সরকারকে সহযোগিতা করি – শাহানা সিরাজী

Picsart_23-03-02_20-31-59-315.jpg

সরকারকে সহযোগিতা করি – শাহানা সিরাজী

দেশ রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের নয়, সরকার দেশ পরিচালনা করে। পরিচালনায় ত্রুটি থাকতে পারে কিন্তু দেশের যারা মালিক তাদের ত্রুটি মেনে নেয়া যায় না! কারবণ দেশ জনগণের,জনগণ দেশ রক্ষা করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে দায়িত্ব যথারীতি পালন করেছেন। তাঁর ভাবনাই ছিলো দেশ,দেশের জনগণ। তাই সব সময় আন্দোলন, মিছিল,মিটিং করেছেন, জেল খেটেছেন। তাঁর “আমার দেখা নয়াচীন” বইটিতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছে আপনি কী করেন? তারপর তিনি লিখলেন,আমি কী বলবো? কী করি বলবো? আমি বক্তৃতা করে বেড়াই,মিছিল করি,আর জেল খাটি। এরপর স্বগোতক্তি আমিও একটা মানুষ আবার!

এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় পূর্ববাংলার মানুষের মৌলিক অধিকারের লড়াই তিনি করেছেন, ৬৯/৭১ সৃষ্টি হয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে।

তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ের অন্ধকারবাসের মাধ্যমে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে সে দেশের মানুষের ভেতর দেশ প্রেম নেই!

মানুষ কেন নিজেই সচেতন হয় না?

ডেঙ্গু কিংবা কোভিড, যক্ষ্মা কিংবা বসন্ত যাই বলি না কেন সর্বত্রই ডাক্তারকে কেন দোষ দিই? এর জন্য প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী সরকার এবং জনগণ। আইন করা এবং আইনের প্রয়োগ করার জন্য দায়ী সরকার। নোংরা থাকার জন্য দায়ী জনগণ নিজেই!

এই ঢাকা শহরে কেন ডেঙ্গুর এতো প্রাদুর্ভাব? কেন অসময়ে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সন্তানেরা। অফিসে, আদালতে, বাসায়,দোকানে,শপিং মলে সর্বত্রই সবাই অপরিচ্ছন্ন। শুধু নিজের বিছানা এবং শরীর ফরাসী সৌরভে ডুবিয়ে রাখলেই মানুষ পরিষ্কার হয় না, গৃহিণীরা তো সংসারের কাজই করে না! বুয়া নির্ভর পরিচ্ছন্নতা সঠিক ভাবে হয় না। হাই কমোড, ফ্রিজ, এসি,বারান্দায় টব, দেয়ালে জন্মানো গাছ,ড্রেনে পড়ে থাকা পলিথিন, বিস্কুট, চিপ্সের প্যাকেট এসব পরিষ্কার রাখা কার দায়িত্ব?

আরও লেখা পড়ুন।

আদম ১১ – শাহানা সিরাজী

রাস্তাঘাটে যখন চলি একটা মানুষের ভেতর দেখি না সচেতনতাবোধ। বের হলে যেন মানুষের খাবারের ধুম পড়ে! স্ট্রিট ফুড থেকে শেরাটন সব জায়গায় কেবল খাদক আর খাদক!

খেয়ে রাস্তাতেই উচ্ছিষ্ট ফেলছে। প্লাস্টিকের প্যাকেট, বোতল, ফলের খোসা কী নেই! খোদ ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট দেখে মনে হয় এ দেশ একটি অসভ্য দেশ। শিক্ষার আলো এখানে নেই। চলুন দু একটা উদাহরণ দিই-
১. লঞ্চে সদরঘাট যাবো,লঞ্চের জন্য ঘাটে অপেক্ষা করছি। লঞ্চ কূলে ভেড়ার সময় দেখলাম,পানির বোতল,কলার খোসা,চিপ্সের প্যাকেটের বৃষ্টি হচ্ছে! নদীর পানি আবর্জনায় সয়লাভ!

২.রমনায় গিয়েছি অক্সিজেনের আশায়। দেখি
লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে মানুষ পানির বোতল, বাদামের খোসা, চিপ্সের প্যাকেট ফেলে লেকের চেহারাই পালটে দিয়েছে! আমি প্রতিবাদ করায় তেড়ে আসলো,লেক আমার বাপের? বললাম, জনগণের বাপের! এখানে বসার অধিকার সবার আছে নোংরা করার অধিকার কারো নেই! সে কী অবস্থা!

৩.ট্রেনে টাঙ্গাইল যাচ্ছি, প্রত্যেক যাত্রী খাবার খাচ্ছে, উচ্ছিষ্ট জানলা দিয়ে বাইরে ফেলছে নইলে ট্রেনের গায়েই ফেলছে।

৪.বাসে রোজ যাতায়াত করি। পানি খেয়ে বোতল রাস্তায় ফেলছে। বাদামের খোসা বাসেই ফেলছে। রাস্তায় হাঁটছে, সুন্দর পোশাক গায়ে কিন্তু সারাক্ষণ ওয়াক থুঃ করছে! পান খেয়ে পিক ফেলছে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে শি দিচ্ছে! এসব তো শিক্ষার ব্যাপার,বিবেকের ব্যাপার। বিবেক যখন নেই তখন সরকারকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।সব জায়গায় সাদা পুলিশ রাখতে হবে। বিজ্ঞাপন দিতে হবে। ইউটিউবে বিজ্ঞাপন ছাড়তে হবে।

তা না হলে এ দেশ পলিথিনে ডুবে যাবে!

৫. ইউটিউবে কী নেই! তাই স্ত্রীর ডেলিভারি করাতে গিয়েছে স্বামী! বাপ রে কী ভালোবাসা!

সন্তান জন্ম দেয়া মানে একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতি, একটা মা নতুন করে জীবন লাভ করে। স্বামী ভেবেছে, কোথ দিলেই বাচ্চা পড়ে যাবে। এতো সহজ কাজ,ডাক্তার, হাসপাতাল লাগবে কেন? ফলে বাচ্চা এবং স্ত্রী দুটোকেই হারালো! কী ভাই বাচ্চা প্রসব করানোকে আপনি আলুর ভর্তা ভেবেছেন? তাও তো পারবেন না আপনি। একটা অদক্ষ পুরুষ সমাজ! কেবল পাকোয়াজবাজি! পানি ঢেলে খাওয়ার যোগ্যতা নেই গিয়েছে বাচ্চা লতসব করাতে! স্ত্রী সন্তানকে এমনই ভালোবাসেন যে ইউটিউব দেখেই সারিয়ে দিলেন চিরকালের জন্য!

ইউটিউব দেখে দেশকে কী ভাবে পরিচ্ছন্ন রাখা যায় তা শিখুন,ডেঙ্গু প্রতিরোধ করুন!

সিটি কর্পোরেশনকে প্রতি বছর ট্যাক্স দিয়ে থাকি। সেই ট্যাক্সের টাকার সঠিক হিসাব চাই, কেন এ শহর এতো নোরাং জানতে চাই, চলুন সবাই মিলে ঘুম তাড়াই, দেশ বাঁচাই। সরকারকে সহযোগিতা করি….

শাহানা সিরাজী
কবি, প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।

আরও লেখা পড়ুন।

বঙ্গবন্ধু – শাহানা সিরাজী

আরও লেখা পড়ুন।

ন্যাপ্রোসিন – শাহানা সিরাজী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top