জমি-ফ্ল্যাট নিবন্ধনে কমছে কর; জুলাই ও আগস্ট মাসে ২০-৩০ শতাংশ রাজস্ব কম আদায়

Picsart_23-01-11_22-59-43-225-scaled.jpg

জমি-ফ্ল্যাট নিবন্ধনে কমছে কর; আগের চেয়ে ২০-৩০ শতাংশ রাজস্ব কম আদায়

সাগর চৌধুরীঃ সারাদেশে এই অর্থবছরের বাজেটে জমি–ফ্ল্যাট নিবন্ধনে কর বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার পর, এ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ ২০-৩০ শতাংশ কমেছে বলে সরকারের নিতিনির্ধারকেরা জানিয়েছেন। ফলে উল্টো পথে হেঁটে সরকারকে এখন কর কমানোর চিন্তা করছে বলে জানা যায়। 

জুলাই ও আগস্ট মাসে কর আদায় কমেছে ২০-৩০ শতাংশঃ চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে জমি–ফ্ল্যাট নিবন্ধনে কর দ্বিগুণ করার পাশাপাশি জমির ক্রয়-বিক্রয়ের মূল্যের পার্থক্যের ওপর ১৫ বা তার বেশি শতাংশ হারে গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। এরপর থেকে জমি এবং ফ্ল্যাট মালিকরা স্থাবর সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন।

রাজস্ব আহরন কারী প্রতিষ্ঠান এনবিআর বলছে, যার ফলে জুলাই ও আগস্ট মাসে কর আদায় কমেছে ২০-৩০ শতাংশ।

রাজধানীর ১৭ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ৩২ কোটি টাকা রাজস্বঃ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেন, উচ্চ কর আরোপের পর জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের বাস্তব চিত্রের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সাধারণত যারা জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয় করেন তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মালিক বা ডেভলপারদের কাছ থেকে মালিকানা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রেজিষ্ট্রেশন আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। আমরা এসব বিষয় বিবেচনায় নিচ্ছি।

তিনি বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের জুলাই মাসে ঢাকার ১৭ সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে মাত্র ৩২ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ হয়। যেখানে একই সময়ে গত বছর এসেছিল ১০১ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে এ বছরের জুলাইয়ে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৬৯ কোটি টাকা কম কর আদায় হয়েছে। আগস্ট মাসেও একই ধারা অব্যাহত ছিল। 

তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থ বছরে এই খাত থেকে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। অর্থাৎ এই খাত থেকে রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে আছি। তাই এনবিআর করের মাত্রা সহনশীল করতে চায়। সেক্ষেত্রে গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হতে পারে। তবে নিবন্ধনে উৎসে কর নতুন নিয়ম অনুযায়ী থাকবে।  

সাব-রেজিস্ট্রার অফিসগুলো কর বৃদ্ধিঃ অন্যদিকে আরও জানা যায়, সম্প্রতি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসগুলো কর বৃদ্ধির পাশাপাশি এনবিআর-নির্ধারিত এলাকাভিত্তিক কর আদায়ে জটিলতার কারণে রাজস্ব আদায় হ্রাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এনবিআরে চিঠি পাঠিয়েছে। এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকার করের হার নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সমাধানের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। 

ভূমি জরিপ রেকর্ডে সায়েদাবাদ ও গুলশান নাম নেইঃসাব-রেজিস্ট্রার অফিসগুলো বলছে— কিছু এলাকায় বিভিন্ন হারে কর নির্ধারণ বিষয়টি ভূমি জরিপ রেকর্ডে অনুপস্থিত রয়েছে। যেমন: ভূমি জরিপ রেকর্ডে সায়েদাবাদ ও গুলশানের মতো কোনো এলাকা নেই, কারণ সেগুলো ডোঙ্গারা ও রানাভোলা মৌজার আওতাধীন। সাব-রেজিস্ট্রাররা তাদের রেকর্ডে এমন নাম না থাকার কারণে এলাকাগুলো থেকে সঠিক পরিমাণে কর আদায় করতে সক্ষম হচ্ছেন না। এ ছাড়াও, আয়কর বিভাগের নির্দেশনায় বাণিজ্যিক এবং আবাসিক এলাকার করের হার ভিন্ন, কিন্তু মৌজা হিসাবে এলাকাগুলো সংজ্ঞায়িত করতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসগুলো। এসব সমস্যা সমাধানে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ডেমরা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি এলাকার সাব-রেজিস্ট্রারদের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছে এনবিআরের আয়কর শাখা। ওই বৈঠকেও সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

