ভূয়া ডিও দিয়ে ১১টন চাল পাচার করলো – দৌলতখানের ওসিএলএসডি আলাউদ্দিন
ভোলা প্রতিনিধিঃ ভূয়া ডিও দিয়ে মৎস্য (জেলে) বিভাগের ১১টন চাল পাচার করলো, ভোলার দৌলতখানের খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ওসিএলএসডি আলাউদ্দিন।
ডিওগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, যাদের নামে ডিও তারা নিজেরাও জানেননা এ চালের খবর। অন্যদিকে ডিওগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ, সিপিসির স্বাক্ষর বিহীন। অন্যদিকে ডিওগুলেতে ওসিএলএসডির মন্তব্যের ঘরটি ফাকা রয়েছে।
তাছাড়াও দুইটি ডিওতে চাল লেখা আছে ১০টন।কিন্তু চাল আনা হয়েছে ১১টন।
সূত্রে জানাগেছে, চাল আনতে এ ডিওগুলো একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ডিওগুলো সঠিক আছে বলে দাবী করেছেন, দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পাঠান মোঃ সাইদুজ্জামান।
একটি ডিওতে সিপিসি সিরাজের স্বাক্ষর থাকলেও অন্য ডিওটিতে সিপিসি বশিরের কোন স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। তবে চালগুলো দৌলতখানের গুদাম কর্মকর্তা আলাউদ্দিনের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন বলে সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে স্বীকার করেছেন, ক্রেতা সাজাহান ডিলার।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জনাগেছে, ভোলার দৌলতখানে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আলাউদ্দিন দুইটি ভূয়া ডিও ব্যবহার করে মৎস্য (জেলে) বিভাগের ১১টন চাল পাচার করেছে। এবং চালগুলো দৌলতখান লঞ্চঘাট এলাকার সাজাহান ডিলারের ঘরে বস্তা বদলানো হচ্ছে। মানে সরকারি ৩০ কেজি বস্তা থেকে লোকাল নুরজাহান, রশিদ, হালাদারসহ বিভিন্ন বস্তায় ৫০ কেজি করে পরিবর্তন করা হচ্ছে।
এসময় সাংবাদিকরা বিষয়টি ভোলা জেলা প্রশাসককে জানালে, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেন, দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে।ওই মুহুর্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনা স্থালে পৌছে দুইটি অব্যাহত দূর্নীতি থাকা সত্যেও আমলে নেন একটি।ওই মুহুর্তে তিনি শুধু ভোক্তা অধীকার আইনে(মোড়ক)বস্তা বদল করার অপরাধে সাজাহান ডিলারক মাত্র ৫হাজার টাকা জরিমানা করেণ। যদিও এ অপরাধের দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার আইন রয়েছে।অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১১টন চাল পাচারের ডিও দুইটিকে এক অদৃশ্য ইশারায় বৈধ বলে ঘোষণা করেণ।
পটুয়াখালীর বাউফলের ছেলে, আলাউদ্দিন ২০১০সালে চাকরি নেয় খাদ্য অধিদপ্তরে। শুরু থেকে সে দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত থেকে চাল পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতি করে মোটা অংকের টাকার মালিক হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র ও গোপন ক্যামারায় ধারণকৃত ভিডিওর মাধ্যমে জানাগেছে, আলাউদ্দিন দৌলতখান উপজেলায় জেলেদেরসহ অন্যন্য সরকারি বরাদ্ধকৃত চাল চুরি ও পাচার কার্য অব্যাহত রেখেছে বীরদর্পে। প্রতিটি মৎস্য অভিযানের সময় ইউনিয়ন থেকে জেলেদের জন্য সরকারি চাল নিতে আসে চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবগন। তারা আসার আগেই আলাউদ্দিন গুদামের তালা বাহির থেকে বন্ধ করে তার পালিত ২০/২২জন শ্রমিক প্রবেশ করায় গুদামের ভিতর। এসময় আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে শ্রমিকরা ইউনিয়নের বরাদ্ধকৃত প্রতিটি বস্তা থেকে বোঙ্গা ও প্লাষ্টিকের পাইপ ব্যবহার করে দুই থেকে আড়াই কেজি চাল বের করে নেয় কৌশলে ।সূত্রে আরো জানাগেছে, এভাবে প্রতিদিন এক থেকে দেড়টন চাল সরিয়ে অন্যত্র মজুত করা হয়। এসময় তাদেরকে বাহির থেকে পাহাড়া দেয় আলাউদ্দিনের একান্ত সহযোগী খাদ্য গুদামের দারোয়ান হারুনার রশিদ । পরে এ চালগুলো কৌশলে সে দেশের বিভিন্ন যায়গায় বিক্রি করে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। অন্যদিকে আলাউদ্দিন, সরকারি চাল জাহাজ থেকে গুদামে প্রবেশ করার পর পরই ৫০ কেজির বস্তা থেকে সরিয়ে নেয় ৫/৬ কেজি করে। পরে সে শ্রমিক দিয়ে সে বস্তাগুলো সেলাই করে গুদামের মধ্যে সংরক্ষণ করে।
এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করলে সে বলে, এগুলো সরকারি ভাবেই কম আসে। অন্যদিকে আলাউদ্দিন, সরকারি নিয়মে কৃষকদেরকে ন্যায্য মূল্য দিয়ে ধান ক্রয়ের কথা থাকলেও সে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তার ইচ্ছে মতো বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুবিধা মতো ধান ক্রয় করে।এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ কৃষকরা। আরো অভিযোগ রয়েছে, মৎস্য খাতে জেলেদের জন্য চেয়ারম্যানদের কাছে যে চালগুলো প্রদান করা হয়, সেখান থেকে ফের চাল ক্রয় করে ব্যবসার উদ্দেশ্যে অন্যত্র বিক্রি করেন আলাউদ্দিন।
এতেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, সাধারণ জেলেরা। বর্তমানে সে বিভিন্ন মহলে বলে বেড়াচ্ছে, আমার হাত অনেক লম্বা। আমার সাথে বড় বড় রাজনৈতিক নেতা ও চেয়ারম্যানদের সম্পর্ক রয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের ডিজির সাথেও আমার ভালো সম্পর্ক আছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আলাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে সে অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার দাশ জানান, বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে, অনেকেই অভিযোগ করেছেন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার দাশও এই চুরির সাথে জড়িত।
আরও সংবাদ পড়ুন।
দৌলতখানের খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আলাউদ্দিনের অনিয়ম ও দূর্নীতির শেষ কোথায়?