‘সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ নামে নতুন বিধান প্রণয়ন করছে সরকার
বিশেষ প্রতিবেদকঃ জেল ও জরিমানার বিধান রেখে ‘সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ নামে নতুন বিধান প্রণয়ন করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর খসড়া অনুযায়ী সাংবাদিকের পেশাগত নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা সরকার নিশ্চিত করবে। নিবর্তনমূলক কোনো আইনে তাকে গ্রেফতার করা যাবে না।
তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের কারণে সাংবাদিককে কোনো ধরনের সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানি করা যাবে না। কেউ সহিংস আচরণ, হুমকি প্রদর্শন এবং হয়রানি করলে তার বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সাংবাদিককে সংবাদের তথ্যসূত্র প্রকাশ করতে বাধ্য করা যাবে না।
তথ্যসূত্র জানার জন্য সরকার, সরকারি কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ভয়ভীতি, শারীরিক ও মাসিক চাপ দিতে পারবে না। এসব বিষয় রেখে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় প্রণীত অধ্যাদেশের খসড়ার ওপর অংশীজনদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।
প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন সংবাদমাধ্যম, সংবাদ সংস্থা, বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত বাংলা, ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্যাটেলাইটভিত্তিক বা ইন্টারনেটভিত্তিক কোনো রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে সম্প্রচারের জন্য ব্যবহৃত স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি, লেখা, গ্রাফিক্স, মাল্টিমিডিয়া নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত সংবাদ সংস্থা এ আইনের অন্তর্ভুক্ত হবে।
নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পেশাগত কর্মে নিয়োজিত কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সহিংস ঘটনা ঘটালে, হুমকি প্রদর্শন এবং হয়রানি করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১ থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা, এক বছরের জেল বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। জরিমানার অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিককে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেওয়া হবে।
ক্ষতিপূরণের অর্থ দণ্ডিত ব্যক্তির কাছ থেকে আদায় করা হবে। তবে কোনো সাংবাদিক যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করেন এবং তা প্রমাণিত হলে সেই সাংবাদিককে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, অধ্যাদেশের খসড়াটি আমি দেখেছি। খসড়ায় যেভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেভাবে কার্যকর হলে সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষায় এ অধ্যাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে যদি নতুন কিছু সংযোজন বা বিয়োজন হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত তা কী দাঁড়াবে, সে বিষয়ে আগাম মন্তব্য করা যাবে না।
সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (পিআইও) মো. নিজামূল কবীর গণমাধ্যমে বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। যতদূর মনে পড়ে, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এ ধরনের একটি অধ্যাদেশ প্রণয়নের সুপারিশ করেছে। গণমাধ্যম কমিশন যেভাবে আধ্যাদেশের রূপরেখা দিয়েছে, ঠিক সেভাবেই খসড়া প্রস্তুত হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, আমার জানামতে, এটাই দেশের প্রথম আইন বা অধ্যাদেশ, যার মাধ্যমে সরকার সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতঃপূর্বে সাংবাদিকতার সুরক্ষায় দেশে কোনো আইন বা অধ্যাদেশ ছিল না।
খসড়ায় বলা হয়েছে, সাংবাদিকের গোপনীয়তা, ঘরবাড়ি, পরিবারসহ সব সুরক্ষিত থাকবে এবং নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব।
সাংবাদিকের ব্যক্তিস্বাধীনতা, জীবন, ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। বলপ্রয়োগ করে অবৈধভাবে সাংবাদিকের ঘরে প্রবেশ, তল্লাশি এবং সম্পদ জব্দ করা যাবে না। আদালতের আদেশ বা আইনি আদেশ ছাড়া সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, যাতে তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, পারিবারিক সুনাম, সম্মান ও সম্পত্তির হানি ঘটে।
এতে আরও বলা হয়েছে, সাংবাদিকরা যেন ভয়ভীতি, শারীরিক ও মানসিক চাপমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে অনুকূল পরিবেশে দায়িত্ব পালন করতে পারে, তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। কোনো সাংবাদিক যেন যৌন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
একজন সাংবাদিক যেভাবেই নিয়োগপ্রাপ্ত হোক, দায়িত্ব পালনকালে তিনি যেন স্বাধীনভাবে, চাপমুক্ত ও অনুকূল পরিবেশে কর্মসম্পাদন করতে পারেন, তা প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক, বিনিয়োগকারী বা ব্যবস্থাপক নিশ্চিত করবেন। ব্যত্যয় ঘটলে সংক্ষুব্ধ সাংবাদিক জাতীয় গণমাধ্যম কমিশনে লিখিত অভিযোগ করবেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে কমিশন তা নিষ্পত্তি করবে। তবে অপরাধ ফৌজদারি হলে তা এখতিয়ারসম্পন্ন প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পাঠাবেন।
অধ্যাদেশের প্রাথমিক খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো সাংবাদিক সরলবিশ্বাসে কোনো তথ্য, উপাত্ত, অডিও, ভিডিও প্রকাশ করলে কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার আশঙ্কা থাকলে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য প্রমাণ ছাড়া ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেওয়ানি কিংবা ফৌজদারি মামলা করা যাবে না।
সাংবাদিক সহিংসতার শিকার হলে, কেউ হুমকি দিলে বা হয়রানির শিকার হলে তিনি নিজে অথবা অনলাইনে প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা করতে পারবেন। আদালত সংশ্লিষ্ট জেলা বা মহানগরীর পুলিশ কর্তৃপক্ষকে মামলাটি তদন্ত করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেবেন।
যৌক্তিক কারণে প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হলে আরও ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেবেন। এক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার সাংবাদিকের শুনানি নিতেই হবে।
সাংবাদিক বলতে যিনি সার্বক্ষণিক সাংবাদিকতায় নিয়োজিত, যেমন: সম্পাদক, সম্পাদকীয় লেখক, উপসম্পাদক, নিউজ এডিটর, সহ-সম্পাদক, ভিডিও এডিটর, ফিচার লেখক, রিপোর্টার, সংবাদদাতা, খণ্ডকালীন সাংবাদিক, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, বিদেশি গণমাধ্যমের প্রদায়ক হিসাবে কর্মরত সাংবাদিক, কপি টেস্টার, কার্টুনিস্ট, সংবাদ চিত্রগ্রাহক, গ্রাফিক ডিজাইনার এবং নিবন্ধিত গণমাধ্যমের সংবাদকর্মে নিয়োজিত কর্মীকে বোঝানো হয়েছে।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস – সূচকে ১৬ ধাপ উন্নতি বাংলাদেশের
আরও সংবাদ পড়ুন।
সরকারের হস্তক্ষেপ না থাকায় গণমাধ্যম সূচকে ১৬ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ
আরও সংবাদ পড়ুন।
ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের: সভাপতি আবির ও সম্পাদক জহির
আরও সংবাদ পড়ুন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া
আরও সংবাদ পড়ুন।
ডিআরইউ’র সভাপতি মুরসালিন নোমানী সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
যে সকল সাংবাদিকদের বহিষ্কারের দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলনের
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতা দূর করার আহ্বান সম্পাদক পরিষদের
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
বাংলাদেশ মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৬৫তম; দুই ধাপ পিছিয়ে গতবারের চেয়ে