জমি ক্রয় এবং বিক্রয় এখন কালো টাকা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান উৎসঃ একই সঙ্গে জমি ক্রয় এবং বিক্রয় এখন কালো টাকা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান উৎস, কারণ ক্রেতা বা বিক্রেতা কেউই তাদের ক্রয় নথিতে জমির প্রকৃত মূল্য দেখান না। এসব বিষয় কিভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস।

এফবিসিসিআই ও রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ দাবী এ ছাড়া দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (রিহ্যাব) সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো বাজেট ঘোষণা পর থেকেই রেজিষ্ট্রেশন কর কমানোর দাবি জানিয়ে আসছে।

সম্পত্তি নিবন্ধন কর দ্বিগুণঃ আয়কর আইন ২০২৩-এর আওতায় ‘উৎসে কর বিধিমালা’ অনুসারে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ দেশের সকল এলাকার সম্পত্তি নিবন্ধন কর দ্বিগুণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের যে কোনো এলাকায় স্থাবর সম্পত্তি বা জমি ও ফ্ল্যাট হস্তান্তর হোক না কেন মালিকানা অর্জন করতে দ্বিগুণ কর  গুনতে হবে। অর্থাৎ যে এলাকায় রেজিষ্ট্রেশনে ১, ৩ ও ৪ শতাংশ কর ছিল তা বৃদ্ধি করে ২, ৬ ও ৮ শতাংশ করা হয়েছে। 

নিবন্ধন কর হিসেবে সবচেয়ে বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে রাজধানীর গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থ সাউথ রোড, মতিঝিল সম্প্রসারিত এলাকা ও মহাখালী এলাকার স্থাবর সম্পত্তির মালিকদের। কেননা এসব এলাকায় সম্পত্তি কিনলে ক্রেতাকে জমি, ফ্ল্যাট বা যে কোনো স্থাপনা নিবন্ধনের জন্য কাঠা প্রতি ৮ শতাংশ বা ২০ লাখ টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ সেটা গুনতে হবে। যা সম্পত্তি কর হিসেবে সর্বোচ্চ।

এছাড়াও পাঁচ বছরে মধ্যে জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয় করে বিক্রি করলে উৎসে কর ও মূলধন কর মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২৬৫ শতাংশ হতে পারে। আর পাঁচ বছরে আগের ক্রয়কৃত জমি বা ফ্ল্যাটে উৎসে করের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ গেইন কর দিতে হবে। এই গেইন কর কমানোর চিন্তা করছে সরকার। 

সঞ্চয়পত্রে কর ফিরল আগের নিয়মেঃআয়কর বিধিমালার ‘সম্পত্তি হস্তান্তর হতে কর আদায় শীর্ষক’ ৬ নং ধারা অনুসারে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি নিবন্ধন কর ৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।

এছাড়া গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের বাইরের এলাকা ও জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা এলাকায় ওই কর ৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশের যে কোনো পৌরসভার আওতাধীন সম্পত্তি কর ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ এবং বাকি এলাকাগুলোতে ১ শতাংশ থেকে কর বৃদ্ধি করে ২ শতাংশ করা হয়েছে।

এই বছরের ১৮ জুন জাতীয় সংসদে ‘আয়কর বিল-২০২৩’ পাস হয়। গত ৩ জুলাই আয়কর আইন ২০২৩ এর আওতায় উৎসে কর নতুন বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করে এনবিআর।

আরও সংবাদ পড়ুন।

জমি ক্রয়-বিক্রয় অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শুরু আগামী বছর থেকে

আরও সংবাদ পড়ুন।

সম্পত্তি নিবন্ধন কর দ্বিগুণ করা হয়েছে

আরও সংবাদ পড়ুন।

রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার – ঘুস দুর্নীতিতে সাবরেজিস্ট্রাররা বেপরোয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top