ভোলায় মানুষের দূর্ভোগ আর কষ্টের শেষ নেই! ৩ জন সাবরেজিস্টার দিয়ে চলছে ৯টি অফিস

Picsart_23-11-03_13-55-10-448-scaled.jpg

ভোলায় মানুষের দূর্ভোগ আর কষ্টের শেষ নেই! ৩ জন সাবরেজিস্টার দিয়ে চলছে জেলার ৯টি সাব-রেজিস্টার অফিস। স্থানীয়দের অভিযোগ; রেজিস্ট্রার আনিসুর রহমান হাতিয়ে নিচ্ছেন,সাধারণ জনগনের কষ্টআর্জীত টাকা। অর্থের ভাগ পেয়ে চুপ থাকেন উর্ধতনরাও।

সাগর চৌধুরীঃ ভোলা জেলার সাধারণ মানুষের সেবার পরিবর্তে দূর্ভোগ আর কষ্টের করুন কাহিনি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। নিবন্ধন করতে আসা সাধারন মানুষগুলোকে জিম্মি করছেন। ভোলা জেলার ৯টি সাবরেজিস্টার অফিসে দলিল নিবন্ধন করতে আসা মানুষের কষ্টের সিড়ি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকার পরও দলিল নিবন্ধন করতে পারছে না সাধারণ মানুষ। অর্থনীতির চাকা বা সরকারের রেভিনিউ আদায়ে নিবন্ধন অধিদপ্তর এগিয়ে থাকলেও ভোলা জেলা রেজিস্ট্রার আনিসুর রহমানের দায়িত্ব আবহেলা ও দায়িত্ব হিন উদাসিতায় সরকার হারাচ্ছে কাঙ্খিত সাফল্য, জনগন পড়েছে মহাবিপদে। ওদিকে জেলা রেজিস্ট্রারের দাবী পুরন করতে পকেট কাটছে সাধারণ মানুষের।

ভোলায় ৯টি সাবরেজিস্টার অফিসঃ ভোলা জেলায় ৭টি উপজেলার ৯টি সাব-রেজিস্টারের পদ থাকলেও বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন, মাত্র ৩ জন সাবরেজিস্টার। একের পর এক সাবরেজিস্টার বদলি হলেও জেলা রেজিস্ট্রার আনিসুর রহমানের প্রশাসনিক ব্যর্থতা, সাধারণ জনগনের কথা না ভেবে নিজে লাভবান হবার জন্য পদগুলোর বিপরীতে নতুন সাবরেজিস্টার না চাওয়া, সাধারন জনগণের টাকা হাতিয়ে নিতে নতুন নতুন ফরমুলা ব্যবহার করা নিত্যনৈমন্ত্রিক বিষয় হয় দাঁড়িয়েছে তার।


ভোলা সদর সাবরেজিস্টারঃ ভোলা সদর সাবরেজিস্টারের দায়িত্ব পালন করছেন, সাবরেজিস্টার ইউনুস। নিবন্ধন অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। প্রতিটি দলিলে তিনি সরকার নির্ধারিত ফ্রি’র কয়েক গুন বেশি টাকা নেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রাকাশ হলেও তিনি থাকেন ধরা ছোয়ার বাহিরে। অবশ্য বেশি টাকা না দিলে তিনি দলিলে সাইন করেন না। ঘটনা এমন যে, মাসের পর মাস ঘুরেও তার চাহিদা মত টাকা না দিলে তিনি নিবন্ধন করেন না। কিন্তু ভোলা সদরের একাধিক নিবন্ধন দাতা ও গৃহীতা সদর সাবরেজিস্টারের বিরুদ্ধে জেলা রেজিস্ট্রারকে জানালেও তিনি আইনগতভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেন নি। বরং অতিরিক্ত টাকা দিয়েই জমি নিবন্ধন করতে বলেন।

এদিকে সাবরেজিস্টার ইউনুস অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে দৌলতখান সাবরেজিস্টার অফিসের দায়িত্ব পালন করেন। যদিও অল্প কয়েকদিন আগেও তিনি শুধু মাত্র সদর সাবরেজিস্টার অফিসের দায়িত্ব পালন করছেন। বুধ ও বৃহস্পতিবার তিনি অতিরিক্ত দৌলতখান বা রাধাবল্লভ সাবরেজিস্টার অফিসের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ভোলা সদর সাবরেজিস্টার অফিসে প্রতি সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার নিবন্ধন বন্ধ থাকে। অপরদিকে দৌলতখান বা রাধাবল্লভ সাবরেজিস্টার অফিসের নিবন্ধন বন্ধ থাকে রবি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত। দুই উপজেলার সাধারন মানুষ নিবন্ধন করা থেকে বঞ্চিত থাকলেও মাস শেষে সরকারের কোষাগার থেকে জনগণের করের টাকা থেকে বেতন ভাতা তুলতে কোন বাঁধা নেই। সেবা না দিয়েও তারা বেতন ভাতা নিচ্ছেন। অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে কাঙ্খিত রাজস্ব। এই দুই উপজেলার নিবন্ধন করতে আসা মানুষ পড়েছে বিপাকে।

