অপরাধ প্রতিবেদকঃ নারী নির্যাতনের মামলায় আসামী করা হয়েছে বাংলাদেশ ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তরুণ কান্তি সিকদারসহ আরও দু’জন।
অভিযোগকারী আউট সোর্সিংকর্মী শিলা রানী কর্মকার।
শিলা রানী কর্মকার গত ১১ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামি হলেন, গোপালগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মো: নবিরউদ্দিন মোল্লা। দায়েরকৃত মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ১০/৩০ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে।
এজাহারে শিলা রানী উল্লেখ করেন, তিনি ‘কৃষ্ণা সিকিউরিটি সার্ভিস লি:’র মাধ্যমে ২০১৯ সালে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ প্রধান ডাক ঘরে নিয়োগ পান। তখন তরুণকান্তি সিকদার খুলনা সার্কেলের পোস্টমাস্টার জেনারেল ছিলেন। তিনি প্রায়ই গোপালগঞ্জ প্রধান ডাকঘরে পরিদর্শনে আসতেন।
এ সময় শিলা রানীর সঙ্গে তরুণকান্তি সিকদারের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে তরুণকান্তি শিলা রাণীকে খুলনায় যেতে বলতেন। তাকে কু-প্রস্তাব দেয়াসহ বিভিন্নরকম প্রলোভন দেখাতেন। এতে কর্ণপাত করতেন না শিলা। পরে তরুণকান্তি সময়-সুযোগ পেলে শিলাকে হাতের মুঠোয় নেবেন-মর্মে হুমকি দিতেন। তরুণকান্তি সিকদার ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব পেলে একদিন গোপালগঞ্জ প্রধান ডাকঘর পরিদর্শনে আসেন। এ সময় পোস্টমাস্টার নবীর উদ্দীন মোল্লার মাধ্যমে শিলারাণীকে ডেকে পাঠান।
তরুণকান্তি তখন শিলা রানীকে বলেন, আমি মহাপরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছি। তুমি খুবই কর্মঠ এবং তোমাকে আমার ভালো লাগে। তাই আমি তোমার চাকরি স্থায়ী করে দেবো, যদি তুমি আমাকে খুশি করতে পারো। এই বলে তরুণকান্তি চেয়ার থেকে উঠে শিলারানীর পাশে বসেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরেন। তার অসদুদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য শীলা রানীর দেহের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এ সময় শিলা রাণী কোনোরকম নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে বাইরে বের হয়ে যান।
বিষয়টি নবীর উদ্দীনকে অবহিত করলে তিনি এ বিষয়ে মুখ না খোলার জন্য ভয়ভীতি দেখান। চাকরি থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনার সাক্ষী শিলা রানীর বোন তানিয়া রানী কর্মকারকেও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেয়া হয়।
এ ঘটনার পর তরুণকান্তি সিকদারের নির্দেশে নবিরউদ্দিন মোল্লা শিলা এবং তানিয়া রানী কর্মকারকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে দেন নি। বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন। চাকরি চলে যাওয়া এবং সম্ভ্রমহানির ভয়ে শিলা ও তানিয়া এ বিষয়ে চুপ থাকেন। কিন্তু দুই নম্বর আসামির মাধ্যমে তরুণকান্তি কু-প্রস্তাব অব্যাহত রাখেন।
এ প্রেক্ষিতে গত ৩ জানুয়ারি শিলা রানী গোপালগঞ্জ থানায় তরুণকান্তি ও নবিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যান। পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় তিনি ন্যায় বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত ১১ জানুয়ারি মামলা করেন। মামলার পর শিলা রানী কর্মকারের জবানবন্দীও রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে একই ইস্যু নিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে অভিযোগকারী শিলা রানী কর্মকারের সাথে যোগাযোগ করছেন গোপালগঞ্জের পোস্টম্যান সামসুল হক বলেন, আমার বস গোপালগঞ্জ ডাকঘরের পোস্টমাস্টার নবীর উদ্দীন মোল্লা সমঝোতা করার প্রস্তাব দিতে বলেন।
আমাকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলেন, সেজন্য আমি শিলা রানীর সাথে যোগাযোগ করি।
সমঝোতার বিষয়ে পোস্টম্যান সামসুল হকের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোপালগঞ্জ ডাকঘরের পোস্টমাস্টার নবীর উদ্দীন মোল্লা বলেন, না, আমি এমন কোন কথা কাউকে বলি নাই। তিনি বলেন, আমি এখানে জয়েন করি ১০/১১/২৩ তারিখে। আর শিলা রানীর এ ঘটনা ঘটেছে ২০২০ সালে। এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
মামলার সত্যতার স্বীকার করে তিনি বলেন, শীলা রানী কর্মকর্তার নামে আউট সোর্সিংয়ের একজন আমাদের এখানে কাজ করছেন। শুনলাম আমাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিজি মহোদয় যখন এই ডাকঘর পরিদর্শনে আসেন তখন অনেক মানুষের খানাদানার আয়োজন করা হয়। ওই ডিজি মহোদয়ের পরিবারও তার সঙ্গে ছিলেন।
শিলা রানী কর্মকার পটুয়াখালি সদর থানার সোয়াকাঠি গ্রামের বিমল চন্দ্র কর্মকারের মেয়ে। এদিকে মামলা এবং এজাহারে উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে ডাক মহাপরিচালক (অ:দা: ) তরুণকান্তি সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেন নি।
পরে হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস পাঠানো হয়। এসএমএস ‘সিন’ করলেও সাড়া দেন নি।
আরও সংবাদ পড়ুন।
ডিজিটাল প্রতারকদের খপ্পর থেকে রক্ষা পেতে ৩৩১টি জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করেছে সরকার
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।