বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার; পাকিস্তানের চেয়ে তিনগুণ বেশি

bangladesh-bank.jpg

রিজার্ভ এখন ৪০ বিলিয়ন ডলার

অর্থনৈতিক প্রতিবেকঃ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।

বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এই রিজার্ভ পাকিস্তানের তিন গুণ।

প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে দশ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

রিজার্ভের এই সুখবরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রবাসী কর্মীদের, যারা মহামারীর সঙ্কটেও প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠিয়ে চলেছেন।

তিনি বলেন, “এই মহামারীকালে ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে, এটি সম্ভব হয়েছে মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের কারণে।

“এই কঠিন সময়ে বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়ে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখায় আমি আবারও প্রবাসী ভাই-বোনদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, দেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মত ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে গত ১ সেপ্টেম্বর। সেপ্টেম্বরের শুরুতে তা আরও বেড়ে ৩৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।

৭ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-অগাস্ট মাসের ১ বিলিয়ন ডলারের মত আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৯ বিলিরয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

রেমিটেন্সের উল্লম্ফনে ২০ সেপ্টেম্বর সেই রিজার্ভ আবার ৩৯ বিলিয়ন ডলারের উপরে ওঠে। বৃহস্পতিবার তা আরও বেড়ে ৪০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের বিল পরিশোধ করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের উপরেই থাকবে।

আর অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে এবং ২০২১ সালের মধ্যে তা ৫০ বিলিয়ন ডলারের ঘর স্পর্শ করবে।

স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এসবিপি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পাকিস্তানের রিজার্ভের পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন ডলারের মত। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ পাকিস্তানের তিনগুণেরও বেশি।

তবে বাংলাদেশের মত ভারতের রিজার্ভও রেকর্ড গড়েছে। এই মহামারীর মধ্যেই ভারতের রিজার্ভ ৫০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। সেপ্টেম্বর শেষে ভারতের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন ডলার।

অর্থমন্ত্রী বলছেন, রেমিটেন্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং আমদানি ব্যয় কমার বিষয়টিও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৭১ কোটি ৩১ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।

এই তিন মাসে দেশে যে রেমিটেন্স এসেছে তা গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট রেমিটেন্সের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।

গত সেপ্টেম্বর মাসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।

এর আগে এই মহামারীর মধ্যেই গত জুলাই মাসে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।

চলতি অর্থবছর শেষে রেমিটেন্সের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।

বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটির বেশি বাংলাদেশির পাঠানো এই অর্থ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মত।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে অর্থবছরের দুই মাসের (জুলাই-অগাষ্ট) আমদানি ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই দুই মাসে পণ্য আমদানিতে ব্যয় কমেছে ১৪ শতাংশের মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top