বোরহানউদ্দিন সাবরেজিস্টারঃ ভোলা জেলার সবচেয়ে ছোট ও গ্যাস সমৃদ্ধ উপজেলা বোরহানউদ্দিন। এই উপজেলার সাবরেজিস্টার মামুন শিকদার তিনটি সাবরেজিস্টার অফিসের দায়িত্ব পালন করছেন। বোরহানউদ্দিন সাবরেজিস্টার অফিস ছাড়াও তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে চরফ্যাশন ও দক্ষিণ আইচা সাবরেজিস্টার অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন।

ভোলা থেকে চরফ্যাশন যাওয়ার রাস্তা ভাঙ্গা, সেই ভাঙ্গা চোরা রাস্তা পাড়ি দিয়ে চরফ্যাশন ও দক্ষিণ আইচায় দায়িত্ব পালন করেন,সপ্তাহে তিনটি অফিস প্রধানের গুরুদায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তা কতটুকু সেবা জনগণকে দিতে পারেন? প্রশ্ন নিবন্ধন করতে আসা সাধারণ জনগনের!

যদি একজন সাবরেজিস্টার তিনটি অফিসের দায়িত্ব পালন করতেই পারেন,তাহলে আর কেন প্রতিটি সাব-রেজিস্টার অফিসে একজন সাব-রেজিস্টার পদ রেখে সাদা হাতি পোষা? অন্যদেরও একই সুযোগ দেওয়া উচিৎ। কারণ, রাষ্ট্রের কাছে তার সকল কর্মকর্তাই সমান।

তজুমদ্দিন সাবরেজিস্টারঃ নিবন্ধন অধিদপ্তরের চৌকস কর্মকর্তা নূর ইসলাম দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন তজুমদ্দিন সাবরেজিস্টার হিসাবে। কিন্তু দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করলেও তাকে বদলি করা হচ্ছে না। আরও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে তিনি মনপুরা সাবরেজিস্টার ও লালমোহন সাবরেজিস্টার অফিসে কাজ করছেন। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা,এই উপজেলা যেতে মেঘনা পাড়ি দিতে হয়। একজন মানুষ সপ্তাহে তিনটি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কতটা কাবু হতে হয়, তা কি জেলা রেজিস্ট্রার বা উর্ধতন কর্মকর্তারা জানেন না?

চাপিয়ে দেওয়া বা অতিরিক্ত দায়িত্ব কখনই জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনে না! এই কথাটিও কি উর্ধতন কর্মকর্তারা জানেন না? জানবেনই বা কেমন করে, অর্থ পেলে কাঠের মূর্তীও হা করে।

ভোলা জেলার জেলা রেজিস্ট্রার আনিসুর রহমানের কাছে বিষয়গুলো জানতে,এই প্রতিবেদক বৃহস্পতিবার তার অফিসে (ভোলা জেলা রেজিস্ট্রার অফিস) গিয়েও তাকে পাওয়া যায় নি। তার মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ফোন কল রিসিভ করেন নি।

ভোলা জেলার সাধারণ জনগনের সেবার পরিবর্তে দূভোর্গ বাড়িয়ে দিয়েছেন, ভোলার জেলা রেজিস্ট্রার আনিসুর রহমান। নিজের পকেট ভারী করতে অধস্থন কর্মকর্তাদের উপর অমানবিক জুলুম করছেন। একাধিক কর্মকর্তাকে বাধ্য করছেন একাধিক উপজেলায় দায়িত্ব দিয়ে।

জনগণের দাবী, জেলার প্রতিটি উপজেলায় সাব রেজিস্টার নিয়োগ দিয়ে নিবন্ধন করতে আসা মানুষের কষ্ট লাগব করবে এবং সরকারের রাজস্ব আহরন সুবিধা জনক করবে৷

স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা রেজিস্ট্রার আনিসুর রহমানের মুখে দাড়ি আর আল্লাহ রাসুলের নাম থাকলেও তিনি গোপনেও প্রকাশ্যে অনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করেন। যা আইনগতভাবে দন্ডনীয় অপরাধ।

আরও সংবাদ পড়ুন।

চার সাব-রেজিস্ট্রার ও কর পরিদর্শকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আরও সংবাদ পড়ুন।

ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আরও সংবাদ পড়ুন।

রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার – ঘুস দুর্নীতিতে সাবরেজিস্ট্রাররা বেপরোয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top