শব্দযন্ত্রের যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ঠ; প্রশাসন নিরব
ঢাকা সিটিতে প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচার এখন তুঙ্গে। নিয়মনীতির ধার ধারছেন না কেউ। আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে চলছে প্রচারযজ্ঞ।
ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন শব্দযন্ত্র। স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, বাজার, মসজিদ-মন্দির ও আবাসিক এলাকাসহ সবখানেই প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং চলছে।
এমনকি যানজটে দাঁড়ানো অবস্থাতেও থামছে না মাইকের শব্দ। নির্বাচনি প্রচারে ব্যবহৃত শব্দযন্ত্রের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরবাসী। প্রতিবাদ করেও কোনও লাভ হচ্ছে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।
সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-তে মাইক্রোফোন ব্যবহার সংক্রান্ত বাধা-নিষেধে বলা হয়েছে−‘কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনও রাজনৈতিক দল, অন্য কোনও ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান একটি ওয়ার্ডে পথসভা বা নির্বাচনি প্রচারের কাজে একের অধিক মাইক্রোফোন বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনও নির্বাচনি এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা-বর্ধনকারী যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর ২টার আগে এবং রাত ৮টার পরে করা যাবে না।
কিন্তু দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১২টার পরও প্রার্থীদের প্রচারের মাইক নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে উচ্চস্বরে বাজতে থাকে। কখনও তা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। কেউ কেউ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সাউন্ড-স্পিকারও ব্যবহার করছেন।
কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
জানা গেছে, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ থেকে ৭ জন করে প্রার্থী রয়েছেন এবং প্রত্যেক কাউন্সিলর প্রার্থী কমপক্ষে দুটি করে মাইক ব্যবহার করছেন। ফলে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রার্থীদের সংখ্যার দ্বিগুণের চেয়ে বেশি শব্দ দূষণকারী মাইক বা যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।
স্কুল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এমনটি হাসপাতাল এলাকায়ও এই প্রচার চালানো হচ্ছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরসহ মোট ৭৫৮ প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।
প্রার্থীদের প্রত্যেককে দুই থেকে চারটি পর্যন্ত মাইক ব্যবহারের করতে দেখা গেছে। আর মেয়র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মাইকের সংখ্যা হিসাব করে বের করা দুরূহ কাজ।
দুই সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলামের প্রচারণায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সাউন্ড স্পিকার ব্যবহার করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি চলছে নির্বাচনি গান-বাজনাও। এমন প্রচারকে আচরণবিধির লঙ্ঘন মনে করা হলেও আচরণবিধির প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ‘কোনও ধরনের আচরণবিধি যেন লঙ্ঘন না হয়, সেদিকে আমাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নজর রাখছে। তবে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে গেছেন। একারণে জনগণের কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। আমরা বিষয়টি আরও সচেতনভাবে দেখবো। বর্তমানে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন একটি উৎসব। ভোটাররা আনন্দের সঙ্গে প্রচার করছেন। আমরা আচরণবিধি মেনেই কাজ করছি। নির্ধারিত সময়ের পরে কোথাও যাতে কোনও ধরনের প্রচার না থাকে, সেজন্য আমাদের নির্বাচনি কমিটিকে বলে দিয়েছি।’
দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচনির বিধি লঙ্ঘনে পিছিয়ে নেই বিএনপির প্রার্থীরাও। তাদের প্রচারও চলছে মাইকে। আচরণবিধিতে বেঁধে দেওয়া সময় তারাও মানছেন না, গভীর রাতেও তাদের প্রচারের মাইক দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমরা সব সময়ই আচরণবিধি মেনে প্রচার চালাচ্ছি। সরকারের দলীয় প্রার্থীরা যেভাবে বিধি লঙ্ঘন করছেন, আমরা তার ধারেকাছেও নেই। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগও করেছি। কিন্তু কোনও প্রতিকার পাইনি।’
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসার মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘এব্যাপারে নির্বাচনি ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করছেন। তারপরও কোথাও কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো। প্রয়োজনে তার প্রার্থিতা বাতিল করে দেবো।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই সিটির একাধিক সহকারী রিটার্নিং অফিসার বলেন, ‘আমাদের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নেই। তাই অভিযোগ এলেও আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ব্যবস্থা নেন না।