সুপ্রিম কোর্টের খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে – বিচারকদের প্রেষণে বদলি ও পদায়নে শৃঙ্খলা আসছে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশনার আলোকে সম্প্রতি চার পৃষ্ঠার এই খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরে নীতিমালাটি কার্যকরের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
সাগর চৌধুরীঃ এক বিচারক এক কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। বিচারক বা তাঁর পরিবারের সদস্য কোনো জেলায় ক্রয়সূত্রে ৩০ শতাংশ কৃষি বা ১০ শতাংশ অকৃষি জমির মালিক হলে সেখানে পদায়ন পাবেন না। নিয়োগের আগে বিচারক যদি কোনো জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন, তাহলে তাঁকে পরের ৫ বছর সেখানে বদলি করা যাবে না।
এমন সব বিধান রেখে অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রেষণ, বদলি ও পদায়নে প্রথমবারের মতো নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। প্রধান বিচারপতির নির্দেশনার আলোকে সম্প্রতি চার পৃষ্ঠার এই খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরে নীতিমালাটি কার্যকরের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
জানা গেছে, বিচার বিভাগ পৃথক্করণের দেড় যুগেও অধস্তন আদালতের বিচারক বদলি ও কর্মস্থল নির্ধারণের (পদায়ন) ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগ তথা আইন মন্ত্রণালয় প্রাধান্য পাচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিগত সরকারের আইনমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির মধ্যে প্রকাশ্যে বাহাস হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরও বদলি ও পদায়নে শৃঙ্খলা ফেরেনি। অন্তত ২০ জন বিচারকের তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের গত সাত মাসের মধ্যে একাধিকবার বদলি করা হয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে তিন দফা বদলি বা পদায়নের ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জেলা জজ) মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন বলেন, ‘বদলি ও পদায়ন নীতিমালা প্রণয়নে জুডিশিয়াল সার্ভিস সদস্যদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। প্রধান বিচারপতি গত সেপ্টেম্বরে অভিভাষণে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এটি বাস্তবায়িত হলে পদায়ন ও বদলির ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।’

দেশের ২৫তম বিচার পতি বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত রাখা ও বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে নিজের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরলেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে অন্তত ১৪২ জন বিচারক ঢাকা ও এর আশপাশের জেলায় কর্মরত ছিলেন।
বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের একটি তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়, আইন মন্ত্রণালয়ে সদ্য পদত্যাগ করা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন ১) বিকাশ কুমার সাহা বিভিন্ন পদে প্রায় ২০ বছর ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। মাঝে একবার চট্টগ্রামে বদলি হলেও বছর না ঘুরতে তিনি ফের ঢাকায় পদায়ন পান। সব মিলিয়ে তিনি প্রায় ২০ বছর আইন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন।
২০০৫ সালে তিনি আইন মন্ত্রণালয়ে প্রথম সিনিয়র সহকারী সচিব পদে যোগ দেন। একইভাবে ১৫ বছরের বেশি সময় ঢাকায় ছিলেন এমন বিচারকের সংখ্যা সাতজন। ৪৪ জন বিচারক ছিলেন, যারা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকায় কর্মরত। ৮ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ঢাকা ও এর আশপাশের জেলায় কর্মরত ছিলেন আরও ৭৩ জন বিচারক। এর বাইরে ১৭ জন বিচারক বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিভাগের বাইরে পদায়ন পান। কয়েক বছর পর তারা আবার ঢাকায় ফেরেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক প্রভাবশালী কমিশনার ও সাবেক জেলা জজ জহুরুল হকের অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে পাসপোর্ট বাতিল এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
খসড়া প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিযুক্ত বিচারক নিয়োগের বিষয়ে সংবিধানের ১১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পৃথক বিধিমালা প্রণয়ন হয়েছে। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারকের কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা প্রণীত হয়নি। এর আগে গত নভেম্বরে এ নীতিমালার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
সাধারণ মেয়াদঃ খসড়ায় বলা হয়েছে, অধস্তন আদালতের বিচারক এক কর্মস্থলে অনধিক তিন বছর দায়িত্ব পালন করবেন। চৌকি (উপজেলা পর্যায়ে) আদালতের বিচারকের পদায়নের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ দুই বছর হবে। চাকরি স্থায়ী হওয়ার আগে বিচারককে চৌকি আদালতে বদলি বা পদায়ন করা যাবে না। বিচারককে তাঁর সম্মতি ছাড়া চাকরি জীবনে একবারের অধিক চৌকি আদালতে পদায়ন করা যাবে না।
বিচারক পদায়নের অধিক্ষেত্র নির্ধারণঃ বিচারক হিসেবে প্রথম পদায়ন দেওয়ানি আদালতে হবে। পরে বিচারক যতদূর সম্ভব দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে পালাক্রমে বদলি হবেন। দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের অভিজ্ঞতা ছাড়া বিচারককে জেলা আইনগত সহায়তা কর্মকর্তা (এলএও) করা যাবে না। এলএওর কর্মকাল হিসাবের ক্ষেত্রে তিনি দেওয়ানি আদালতে নিযুক্ত আছেন বা ছিলেন বলে গণ্য হবেন।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে অপসারণ করা হয়েছে। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয় দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাকে অপসারণ করেছেন।
এক কর্মস্থলে পুনঃপুন বদলি নাঃ বিচারককে পরপর দুইবার এক কর্মস্থলে বদলি বা পদায়ন করা যাবে না। বদলি সূত্রে এক বছর পার হওয়ার আগে পদোন্নতি পেলে বিচারক ওই জেলায় শূন্য পদে পদায়ন পেতে পারেন।
সাধারণ নীতিঃ শূন্য পদ ছাড়া বিচারককে বদলি করা যাবে না। বিচারককে আদালত বা ট্রাইব্যুনালের এমন কোনো কর্মস্থল বা জেলায় বদলি করা যাবে না, যেখানে তাঁর স্বামী/স্ত্রী, বাবা, মা, শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাই, বোন আইন পেশায় নিযুক্ত আছেন।
আইনজীবী সমিতিতে ন্যূনতম দুই বছর থাকলে বিচারক নিয়োগের পরের পাঁচ বছর ওই জেলায় পদায়ন পাবেন না। বিচারক বা তাঁর স্বামী/স্ত্রী বা তাঁর সন্তান কোনো জেলায় ক্রয়সূত্রে ৩০ শতাংশের অধিক কৃষিজমি বা ১০ শতাংশের অধিক অকৃষিজমির মালিক থাকলে তিনি সেখানে পদায়ন পাবেন না। বিচারককে নিজ বা স্বামী/স্ত্রীর স্থায়ী নিবাস বা জেলায় কোনো বিচারিক পদে বদলি বা পদায়ন করা যাবে না।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
তদন্ত কার্যক্রম ও বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চলমান : চিফ প্রসিকিউটর
আরও সংবাদ পড়ুন।
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে: প্রধান বিচারপতি
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
পৃথক সচিবালয়ের খসড়া চূড়ান্ত – প্রধান বিচারপতির হাতে থাকবে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ
আরও সংবাদ পড়ুন।
বিচারপতি কাজী জিনাত হক হলেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান
আরও সংবাদ পড়ুন।
বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি : প্রধান বিচারপতি
আরও সংবাদ পড়ুন।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ: অন্তর্বর্তী সরকার আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছা দিয়ে গঠিত
আরও সংবাদ পড়ুন।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা বিষয়ে প্রস্তাব করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে, অধ্যাদেশ জারি
আরও সংবাদ পড়ুন।
‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন