আমার বিরুদ্ধে ৯৮টা মামলা আছে – মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিবেদকঃ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হামলার বর্ণনা দিতে দিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা প্রতিদিন প্রায় সবাই মামলার হাজিরা দিতে আদালতে যাই। আমি ক্ষুদ্র মানুষ। আমার বিরুদ্ধেও ৯৮টা মামলা আছে। আর দুটো মামলা বাকি আছে সেঞ্চুরি করতে।
আজ বৃহস্পতিবার লেক শোর হেটেলে একথা বলেন তিনি।
‘কারেন্ট স্টেট অব জুডিশিয়ারি: এ টুল টু অপরেস অপজিশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনে এবং মসনদ টিকিয়ে রাখতে সরকার আদালতকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, আপনি যদি ঢাকার নিম্ন আদালতে যান, দেখবেন গিজগিজ করছে মানুষ, সব মানুষ বিএনপির। আমাদের রাজনৈতিক কর্মী, একজনও বাদ নেই। সকালে তারা মামলার হাজিরার কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসতে পারেন না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শুধু এটুকু বলতে চাই, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই। বিচার ব্যবস্থা যেটা আছে সেটাও পুরোপুরি তাদের (সরকার) হাতে মূল নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
‘এটার কারণ আছে? কারণটা হচ্ছে, তারা (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলছি, আমরা যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলছি সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তো আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না, শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না। এজন্য করেন না, ১৯৭৫ সালে তারাই কিন্তু একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।’
দেশে বর্তমানে একদলীয় শাসন চলছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কেউ কথা বলতে পারে না। আজকে যখন পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের মতো কথা বলেন, যখন জজ সাহেবেরা শপথবদ্ধ রাজনীতির কথা বলেন তখন আমরা সাধারণ মানুষেরা কোথায় যাব? কার কাছে যাব? আজকে বিচার ব্যবস্থা যদি দলীয়করণ হয়ে যায় পুরোপুরিভাবে, মানুষ কোথায় যাবে?’
‘সেজন্যই সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা প্রয়োজন আজকে যে, এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই দাঁড়াতে হবে। শুধু বিচার ব্যবস্থা নয়, আজকে যে রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, সেই রাষ্ট্র কাঠামোটা ভেঙে দিতে হবে। ভেঙে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো নির্মাণ করতে হবে।’
এজন্য বিচার ব্যবস্থার সমস্যার সমাধানে জুডিশিয়াল কমিশন গঠনসহ ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনার কথাও উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।
আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, সবাইকে জোটবদ্ধ হতে হবে। প্রত্যেককে আজ সোচ্চার হয়ে বলতে হবে, ইটস এনাফ, যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট ক্ষতি করেছ। এখন তুমি দয়া করে পত্রপাঠ বিদায় হও, জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার তৈরি করো।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, যতই চেষ্টা করুক, উলট-পালট বহু খাচ্ছে। বহু চেষ্টা করছে সব দিক দিয়ে কিন্তু কোনো লাভ হবে না। মানুষ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত হচ্ছে তারা এই সরকারকে আর দেখতে চায় না। আইনজীবীদের কাছে অনুরোধ থাকবে… আপনাদের উদ্যোগকে (জোটবদ্ধ) সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে সব আইনজীবীদের নিয়ে এসে এই সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, জনগণ আপনাদের সঙ্গে আছে। ইনশাল্লাহ আমরা জয়ী হবই।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের কনভেনর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন খান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বক্তব্য রাখেন।
এই সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, ইসমাইল জবিউল্লাহ, এসএকে কামরুজ্জামান, জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, আবদুর রশিদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান বাদল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মীর হেলাল উদ্দিন, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি – উদ্বিগ্ন মেডিকেল বোর্ড
আরও সংবাদ পড়ুন।
আমরা জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন নই, রাষ্ট্র নিয়ে উদ্বিগ্ন – ছাত্রদল সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান
আরও সংবাদ পড়ুন।