একাধিক মামলায় শতাধিক পুলিশ সদস্য আসামি

Picsart_24-01-14_10-58-14-300.jpg

অপরাধ প্রতিবেদকঃ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছাত্রজনতাকে হত্যার ঘটনায় পুলিশের শতাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানায় হওয়া এসব মামলার আসামির তালিকায় পুলিশের আলোচিত-সমালোচিত একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা রয়েছেন।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপির বিভিন্ন থানায় হওয়া অন্তত ৮০টি মামলায় ৬৮ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া এসব মামলায় পুলিশ সদর দপ্তর, সিআইডি, এসবিসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের আরও অন্তত অর্ধশত সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে একই মামলায় আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী দলগুলোর হেভিওয়েট নেতারা গ্রেফতার হলেও পুলিশের চিহ্নিত অপরাধীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছেন। মামলার আসামি কয়েকজন কর্মকর্তা দিনের পর দিন অফিসও করছেন না। তাদের গ্রেফতারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থাও নিতে দেখা যাচ্ছে না পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

আইনজ্ঞরা বলছেন, ক্রিমিনাল অফেন্সের জন্য মামলা হলে প্রফেশনাল প্রটেকশন নেই।

জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার গণমাধ্যমে বলেন, ‘পুলিশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় অভিযোগের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কে পুলিশ, কে সাধারণ মানুষ তার কোনো পার্থক্য করা হবে না।’

ডিএমপির নিউমার্কেট থানা এলাকায় ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ। নিহতের শ্যালক আব্দুর রহমান বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতার পাশাপাশি আসামির তালিকায় আছেন পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তারা হলেন-২০১৮ সালে অবসরে যাওয়া সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সদ্য বিদায়ি সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও সাবেক সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান।

এছাড়াও পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার ও ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন। ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, সাবেক যুগ্ম কমিশনার এসএম মেহেদী হাসান, ডিবির লালবাগ বিভাগের সাবেক ডিসি মশিউর রহমান, ডিবি মতিঝিলের সাবেক ডিসি রাজীব আল মাসুদ, ডিসি তানভীর সালেহীন ইমন, ডিসি জাহিদ তালুকদার, ডিসি মাহফুজুল আলম রাসেল, ওয়ারী জোনের এডিসি নুরুল আমিন, সবুজবাগের এডিসি গোবিন্দ চন্দ্র, এডিসি শাহিন শাহ মাহমুদ, এডিসি জুয়েল রানা, এডিসি হাসান আরাফাত, এডিসি নাজমুল ইসলাম, লালবাগ থানার সাবেক ওসি খন্দকার মো. হেলাল উদ্দিন, নিউমার্কেট থানার সাবেক ওসি আমিনুল ইসলাম, সিটিটিসির পরিদর্শক আবুল বাশার, ডিএসবির পরিদর্শক রনোজিত রায়।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার চিটাগাং রোডে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ইমন হোসেন গাজী নামের এক যুবক। এ ঘটনায় তার ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ২৮ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এই মামলাতেও পুলিশের সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাবেক সিআইডি, এসবি প্রধানসহ বেশকিছু কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে আছেন-সদ্য বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল আহসান, আনোয়ার হোসেন, কৃষ্ণপদ রায়। এছাড়া ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয় জোয়ারদার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন, সিটিটিসির সাবেক প্রধান আসাদুজ্জামান, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ডিবির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সঞ্জিব কুমার রায় ও নুরুন নবী, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার, মেহেদী হাসান, ওয়ারীর সাবেক ডিসি ইকবাল হোসেন, এডিসি এসএম শামীম, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানসহ বেশকিছু কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।

যাত্রাবাড়ী থানার উত্তর কুতুবখালী বউবাজার রোডে ১৯ জুলাই আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন লর্ড হার্ডিঞ্জ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্র মো. আরিফ (১৭)। এ ঘটনায় ২৬ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ২৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন আরিফের বাবা মো. ইউসুফ। মামলায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে বিভিন্ন থানার সাবেক ওসিদের। আসামিদের মধ্যে আছেন সাবেক একাধিক আইজিপি। এছাড়া অন্য আসামিরা হলেন, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন সরদার, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি রশিদুল হক, ডিএমপির সুপার নিউমারারি ডিসি হাফিজ আল ফারুক, ডিবি রমনা বিভাগের এডিসি ফজলে এলাহী, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি ফরমান আলী, দারুস সালাম থানার সাবেক ওসি সেলিমুজ্জামান, রূপনগর থানার সাবেক ওসি শিকদার মো. শামীম হোসেন, নিউমার্কেট থানার সাবেক ওসি আতিকুর রহমান, মুগদা থানার সাবেক ওসি প্রলয় কুমার সাহাসহ বেশকিছু কর্মকর্তাকে।

এ ধরনের বেশকিছু মামলায় পুলিশের শতাধিক কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলার এজাহার ঘেঁটে দেখা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাসখানেক আগেই ডিএমপি থেকে বদলি হয়ে জেলায় চলে যাওয়া কর্মকর্তা রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় হওয়া হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন। এছাড়া এক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনারকে (ডিসি) আরেক বিভাগে সংঘটিত হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অনেক পুলিশ কর্মকর্তার নাম ও পদবি ভুল উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অনেকের নামই মামলায় নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিকাংশ মামলার অভিযোগ ত্রুটিপূর্ণ।

জানা যায়, ২৫ জুলাই থেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার। তার অস্ত্রোপচারও হয়েছে। ১৫ আগস্ট যোগদানপত্রে প্রমাণসহ তার বিস্তারিত উল্লেখও করেছেন। অথচ ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে ইমন হোসেন গাজী নামে এক যুবক হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। ডিএমপির ডিবির সাবেক এক ডিসি ৫ জুলাই বদলি হয়ে চলে যান একটি জেলায়। তাকেও যাত্রাবাড়ী থানায় ইমন হোসেন গাজী হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।

ডিবির এডিসি ফজলে এলাহীকে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় ১৯ জুলাই মাদ্রাসার ছাত্র মো. আরিফ হত্যা মামলায় ১৪২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ফজলে এলাহী গণমাধ্যমে কাছে দাবি করেছেন, ওই দিন তিনি রমনা বিভাগের শান্তিনগর এলাকায় ডিউটিতে ছিলেন। যাত্রাবাড়ীতে তার যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেন। এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। গণহারে হওয়া এসব ত্রুটিপূর্ণ মামলার ফলে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যাবেন বলেও মনে করছেন আইনজ্ঞরা।

ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেন, অনেকে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে নিরপরাধ ব্যক্তিকেও মামলার আসামি করছেন। এমনও দেখা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে থাকাদের বিরুদ্ধেও মামলার আবেদন করা হয়েছে। আন্দোলনের পক্ষে থাকা মাদ্রাসা শিক্ষককেও আসামি করা হয়েছে। ডিএমপির প্রতিটি থানায় এমন ১০ থেকে ১২টি করে আভিযোগপত্র জমা পড়েছে। আমরা থানার ওসিদের নির্দেশ দিয়েছি যাচাই-বাছাই করে মামলা নিতে।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া গণমাধ্যমে বলেন, ক্রিমিনাল অফেন্সের (ফৌজদারি অপরাধ) গ্রেফতারে আইনি কোনো বাধা নেই। যখন ক্রিমিনাল অফেন্সের জন্য মামলা হচ্ছে তখন কোনো প্রফেশনাল প্রটেকশন নেই। পুলিশের মধ্যে যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের রাজারবাগে সংযুক্ত করে গ্রেফতার বা যেসব প্রক্রিয়া আছে সেগুলোর দিকে যাওয়া উচিত বলে মনে আমি করি। কিন্তু মামলাগুলো যাচাই-বাছাই হওয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখছি ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে অনেক পুলিশ কর্মকর্তার নাম মামলায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে।

আরও সংবাদ পড়ুন।

সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া দেশ ছেড়েছেন

আরও সংবাদ পড়ুন।

পুলিশের সাবেক(আইজিপি)বেনজীর আহমেদ পালিয়েছেন! দেশ ছাড়ার আগে কি কি বিক্রি করলেন

আরও সংবাদ পড়ুন।

পুলিশের এডিসি কামরুল ও স্ত্রীর ১১ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোকে আদালতের আদেশ

আরও সংবাদ পড়ুন।

পরীমনির সাথে অবৈধ সম্পর্ক্য-অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসর

আরও সংবাদ পড়ুন।

অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম এর সম্পদের পাহাড়! দুদকে অভিযোগ

আরও সংবাদ পড়ুন।

বরিশালের সাবেক ডিআইজি জামিলের অবৈধ সম্পত্তি অনুসন্ধানে দুদকে আবেদন

আরও সংবাদ পড়ুন।

পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ড. শামসুদ্দোহার অবৈধ সম্পদের পাহাড়

আরও সংবাদ পড়ুন।

ওসি ও তদন্ত ওসি সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা – পুলিশের হেফাজতে সাবেক দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু

আরও সংবাদ পড়ুন।

২০ লাখ টাকা ছিনতাই – জড়িত দুই পুলিশ কনস্টেবল

আরও সংবাদ পড়ুন।

বরিশাল মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হামিদুল বরখাস্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top