২৩ বছর আগের সেই পোড়া খুঁটি;সেই স্মৃতি… রফিকুল ইসলাম
২০০১ সালের ১৩ অক্টোবর। তখন আমি গঙ্গাপুর ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও গঙ্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমাদের বাড়ি। ঘরে আমার বৃদ্ধ মা-বাবা। বিএনপিসহ চার দলীয় জোটের এমপি হাফিজ ইব্রাহিমের নির্দেশে তার ক্যাডাররা পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় আমাদের ঐ বসতঘরে। বাড়িতে আমরা কেউ নেই। ঘরের চারপাশে আগুন জ্বলছে। ভিতর থেকে মা-বাবার আত্নচিৎকার । মহান আল্লাহপাকের অসীম রহমতে প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় তাঁরা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাবার হাত থেকে রক্ষা পায়।
পুড়ে ছাই হয়ে গেলো হাজারো স্মৃতি বিজড়িত বসতঘর। ঘরে যা কিছু ছিলো সব লুট করে নিয়ে যাওয়া হলো। আমাদের প্রিয়জন ভোলা-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আলী আজম মুকুল ও আমার বিরুদ্ধে তৎকালীন সংসদ সদস্য জনাব হাফিজ ইব্রহিম স্বয়ং বাদী হয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে দ্রুত বিচার আদালতে প্রেরণ করে টানা পাঁচ বছর এলাকা ছাড়া করলেন।যাযাবর পালাতক জীবন। কোথায় আমার বাবা-মা,কোথায় স্ত্রী-সন্তান! এভাবে পুড়িয়ে,কুপিয়ে ভিটেমাটি শূন্য করা হয় অসংখ্য আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের। পাঁচ বছর বোরহানউদ্দিন বাজারে উঠতে পারেনি কেউ। আশপাশে দিয়ে গেলেও পিটানোর বিনিময়ে গম,চাল দেয়া হত।
আমার শিক্ষক বাবা পাকের ঘর সংস্কার করে ঐখানে থাকা শুরু করলেন। বছর দুই পর ঐখানে যা কিছু ছিলো সব লুট করে নিয়ে যায় হাফিজ ইব্রাহিমের ক্যাডাররা। একথা প্রায় সবাই জানেন,ঐ ক্যাডারদের ঐ কাজের জন্য চাউল/গমের বরাদ্দ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
ক্যাডারদের ভয়ে স্কুলে যাবার পথে রিক্সাওয়ালারা পর্যন্ত আমার বাবাকে নিতেন না। এ ছিল এক অসহ্য যন্ত্রণা। অবাক ব্যাপার চার দলীয় জোটের সহিংসতার শরিকরা এ জনপদে এখন ভোট চায়!
এখন যারা তরুণ প্রজন্মের তাঁরা এসব কিছুই দেখেননি। জানেনও না। তবে সেই সময়ের ইতিহাস মুরুব্বিদের কাছ থেকে জানা দরকার।
বর্তমানে আমি বোরহানউদ্দিন পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রতিশোধ,প্রতিহিংসা পরায়ন হলে অনেককিছু করা যেত। না। আ’লীগ সহাবস্থান ও সহমর্মিতার রাজনীতি করে। আমরা এ আদর্শ ধারণ করি বলেই আগুন সন্ত্রাসের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদের নাম পরিচয় জানা সত্ত্বেও কিছুই বলিনি। মহান আল্লাহ্পাকের দরবারে বলেছি, “এদের হেদায়েত দাও মাবুদ।”
প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক কর্মকান্ড দ্বারা প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করা রাজনৈতিক নীতি হওয়া উচিৎ।
রফিকুল ইসলাম
সাবেক চেয়ারম্যান গংগাপুর ইউনিয়ন।
মেয়র বোরহানউদ্দিন পৌরসভা।
সাধারণ সম্পাদক,বোরহানউদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগ।