। আইন ও বিধি মোতাবেক দন্ডনীয় অপরাধ করেছেন তিনি।

আরও সংবাদ পড়ুন।

দুদকের চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার পদত্যাগ করেছেন

আরও সংবাদ পড়ুন।

দুদকের আবু বকর সিদ্দিক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের রক্ষক; সহকর্মীরা ডাকতেন ‘জিনের বাদশা’

আরও সংবাদ পড়ুন।

একদিনে ৯৪ জনের পদোন্নতি দুদকে

আরও সংবাদ পড়ুন।

ডুসার নতুন সভাপতি নাজমুচ্ছায়াদাত ও সম্পাদক জাহিদ কালাম

আরও সংবাদ পড়ুন।

দুর্নীতিবাজকে সরাসরি দুর্নীতিবাজ বলতে শিখুন – দুদক কমিশনার জহুরুল হক

আরও সংবাদ পড়ুন।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স জনসচেতনতাই রুখবে দুর্নীতি – দুদক সচিব

আরও সংবাদ পড়ুন।

গৃহায়নের প্রকৌশলী মোরশেদ আলম এর ঘুষ গ্রহণ – দুদকের হাতে গ্রেফতার

আরও সংবাদ পড়ুন।

খোরশেদা ইয়াসমীন দুদকের নতুন সচিব

আরও সংবাদ পড়ুন।

মোঃ শাহরিয়াজ বিপিপিএ হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের নতুন মহাপরিচালক

আরও সংবাদ পড়ুন।

এসিআরএফ’র আত্মপ্রকাশ – আহ্বায়ক তাওহীদ সৌরভ ও সদস্য সচিব রিশাদ হুদা

আরও সংবাদ পড়ুন।

র‌্যাকের সভাপতি জেমসন ও সম্পাদক শাফি উদ্দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top