লুটেপুটে খাচ্ছে কারা! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকান-ক্যান্টিনের টাকা ? নানা রকম অনিয়মের মধ্যে দিয়েই শেষ হলো উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ শেষ কার্যদিবস।
অপরাধ প্রতিবেদকঃ রাজধানীর প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রোগী ও রোগীর এটেনডেন্টদের কথা বিবেচনায় রেখে ১২টি দোকান ও ক্যান্টিনের ব্যবস্থা রাখা হয়। এর মধ্যে চালু রয়েছে ১১টি ক্যান্টিন।
বিএসএমএমইউ’র চারটি দোকান-ক্যান্টিনের ভাড়া ব্যাংকে জমা হলেও সাতটির ভাড়া জমা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, যেসব দোকান-ক্যান্টিনের ভাড়া ব্যাংকে জমা হয় না, তার ভাড়ার টাকা প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে নিজের পকেটে ভরছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ভাড়ার চুক্তি না থাকায় এসব দোকান-ক্যান্টিনের ভাড়া ব্যাংকে জমা হয় না। এছাড়া বিএসএমএমইউ’র দোকান-ক্যান্টিন টেন্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে কম ভাড়ায় পছন্দের ব্যক্তিকে লিজ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
জানা গেছে, বিএসএমএমইউ’র ৫টি দোকান-ক্যান্টিনের ভাড়া বাবদ মোট ২ লাখ ৮২ হাজার পাওয়া যায়। এর মধ্যে মেডিসিন স্টোরের সামনের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির ক্যান্টিনের মাসিক ভাড়া ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এ-ব্লকের ৫ম তলার ডক্টরস ক্যান্টিনের ভাড়া ৭০ হাজার, বি-ব্লকের নিচতলার দোকান ভাড়া ৩২ হাজার, ওপিডি-২ এর নিচ তলার দোকান ভাড়া ১০ হাজার এবং বি-ব্লকের দ্বিতীয় তলার টিচার্স লাউঞ্জের ক্যান্টিন ভাড়া ২০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ক্যান্টিনের ভাড়া ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা কর্মচারীরা নিজেরাই তাদের কল্যাণে খরচ করেন। আর বাকি চারটি ক্যান্টিন-দোকানের ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা হয়। যে চারটি দোকান-ক্যান্টিনের ভাড়া ব্যাংকে জমা হয়, সেগুলোর লাখ-লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে।
এ-ব্লকের পঞ্চম তলার ডক্টরস ক্যাফেটেরিয়ার মাসিক ভাড়া ৭০ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ লিজ কার্যকর হয়। সেই হিসেবে ওই সময় থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জনু পর্যন্ত ১৭ মাসে ভাড়া হবে ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা হলেও বাকি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়নি। এছাড়া আল-মদিনা কম্পিউটারের কাছে ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, টিচার্স লাউঞ্জের কাছে ১ লাখ ৬০ হাজার এবং কর্মচারী ক্যান্টিনের ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
লুট হচ্ছে ৭টি দোকান-ক্যান্টিনের টাকাঃ
বিএসএমএমইউ’র সবচেয়ে বড় ও জমজমাট ক্যান্টিন হচ্ছে টিএসসি। বর্তমানে এটি পরিচালনা করছেন আব্দুল কাউয়ুম খান। এই ক্যান্টিন থেকে প্রতি মাসে ১ লাখ ৫০ টাকা ভাড়া পাওয়ার কথা থাকলেও, এই ভাড়া ব্যাংক জমা হচ্ছে না। টিএসসি ক্যান্টিনের ভাড়া নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পিএস-২ ডা. রাসেল, ভিসির ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারুক ও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে অতিরিক্ত পরিচালক রসুল আমিন। এছাড়া আব্দুল কাউয়ুম খান বহির্বিভাগ-১ নিচ তলার স্নাকস কর্নার, বহির্বিভাগ-২ নিচতলার স্নাকস কর্নার ও বহির্বিভাগ-৩ (এফ-ব্লক) নিচতলার স্নাকস কর্নার পরিচালনা করেন। এই তিনটি দোকানের ভাড়া পাওয়া ব্যাংকে জমা হচ্ছে না।
এছাড়াও সি-ব্লকের ১১তলার ক্যাটারিং পরিচালনা করেন মিনারুল ইসলাম। এ দোকানের ভাড়া ব্যাংকে জমা হচ্ছে না। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিচ তলার দি এন্ড সি ক্যান্টিন পরিচালনা করেন রাবাহ আল কায়েস শুভ। এটি ভাড়াও ব্যাংকে জমা হচ্ছে না। এসব দোকান ও ক্যান্টিনের ভাড়া তারা তিনজন ভাগবাটোয়ারা করে খাচ্ছেন।
