সরকারের বরাদ্দ – প্রতিমন্ত্রীর পিও’র স্ত্রী ও শ্যালিকার নামে
অপরাধ প্রতিবেদকঃ সচ্ছল মানুষকে দুস্থ, অসুস্থ সাজিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া নির্যাতিত, দুস্থ মহিলা এবং শিশুকল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এই অপকর্মের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো. আজিবর রহমান জড়িত। প্রতিমন্ত্রীর পিও’র সরকারি চাকরি করা স্ত্রী এবং শ্যালিকার নামে অনুদান নিয়েছেন একাধিকবার।
এ ছাড়া তারা নিজেদের আত্মীয়স্বজন এবং নিজ উপজেলার মানুষের নামে বরাদ্দ নিয়ে ফিফটি ফিফটি কমিশন নিচ্ছেন। অথচ প্রকৃত অসহায় দরিদ্র মানুষের আবেদনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনুদান দেওয়া হয় না। অসহায়, দরিদ্র, স্বামী নির্যাতিত, সহায়-সম্বলহীন দীনহীন নারী এবং অভিভাবকহীন শিশুরা এ অর্থ পাওয়ার কথা।
জানতে চাইলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারক গণমাধ্যমে বলেন, আজিবরের নামে আমিও কিছু একটা শুনেছি। অনিয়ম করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ওয়াহেদুজ্জামান এনডিসি বলেন, আমরা বিষয়টি আমলে নেব। দোষী হলে ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই।
জানা গেছে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্যাতিত নারী প্রতিরোধ সেলের ৫ কোটি টাকার একটি স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রয়েছে। বছরে এফডিআর থেকে লাভ আসে প্রায় ৪২ লাখ টাকা। মন্ত্রণালয়ের থোক বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪০ লাখ টাকা। এফডিআরের লাভ এবং থোক বরাদ্দের অর্থসহ প্রায় ৮২ লাখ টাকা নির্যাতিত, দুস্থ মহিলা ও শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। নির্ধারিত ফরমে এই ফান্ডের টাকার জন্য মন্ত্রী বরাবর আবেদন করতে হয়। প্রতিটি আবেদনে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার, ১৫ হাজার, ১০ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। অসুস্থ, নির্যাতিত, দুস্থ মহিলা ও শিশুরা এ টাকার জন্য আবেদন করলে প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়।
সূত্র জানায়, নির্যাতিত, দুস্থ মহিলা ও শিশু কল্যাণ ফান্ড ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রতিমন্ত্রীর পিও’র স্ত্রী শাহানারা খাতুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অফিস সহকারী। তিনি প্রতিবছর দুস্থ মহিলা হিসাবে অনুদানের অর্থ নিচ্ছেন। ১৮ জুন জারি করা বরাদ্দে শাহানারা খাতুনকে ২৫ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়। এখানেই শেষ না, ৬ জুন জারি করা প্রতিমন্ত্রীর স্বেচ্ছাধীন তহবিল থেকে পিও’র স্ত্রী শাহানারা খাতুনকে ৩৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। ১৮ জুন জারি করা জিওতে পিও’র শ্যালিকা সাবিনা খাতুনকে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তারা প্রতিবছর এ ফান্ডের অনুদান নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
আজিবরের নিজ জেলা পাবনার চাটমোহরে উপজেলার দীপ্তি গমেজ নামে এক ব্যক্তিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা দেখিয়ে ২৫ হাজার এবং পাবনার চাটমোহরের বাসিন্দা দেখিয়ে আরও ২৫ হাজার টাকাসহ ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ গত অর্থবছর তাকে দুই বারে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
১৮ জুন অনুদানের অর্থ বরাদ্দের জিও ঘেঁটে দেখা গেছে একই ব্যক্তিকে দুবার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জিওর ১৯ নম্বর ক্রমিকের রহিমা বেগম ১৫ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন। আবার ৩৫ নম্বর ক্রমিকে রহিমা বেগমের নামে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
আজিবরের নিজ এলাকা পাবনার উপজেলা চাটমোহরে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান পেয়েছেন ১১ জন এবং ৫ হাজার করে অনুদান পেয়েছেন ২০ জন।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে একই উপজেলায় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। তারধ্যে ২৫ হাজার টাকার অনুদান পেয়েছেন ৪ জন, ১৫ হাজার টাকার অনুদান পেয়েছেন ৪ জন, ১০ হাজার টাকার অনুদান পেয়েছেন ১৪ জন এবং ৫ হাজার টাকার অনুদান পেয়েছেন ৪ জন।
প্রতিমন্ত্রীর পিও’র স্ত্রীর নিজ উপজেলা সুজানগরে ২০২১-২২ অর্থবছরে অনুদান দিয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তারমধ্যে ১০ হাজার করে অনুদান পেয়েছেন ১১ জন। ৫ হাজার করে অনুদান পেয়েছেন ১১ জন। একই উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে ২৫ হাজার টাকার অনুদান পেয়েছেন ১ জন, ১০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন ১ জন এবং ৫ হাজার টাকা করে অনুদান পেয়েছেন ৩ জন।
এসব অনিয়মের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর পিও আজিবর বলেন, কেউ ইচ্ছে করলে নির্যাতিত ও দুস্থ নারী এবং শিশু কল্যাণ তহবিলের অনুদান নিতে পারেন না। এটা বরাদ্দ দেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি যাকে ইচ্ছে তাকে দেবেন।
আপনার স্ত্রীকে বারবার অনুদান কেন দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে আজিবর বলেন, এটা প্রতিমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করুন। আপনার গ্রামের বাড়ি পাবনার লোকরা প্রতিবছর অনুদান পাচ্ছেন বিষয়টি কি সত্য-এমন প্রশ্নের জবাবে আজিবর বলেন, পাওয়ার যোগ্য হলে পাবেন। এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠার কি আছে। তিনি আরও বলেন, অনিয়ম করলে তদন্ত হবে সমস্যা কি।
আরও সংবাদ পড়ুন।