বিএসএমএমইউর সাতটি দোকান-ক্যান্টিনের ভাড়া ব্যাংকে জমা হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (হিসাব ও অর্থ) গৌর কুমার মিত্র বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির ভাড়ার টাকা আমাদের দেওয়া হয় না। ডক্টর ক্যাফেরেটরিয়া, বি-ব্লকের নিচতলার দোকান ও দোতলার টিচার্স লাউঞ্জের ভাড়া আমরা পাই। এর বাইরে যেসব দোকান রয়েছে সেগুলো আমাদের জানা নেই। এ বিষয়টি প্রক্টর অফিস ভালো বলতে পারবে।
লিজ প্রদানের অনিয়ম-দুর্নীতিঃ
বিএসএমএমইউর ক্যান্টিন ও দোকান লিজ প্রদানের ক্ষেত্রেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে। পছন্দের লোককে লিজ দিতে সর্বোচ্চ দরদাতাকে বিভিন্ন অজুহাতে নন-রেসপন্সিভ দেখানো হয়েছে। দরপত্রের তথ্য বলছে, টেন্ডারে ডক্টরস ক্যাফেরেটিয়া সর্বনিম্ন দরদাতাকে দেওয়া হয়েছে। এটির লিজ প্রদানে ২০২১ সালে টেন্ডার আহ্বান করা হলে ২২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র ক্রয় করে এবং ১৪টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম সালেকের নেতৃত্বাধীন টেন্ডার কমিটি ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর দরপত্র ওপেন করেন। কমিটি সর্বোচ্চ ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা দরদাতা অ্যাবলুম ক্যাফেটেরিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা দরদাতা আল-মদিনা কনফেকশনারী এন্ড ফুড প্রডাক্টকে লিজ না দিয়ে শৈবাল সোর্সিং এন্ড ক্যাটারিংকে ৭০ হাজার টাকায় লিজ লেওয়া হয়।
এরপর ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি শৈবাল সোর্সিং এন্ড ক্যাটারিংকে ডক্টরস ক্যাফেরেটিয়া পরিচালনার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। টেন্ডার কমিটি সর্বোচ্চ দরদাতা অ্যাবলুম ক্যাফেটেরিয়াকে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স না থাকা ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে আল-মদিনা কনফেকশনারীকে আয়করের কাগজপত্র না দেয়ার অভিযোগে বাতিল করা হয়।
ডক্টরস হল ডাইনিং কনফেকশনারী
এ ব্লকের ৭তলায় ১২০ ফুট আয়তনের ডক্টরস হল ডাইনিং কনফেকশনারী লিজ প্রদানে ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডারে মিরপুর কাফরুলের মেসার্স আল মদিনা কনফেকশনারী এন্ড ফুড প্রডাক্টস, লালবাগ আজিমপুরের আগামী ক্যাটারিং সার্ভিস, উত্তর কালশীর মমো স্টেশন এবং শেওড়াপাড়ার এএস ক্যাফেটেরিয়া অংশ নেয়। সর্বোচ্চ ২০ হাজার ১২৫ টাকা দরদাতা মেসার্স আল মদিনা কনফেকশনারী এন্ড ফুড প্রডাক্টসকে লিজ না দিয়ে ১০ হাজার টাকায় মমো স্টেশনকে লিজ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা আয়কর সনদ না দেওয়ার অভিযোগে তাকে লিজ দেওয়া হয়নি বলে জানায় টেন্ডার কমিটি।
ফটোকপি ও ষ্টেশনারী দোকানঃ
লিজ প্রদানে কমিটির ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বরের দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকের নিচতলার ফটোকপি ও ষ্টেশনারী দোকান লিজের দরপত্র বিক্রির শেষ দিন ছিল ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর। ওইদিন পর্যন্ত ৯টি দরপত্র বিক্রি হয়। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান শেওড়াপাড়ার আল মদিনা ট্রেডিং করপোরেশন ৪১ হাজার ১৯৫ টাকা ও একই এলাকার এম এইস ফটোকপি এন্ড স্টেশনারী ৩১ হাজার ১৭৫ এবং মতিঝিলের আলমদিনা কম্পিউটার ৩২ হাজার দরদাতা হিসেবে টেন্ডার দাখিল করেন। টেন্ডার কমিটি সর্বোচ্চ দরদাতা আল মদিনা ট্রেডিং করপোরেশনকে আয়কর সনদ না দেওয়ার অজুহাতে নন-রেসপনসিভ দেখিয়ে ৩২ হাজার টাকা দরদাতা আলমদিনা কম্পিউটারকে লিজ দেয়।
আরও সংবাদ পড়ুন।
শিক্ষা-সেবা-গবেষণায় প্রাধান্য দেবে বিএসএমএমইউ – উপাচার্য ডা. দীন মো. নূরুল হক
আরও সংবাদ পড়ুন।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ
আরও সংবাদ পড়ুন।
চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণায় বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ দেবে সরকার – প্রধানমন্ত্রী
আরও সংবাদ পড়ুন।
মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না – হাইকোর্ট